আলী কাপু সাফাবিদ আমলে নির্মিত ইরানি প্রাসাদ। স্থাপত্য শৈলী ও সৌন্দর্যের বিচারে একে ইসলামি স্থাপত্য শিল্পের উৎকর্ষের প্রতীক বলা যায়। নকশ-ই জাহান স্কয়ারের অংশ হিসেবে করেছে। আলী কাপু ইস্পাহানে অবস্থিত নকশ-ই জাহান স্কয়ারের পশ্চিম পাশে এবং শেখ লুতফুল্লাহ মসজিদের বিপরীত দিকে অবস্থিত।
ভবনটি কয়েক ধাপে নির্মিত হয়। প্রাথমিক পর্যায়ে স্কয়ারের পশ্চিম দেয়ালের সঙ্গে মিলিয়ে দ্বিতল বিশিষ্ট একটি ‘গেটহাউজ’ (প্রবেশদ্বারে নির্মিত ভবন) নির্মাণ করা হয়। এটা হয় ১৫৯০-১৯৫০ খ্রিস্টাব্দে, যখন ময়দানের কাজ শুরু হয়েছিল। ১৬০২ থেকে ১৬০৪ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত যখন ময়দানের আধুনিকায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়, তখন দ্বিতীয়ধাপে প্রাসাদের উচ্চতা দ্বিগুণ করা হয়।
১৬১৪ খ্রিস্টাব্দে তৃতীয় পর্যায়ে প্রাসাদের পঞ্চম তলা নির্মাণ করা হয়। সর্বশেষ ১৬৪৩ খ্রিস্টাব্দে দ্বিতীয় শাহ আব্বাসের যুগে ভবনে কাঠের কলামযুক্ত বারান্দা নির্মাণ করা হয়।
ফারসি ভাষায় আলী কাপু অর্থ উঁচু গেট। প্রকৃতপক্ষে আলী কাপু একটি গেটহাউজ বা প্রবেশদ্বারে নির্মিত ভবন।
ছয়তলা বিশিষ্ট ভবনের প্রথম দুই তলা একটি বৃহৎ প্রবেশদ্বার। ভবন নকশ-ই জাহান ময়দানের সীমানা প্রাচীর থেকে বেশ উঁচু হওয়ায় তা বহু দূর থেকে দেখা যায়। ছয়তলা ভবনের প্রতিটি তলা ভিন্ন ভিন্ন কাজে ব্যবহৃত হতো। তবে বর্তমানে প্রবেশদ্বারের একপাশ বন্ধ করে পুরোপুরি ভবনের রূপ দেওয়া হয়েছে।
নিচতলা যা দোতলার সমান, তাতে প্রবেশদ্বারের পাশের কক্ষগুলো রাজকীয় দপ্তর হিসেবে ব্যবহৃত হতো।
এর কেন্দ্রভাগে গম্বুজবিশিষ্ট একটি বিশাল কক্ষ রয়েছে। চারপাশে আছে ছোট ছোট আরো কিছু কক্ষ। শাসকরা বিদেশি সম্মানিত অতিথিদের এই প্রবেশ পথ দিয়ে নিয়ে আসতেন এবং এখানে তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতেন।
প্রথম শাহ আব্বাসের রাজকীয় চিত্রশিল্পী রেজা আব্বাসী ও তার ছাত্ররা আলী কুপায়ে দেয়ালচিত্র অঙ্কন করেন। যাতে লতা, ফুল, পাখি ও প্রাণির প্রকৃতি অঙ্কন করা হয়। আলী কুপার বেশিরভাগ নকশাদার দরজা ও জানালাগুলো সামাজিক নৈরাজ্যের সময় চুরি হয়ে যায়। তবে ওপরের তলাগুলোতে কয়েকটি এখনো টিকে আছে।
তৃতীয় তলায় রয়েছে সুবিশাল সভাকক্ষ। যার পূর্ব বারান্দায় দাঁড়ালে সমগ্র ময়দান দেখা যায়। সভাকক্ষের চারপাশে ছোট ছোট আরো কিছু কক্ষ আছে। তৃতীয় তলার সভাকক্ষের সামনে এবং দ্বিতল গেটহাউজের ওপরে আছে একটি উন্মুক্ত বারান্দা। যাতে রয়েছে ১৮টি কাঠের কলাম, অলঙ্কৃত ছাদ ও ঝর্ণা। একটি স্রোতস্বিণী নদী থেকে বিশেষ পদ্ধতিতে তৃতীয় তলার এই ঝর্ণায় পানি নিয়ে আসা হতো।
এখানে দাঁড়িয়ে সাফাভিদ শাসকরা নয়নাভিরাম ইস্পাহান শহর দেখত। ষষ্ঠ তলায় রয়েছে সবচেয়ে নান্দনিক সঙ্গীতকক্ষ। খোলামেলা ও আলো-বাতাসে ভরপুর সঙ্গীতকক্ষ দারুণ সব নকশায় অলঙ্কৃত। এর দেয়ালে বৃত্তাকার কুলুঙ্গি পাওয়া যায়। এগুলো যেমন ভবনের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে, তেমন শব্দের মধুর প্রতিধ্বনিও তৈরি করে।