বিশ্বের সকল মুসলমানদের সুখ-সমৃদ্ধি, গোনাহমুক্তি বিশেষ করে ইহুদি দখলদার নিয়ন্ত্রিত মসজিদুল আকসা ও নির্যাতিত গাজাবাসীর জন্য দোয়ার মধ্য দিয়ে শেষ হলো- খানকায়ে মাদানিয়ার উদ্যোগে আয়োজিত তিন দিনব্যাপী ৭ম বার্ষিক ইসলাহি ও তালিমি জোড়। খানকাটি ময়মনসিংহ জেলার গফরগাঁও উপজেলার দিঘীরপাড়ে (হালিমাবাদ) অবস্থিত।
রোববার (২৬ নভেম্বর) ফজরের নামাজের পর খানকার মোতাওয়াল্লি মুফতি আনোয়ার মাহমুদের ইসলাহি বয়ানের পর ইশরাক নামাজ শেষে আখেরি মোনাজাত অনুষ্ঠিতি হয়। এর আগে বুধবার (২৩ নভেম্বর) দিবাগত রাতে খানকার মোতাওয়াল্লি ফেদায়ে মিল্লাত সাইয়্যিদ আসআদ মাদানি (রহ.)-এর খলিফা মুফতি আনোয়ার মাহমুদের সভাপতিত্বে ও মুফতি বায়জিদ মাহমুদের সঞ্চালনায় খানকায়ে মাদানিয়া প্রাঙ্গণে শুরু হয় ৩ দিনের ইসলাহি জোড়ের কার্যক্রম।
দোয়ার আগে সমাপনী নসিহতে মুফতি আনোয়ার মাহমুদ বলেন, ‘মুসলমানরা আজ ফেৎনায় জর্জরিত। ঈমান ধ্বংসের জন্য সব ধরণের প্রস্তুতি সম্পন্ন করে বিধর্মীরা উৎ পেতে বসে আছে। এই ফেৎনা থেকে বেঁচে দ্বীনের ওপর অটল থাকার জন্য রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অসিয়ত করে গেছেন যে, তোমরা তাকওয়ার ওপর থাক; দ্বীনের ওপর থাক! এ ছাড়া আর কোনো রাস্তা নেই। দ্বীনের পথ একটাই, সেটা তাকওয়ার পথ। তাকওয়াই হলো- মানুষের মূল সম্পদ। তাকওয়ার প্রথম অর্থ, ঈমান আনা (কুফর-শিরক থেকে বাঁচা), দ্বিতীয়ত সমস্ত কবিরা গোনাহ থেকে বেঁচে থাকা। তৃতীয়ত, অন্তরকে একমাত্র আল্লাহর সঙ্গে সম্পৃক্ত করে রাখা। সবসময় অন্তরে আল্লাহর উপস্থিতি উপলব্ধি করা। এটার জন্যই সুলুকের এই বিভিন্ন স্তরের জিকির। শরিয়তের ওপর আমল, ছয় তাসবিহের জিকির, বারো তাসবিহের জিকির, ইসমে জাতের জিকির, পাসআনফাসের জিকির, কলবের জিকির, মোরাকাবার জিকির ও মোশাহাদার জিকির। এই আমলগুলোর মাধ্যমে আস্তে আস্তে বান্দা আল্লাহ পর্যন্ত পৌঁছায়। অন্তরের মধ্যে এই হালত অর্জনের জন্য সালেকের মেহনত করতে হয়। এই মেহনতের নামই হলো- সুলুক ও তাসাউফ।
মুফতি আনোয়ার মাহমুদ আরও বলেন, ‘এখানে তিন দিন যে ব্যবস্থাপনায় (নেজাম) চলেছি- এ অবস্থায় সারাবছর চলার জন্য চেষ্টা করি। সর্বাবস্থায় আল্লাহকে ভয় করি। আল্লাহকে মহব্বত করি। আল্লাহর জন্য সব করি। দুনিয়ায় মন না লাগিয়ে পরকালের দিকে আমাদের মনোযোগ হওয়া উচিত।’
তিন দিনের জোড়ে জামাতবদ্ধভাবে অংশ নেন দেশের বিভিন্ন স্থানের অসংখ্য সালেকিন। এ ছাড়া স্থানীয় মানুষদের আগমনে জোড় হয়ে ওঠে প্রাণবন্ত। ৩ দিনের কর্মসূচিতে তাহাজ্জুদের পর ১২ তাসবিহ জিকিরের আমলের মাধ্যমে দৈনন্দিন কার্যক্রম শুরু হয়। প্রত্যেক নামাজের পর মাসনুন সুরা পাঠসহ বাদ ফজর ও বাদ মাগরিব শায়খের নিজস্ব তত্বাবধানে ছয় তাসবিহর জিকিরের আমল এবং সময়ে সময়ে তিনি চার তরিকার ওপর সালেকিনদের বায়াত নেন। মহতি এই আয়োজনে নামাজ, কোরআন তেলাওয়াতের মশক, জিকির ও তাসবিহ-তাহলিলের প্রশিক্ষণসহ প্রয়োজনীয় বিভিন্ন বিষয়ে তালিম দেওয়া হয়।
জোড় উপলক্ষে খানকায়ে মাদানিয়ার তত্ত্বাবধানে প্রকাশিত হয় মুফতি আনোয়ার মাহমুদ অনূদিত ও সংকলিত ‘মালফুজাতে হজরত মাদানি।’ একজন সালেকের জন্য তরিকতের পথে চলতে গিয়ে যে সমস্যাগুলো আসে, সেগুলোর প্রেক্ষিতে শায়খের নির্দেশনা কী, এ সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা রয়েছে বইটিতে। বইয়ে সংকলিত হয়েছে উপমহাদেশের বিখ্যাত বুজুর্গ, শায়খুল আরব ওয়াল আজম, সাইয়্যিদ হোসাইন আহমাদ মাদানি (রহ.)- এর মালফুজাত।
জোড়ে মুফতি হাফিজুদ্দীন, জামিয়া হোসাইনিয়া দুগাছিয়ার মুহতামিম মাওলানা মাহমুদুল হাসান সালমানি, শায়খে ইমামবাড়ি আব্দুল মুমিন (রহ.)-এর খলিফা মুফতি মাহবুবুল্লাহ, মুফতি ইকবাল মাহমুদ, খানকায়ে মুহিব্বিয়া মাদানিয়ার মুতাওয়াল্লি মুফতি মোহাম্মদ আলী, দারুল হুদা মহিউস সুন্নাহ পুখুরিয়ার মুহতামিম মুফতি হেমায়েতুল ইসলাম, জামিয়া এমদাদিয়া কিশোরগঞ্জের মুহাদ্দিস মাওলানা মাজহারুল ইসলাম, জামিয়া হোসাইনিয়া ইসলামিয়া আরজাবাদের সিনিয়র মুহাদ্দিস মাওলানা নেয়ামতুল্লাহ ও মারকাযু ফয়জিল কুরআন আল ইসলামির মুহাদ্দিস মুফতি ইউসুফ জামিলসহ দেশ বরেণ্য আলেমরা ইসলাহি নসিহত পেশ করেন।