তাহাজ্জুদের নামাজ মুমিনের মর্যাদার সোপান। রবের প্রিয় হওয়ার মাধ্যম। ফরজ নামাজের পর নফল নামাজের মধ্যে তাহাজ্জুদের স্থান। তাহাজ্জুদ প্রাণহীন হৃদয়কে সজীব করে মানুষের পাপরাশিসমূহ মুছে দেয়, তাহাজ্জুদের মাধ্যমে বান্দা সৃষ্টিকর্তার নিকটবর্তী হয়। হজরত আবু উমামা (রা.) থেকে বর্ণিত। নবী কারিম (সা.) বলেন, তোমরা কিয়ামুল লাইলের প্রতি যত্নবান হও। কেননা তা তোমাদের পূর্ববর্তী সালেহিনের (নেককার) অভ্যাস এবং রবের নৈকট্য লাভের বিশেষ মাধ্যম। আর তা পাপরাশী মোচনকারী এবং গোনাহ থেকে বাধা প্রদানকারী।’ -জামে তিরমিজি : ৩৫৪৯
রহমানের বান্দা বলে সম্বোধন
যারা রাত জেগে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করে, রাতের গভীরে আল্লাহর স্মরণে যাদের চোখ থেকে অশ্রু ঝরে কোরআন মাজিদে তাদেরকে ‘রহমানের বান্দা’ বলে সম্বোধন করা হয়েছে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘রহমানের বান্দা তারা, যারা রাত অতিবাহিত করে নিজ প্রতিপালকের সামনে (কখনো) সিজদারত অবস্থায় এবং (কখনো) দণ্ডায়মান অবস্থায়।’ -সুরা ফুরকান : ৬৪
গভীর রাতে রবের আহবান
রাত যখন গভীর হয়, যখন চারদিকের কোলাহল থেমে যায়। রব তখন নিকটবর্তী আসমানে এসে বান্দাদের খুব মায়া করে ডাকতে থাকেন, ‘কে আছো, দোয়া করবে; আমি তার দোয়া কবুল করব। কে আছো, আমার কাছে (তার প্রয়োজন) চাইবে আমি তাকে দান করব। কে আছো, আমার কাছে ক্ষমা চাইবে আমি তাকে ক্ষমা করব।’-সহিহ বোখারি : ১১৪৫
কৃতজ্ঞ বান্দা হওয়ার মাধ্যম
নবী কারিম (সা.) স্বেচ্ছায় কখনো তাহাজ্জুদ ছাড়তেন না, কখনো অনিচ্ছায় ছুটে গেলেও কাজা আদায় করে নিতেন। কখনো নামাজে একটি আয়াত পড়তে পড়তে সারারাত কাটিয়ে দিতেন। একবার হজরত আয়েশা (রা.) অনুযোগের সুরে নবী কারিম (সা.)-কে বলতে লাগলেন, আপনি এত কষ্ট করছেন, অথচ আপনার পূর্বাপর সমস্ত গোনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়েছে! উত্তরে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, ‘আমার কি উচিত নয় যে, (এই মহা অনুগ্রহের জন্য আল্লাহর ইবাদতের মাধ্যমে) আমি একজন পূর্ণ শোকর আদায়কারী বান্দা হব?’ -সহিহ বোখারি : ৪৮৩৭
জান্নাত লাভ ও মর্যাদা বৃদ্ধির আমল
আমরা সবাই জান্নাতপ্রার্থী, মর্যাদা প্রত্যাশী। তাহাজ্জুদ মুমিনের মর্যাদার সিঁড়ি, সফলতা ও জান্নাত লাভের চাবিকাঠি। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘মুমিনের মর্যাদা কিয়ামুল লাইল- রাতে দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় ও বিভিন্ন বন্দেগির মধ্যে, আর তার সম্মান মানুষ থেকে অমুখাপেক্ষিতার মধ্যে।’ -তাবারানি : ৪২৭৮
অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে, নিশ্চয়ই জান্নাতে রয়েছে এমন কিছু কক্ষ বা প্রাসাদ, যার বাহির থেকে ভেতরাংশ দেখা যাবে, ভেতর থেকে বহিরাংশ দেখা যাবে। এগুলো আল্লাহতায়ালা তাদের জন্য প্রস্তুত করেছেন, যারা মানুষকে খাবার খাওয়ায়, কোমল ভাষায় কথা বলে, ধারাবাহিকভাবে রোজা রাখে, সালামের প্রসার ঘটায় এবং রাতে সবাই যখন ঘুমিয়ে পড়ে তারা নামাজে দণ্ডায়মান থাকে। -মুসনাদে আহমাদ : ২২৯০৫
সপরিবারে তাহাজ্জুদ
এত গুরুত্বপূর্ণ ও ফজিলতের আমল একা কেন, পরিবারের অন্যান্যদেরও অংশগ্রহণ করাতে পারি এবং অনায়াসেই শামিল হতে পারি নবী কারিম (সা.)-এর পবিত্র জবানের নুরানি দোয়ায়। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘ওই ব্যক্তির প্রতি আল্লাহ রহম করুন, যে রাতে উঠে নামাজ আদায় করে, তারপর স্ত্রীকে জাগিয়ে দেয় এবং সেও নামাজ আদায় করে। স্ত্রী যদি উঠতে না চায় তখন তার চেহারায় পানি ছিটিয়ে হলেও উঠানোর চেষ্টা করে। তদ্রুপ ওই নারীর প্রতি আল্লাহ রহম করুন, যে রাতে উঠে নামাজ আদায় করে তারপর স্বামীকে জাগিয়ে দেয় এবং স্বামী উঠে নামাজ আদায় করে। স্বামী উঠতে না চাইলে চেহারায় পানি ছিটিয়ে হলেও তাকে উঠানোর চেষ্টা করে।’-সুনানে নাসায়ি : ১৩০২