ইসলামি শরিয়তে নির্ধারিত একটি নামাজের নাম বিতর। এই নামাজ এশার পর থেকে সুবহে সাদেক পর্যন্ত সময়ের মধ্যে আদায় করা যায়। সামান্য কিছু ভিন্নতা ছাড়া অন্য নামাজের মতো এ নামাজ আদায় করতে হয়। ওয়াজিব এই নামাজের গুরুত্ব ও ফজিলত তুলে ধরা হলো।
রাকাত সংখ্যা
বিতর নামাজ সম্পর্কে একাধিক হাদিস রয়েছে। তিন রাকাতের বর্ণনা প্রসিদ্ধ ও শক্তিশালী। হজরত আবু সালামা ইবনে আবদুর রহমান (রহ.) উম্মুল মুমিনীন হজরত আয়েশা (রা.) কে জিজ্ঞাসা করেন, রমজানুল মোবারকে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর নামাজ কেমন ছিল? তিনি বলেন, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) রমজান ও রমজানের বাইরে ১১ রাকাতের বেশি পড়তেন না। প্রথমে চার রাকাত পড়তেন। এর সৌন্দর্য ও দীর্ঘতা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করো না। এরপর আরো চার রাকাত পড়তেন। এর সৌন্দর্য ও দীর্ঘতা সম্পর্কে প্রশ্ন করো না। এরপর তিন রাকাত (বিতর) পড়তেন। -সহিহ বোখারি : ১১৪৭
হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) তিন রাকাত বিতরে তিনটি সুরা পাঠ করতেন। হজরত উবাই ইবনে কাব (রা.) বলেন, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) তিন রাকাত বিতর নামাজে প্রথম রাকাতে সুরা আলা, দ্বিতীয় রাকাতে সুরা কাফিরুন ও তৃতীয় রাকাতে সুরা ইখলাস পড়তেন এবং রুকুর পূর্বে দোয়া কুনুত পড়তেন। -সুনানে নাসায়ি : ১৬৯৯
গুরুত্ব
বিতর নামাজের গুরুত্ব অনেক। মুকিম ও মুসাফির সবার ওপর বিতর আবশ্যক। হজরত ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) সফরে ফরজ নামাজ ব্যতীত তার সওয়ারিতে (বাহন) থেকে ইশারায় রাতের নামাজ আদায় করতেন। সওয়ারি যেদিকে ফিরুক না কেন! তিনি বাহনের ওপরই বিতর নামাজ আদায় করতেন। -সহিহ বোখারি : ৯৪৬
হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) সাধারণত রাতের শেষ প্রহরে তাহাজ্জুদের পর বিতর আদায় করতেন। পরিবারের সদস্যদের বিতরের জন্য জাগিয়ে দিতেন। হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী কারিম (সা.) রাতে নামাজ আদায় করতেন, তখন আমি তার বিছানায় আড়াআড়িভাবে ঘুমিয়ে থাকতাম। এরপর তিনি যখন বিতর পড়ার ইচ্ছা করতেন তখন আমাকে জাগিয়ে দিতেন। আমিও বিতর আদায় করে নিতাম।
এজন্য উত্তম হলো- রাতের শেষাংশে তাহাজ্জুদ পড়ে বিতর নামাজ আদায় করা। তবে ইশার নামাজের পরেও আদায় করা যায়। কেননা হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) কখনো কখনো ইশার নামাজের পর বিতর আদায় করতেন।
ফজিলত
বিতর নামাজের ফজিলত অনেক বেশি। হজরত খাদিজা ইবনে হুজাফা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাদের কাছে বের হয়ে এসে ইরশাদ করলেন, আল্লাহতায়ালা তোমাদের জন্য একটি নামাজ বাড়িয়ে দিয়েছেন। যা রক্তবর্ণের উট থেকেও তোমাদের জন্য কল্যাণকর। এই নামাজটি হলো- বিতর। এশার নামাজ ও সুবহে সাদিক উভয়ের মধ্যবর্তী সময়টিকে আল্লাহ তোমাদের জন্য ওয়াক্ত নির্ধারণ করে দিয়েছেন। -সুনানে আবু দাউদ : ১৪১৮
বিতর নামাজের মাধ্যমে আল্লাহতায়ালার ভালোবাসা পাওয়া যায়। হজরত আলী (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, হে কোরআনের অনুসারীরা! তোমরা বিতরের নামাজ আদায় কর। কেননা আল্লাহতায়ালা বেজোড় (একক) কাজে তিনি বেজোড় (বিতর) কে ভালোবাসেন। -সুনানে আবু দাউদ : ১৪১৬
বিতর ত্যাগের শাস্তি
বিতর নামাজ ফরজের মতই অবশ্য পালনীয়। কোনো কারণে ছুটে গেলে পরে কাজা আদায় করার জরুরি। নিয়মিত বিতর পরিত্যাগকারী অবশ্যই গোনাহগার হবে এবং নবী কারিম (সা.)-এর সুপারিশ পাবে না। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে বুরায়দা (রহ.) তার পিতা থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, আমি হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) কে বলতে শুনেছি, বিতরের নামাজ হক (সত্য)। যে ব্যক্তি এটা আদায় করবে না, সে আমাদের দলভুক্ত নয়। এই উক্তিটি তিনি তিনবার করেন। অতএব গুরুত্ব দিয়ে নারী-পুরুষ সবার বিতর আদায় করা উচিত।