সৃষ্টিকর্তা দয়াময় আল্লাহর দয়ার কি সীমা-পরিসীমা আছে! বান্দাকে ক্ষমা করার জন্য সদা প্রসারিত থাকে তার ক্ষমার হাত। প্রয়োজন শুধু সুযোগটাকে কাজে লাগানো এবং তার কাছে মাফ চাওয়া। বান্দা ইস্তেগফার করলে তিনি মাফ করেন। এটাই স্বাভাবিক নিয়ম, কিন্তু তিনি এমন মহা ক্ষমাকারী যে, বান্দা মাফ না চাইলেও তিনি ক্ষমা করেন। বান্দাকে ক্ষমা করার জন্য বাহানা তালাশ করেন।
তেমনই একটি ‘বাহানা’ হলো- জিকিরের মজলিস। জিকিরের মজলিসে যে উপস্থিত হয়, শুধু মজলিসে উপস্থিতির ভিত্তিতে আল্লাহ ক্ষমা করেন- হোক তার এই মজলিসের উপস্থিতি ভিন্ন কোনো উদ্দেশ্যে। তারপরও আল্লাহতায়ালা তাকে ক্ষমা করবেন- কেবল এই মজলিসের শরিক হওয়ার কারণে।
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘আল্লাহর পক্ষ থেকে একদল ফেরেশতা নিয়োজিত রয়েছে, যারা ঘুরে ঘুরে জিকিরকারীদের তালাশ (খুঁজতে থাকে) করে। যখন কিছু মানুষকে আল্লাহর জিকিরে মশগুল দেখে তারা একে অপরকে আহ্বান করে- এসো, তোমাদের লক্ষ্যের দিকে এসো। (তোমরা যা খুঁজছ তা মিলে গেছে।) নবীজী (সা.) বলেন, এরপর তারা নিজেদের ডানা দ্বারা মজলিসটিকে ঘিরে নেয়। এভাবে নিকটবর্তী আসমান পর্যন্ত পৌঁছে যায়।
নবীজী (সা.) বলেন, তখন তাদের রব তাদেরকে জিজ্ঞাসা করেন, (অথচ তিনি তাদের চেয়ে অধিক জ্ঞাত) আমার বান্দাগণ কী বলছে? ফেরেশতারা বলে, তারা আপনার পবিত্রতা বর্ণনা করছে, আপনার বড়ত্ব ঘোষণা করছে, আপনার প্রশংসা করছে এবং আপনার মর্যাদা ঘোষণা করছে। নবীজী (সা.) বলেন, তখন আল্লাহতায়ালা বলেন, তারা কি আমাকে দেখেছে? উত্তরে ফেরেশতারা বলে, না; আল্লাহর কসম, তারা আপনাকে দেখেনি।
নবীজী (সা.) বলেন, অতঃপর আল্লাহতায়ালা বলেন, যদি তারা আমাকে দেখত তাহলে তাদের কী অবস্থা হত? ফেরেশতারা বলে, যদি তারা আপনাকে দেখত তাহলে আরও একনিষ্ঠভাবে আপনার ইবাদত-বন্দেগি করত, অপনার মর্যাদা ঘোষণায় এবং আপনার প্রশংসা প্রকাশে আরও সক্রিয় হত এবং আরও অধিক পরিমাণে আপনার তাসবিহ পাঠ করত!
নবীজী (সা.) বলেন, তখন মহান আল্লাহ বলেন, তারা আমার নিকট কী চায়? ফেরেশতারা বলে, তারা আপনার নিকট জান্নাত চায়! আল্লাহ বলেন, তারা কি জান্নাত দেখেছে? ফেরেশতারা বলে, না, হে রব! তারা জান্নাত দেখেনি। তখন আল্লাহ বলেন, যদি তারা জান্নাত দেখত তাহলে কী করত? ফেরেশতারা বলেন, যদি তারা জান্নাত দেখত তাহলে তার প্রতি আরও লালায়িত হত, তার অন্বেষণে আরও মনোযোগী হত এবং তা লাভের জন্য আরও ব্যাকুল হত।
নবীজী (সা.) বলেন, আল্লাহ বলেন, তারা কী থেকে পানাহ চাচ্ছে? ফেলেশতারা বলে, জাহান্নাম থেকে। আল্লাহতায়ালা বলেন, তারা কি জাহান্নাম দেখেছে? ফেরেশতারা বলে, না, আল্লাহর কসম হে রব! তারা জাহান্নাম দেখেনি। তখন আল্লাহ বলেন, যদি তারা জাহান্নাম দেখত তাহলে কী করত? ফেরেশতারা বলে, যদি তারা জাহান্নাম দেখত তাহলে আরও বেশি ভয় করত এবং তা থেকে বাঁচতে আরও অধিক চেষ্টা করত।
নবীজী (সা.) বলেন, তখন আল্লাহতায়ালা বলেন, তোমাদের সাক্ষী রাখছি, আমি তাদেরকে ক্ষমা করে দিলাম।
নবীজী (সা.) বলেন, তখন একজন ফেরেশতা বলে ওঠে, তাদের মধ্যে তো অমুক রয়েছে; যে তাদের দলের নয়, সে অন্য কাজে এসেছে (সহিহ মুসলিমের বর্ণনায় রয়েছে, তাদের মাঝে তো এক পাপী রয়েছে), একথা শুনে আল্লাহতায়ালা বলেন, তারা এমন জামাত, (এটি এমন মজলিস, যার) যাদের কোনো অংশগ্রহণকারীই মাহরূম (বঞ্চিত) হয় না। -সহিহ বোখারি : ৬৪০৮; সহিহ মুসলিম : ২৬৮৯