ইসলামে সমাজসেবা কার্যক্রম কেবল মানুষের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং ইসলাম সকল সৃষ্টির প্রতি দয়া ও কল্যাণ নিশ্চিত করার ঘোষণা দিয়েছে। এ হিসেবে সমাজসেবামূলক সকল কার্যক্রম ইসলামে ইবাদাত হিসেবে গণ্য। তবে এটি হতে হবে নিঃস্বার্থ সমাজসেবা।
ইসলামে সমাজসেবার পরিধি অত্যন্ত ব্যাপক। যেমন, রোগীর চিকিৎসা করা, দুর্যোগ পীড়িত মানুষের সেবা, যত্ন ও সাহায্য-সহযোগিতা করা, কর্মহীন মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা, অনাহারী মানুষের আহার যোগানো, পিপাসার্ত মানুষের পিপাসা নিবারণ, বস্ত্রহীনকে বস্ত্র প্রদান, অসহায়, নিঃস্ব ও দরিদ্রদের আর্থিক সাহায্য-সহযোগিতা করা, আশ্রয়হীন ও কর্মক্ষম ও প্রতিবন্ধী মানুষের পুনর্বাসন, দারিদ্র্য বিমোচন, রাস্তা-ঘাট, ঘর-বাড়ি ও সেতু নির্মাণ, পরিবেশ উন্নয়ন ও বৃক্ষরোপণ, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় বিশৃঙ্খলা ও সন্ত্রাস দূরীকরণ, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনে শান্তি স্থাপন এবং জনগণের জান-মালের নিরাপত্তা বিধান প্রভৃতি সমাজসেবার অন্তর্ভুক্ত।
ইসলামের দৃষ্টিতে সমাজসেবা কার্যক্রম শুধু মানবিকই নয়; বরং একটি মৌলিক দায়িত্ব। সমাজসেবা হচ্ছে- ইসলামি দাওয়াতের ভূমিকাস্বরূপ। হজরত রাসুলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সমাজসেবার মাধ্যমে আরবের জনমানুষের হৃদয় ও মন জয় করেছিলেন- যা নবুওয়তপ্রাপ্তির পর দাওয়াতি কাজে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছিল।
‘হিলফুল ফুজুল’ নামে কল্যাণ সংস্থার সেবাকর্ম দ্বারা নবী কারিম (সা.) এতটাই জনপ্রিয় হয়েছিলেন যে, লোকরা তাকে ‘আল আমিন’উপাধিতে ভূষিত করেছিল। নবীর সেবাধর্মী চরিত্র ও বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে উম্মুল মুমিনিন হজরত খাদিজাতুল কুবরা (রা.) সাক্ষ্য দিয়ে বলেন, ‘আল্লাহর কসম! আল্লাহতায়ালা আপনাকে কখনোই অপমানিত করবেন না। আপনি তো আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে সদ্ব্যবহার করেন, অসহায়-দুর্বলের দায়িত্ব বহন করেন, নিঃস্বকে সাহায্য করেন। মেহমানের সমাদর করেন এবং দুর্দশাগ্রস্তকে সাহায্য করেন।’ -সহিহ বোখারি
মুসলমান হিসেবে আমাদেরকেও হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) আদর্শ সামনে রেখে সমাজসেবামূলক কর্মসূচি চালিয়ে যেতে হবে। বান্দার হক তথা আত্মীয়স্বজন, প্রতিবেশী ও গরিব-দুঃখী মানুষের সাহায্যে এগিয়ে আসা এবং আর্তমানবতার সেবা, সামাজিক সমস্যা দূরীকরণ ও সমাজসেবামূলক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতে হবে।
আত্মীয়স্বজন, প্রতিবেশী, দরিদ্র, নিঃস্ব, এতিম, নিরাশ্রয়, রোগী ও বিপদগ্রস্ত মানুষকে যথাযথ সেবা করা খুবই সওয়াবের কাজ। আর এতে অমনোযোগী হওয়া আল্লাহর অসন্তুষ্টি ও গোনাহর কাজ। কোরআনে কারিমে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা আল্লাহর ইবাদত করবে ও কোনো কিছুকে তার সঙ্গে শরিক করবে না এবং বাবা-মা, আত্মীয়স্বজন, এতিম, অভাবগ্রস্ত, নিকট প্রতিবেশী, দূর প্রতিবেশী, সঙ্গী-সাথি, পথচারী এবং তোমাদের অধিকারভুক্ত দাস-দাসীদের প্রতি সদ্ব্যবহার করবে। নিঃসন্দেহে আল্লাহ দাম্ভিক ও অহঙ্কারীকে পছন্দ করেন না- যারা কৃপণতা করে, মানুষকে কৃপণতার নির্দেশ দেয় এবং আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদের যা দিয়েছেন, তা গোপন করে।’ -সুরা নিসা : ৩৬-৩৭
রাসুলে আকরাম (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘তোমার (অপর) ভাইয়ের প্রতি তোমার হাসিমুখে তাকানোও একটি সদকা, কাউকে ভালো কাজ করার জন্য তোমার নির্দেশ দেওয়া একটি সদকা, কাউকে মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখাও তোমার একটি সদকা, পৃথিবীতে পথভ্রষ্ট ব্যক্তিকে সুপথ দেখানোও তোমার জন্য একটি সদকা, যে ব্যক্তি চোখে কম দেখে তাকে সাহায্য করাও তোমার জন্য একটি সদকা, যদি রাস্তা থেকে পাথর-কাঁটা ও হাড় সরিয়ে দাও তা-ও তোমার জন্য একটি সদকা, তোমার বালতির পানি দ্বারা তোমার ভাইয়ের বালতি ভরে দেয়াও একটি সদকা।’ -সুনানে তিরমিজি
ইহকালের শান্তি ও পরকালীন নাজাতের জন্য আমাদের প্রত্যেকেরই সাধ্যমত সমাজসেবামূলক কর্মকাণ্ডে অংশ নিতে হবে। পরকালীন প্রতিদান ছাড়াও এর মাধ্যমে সমাজে হিংসা-বিদ্বেষের মতো অধঃপতিত কাজ থেকে বেঁচে থাকা যায়। তাছাড়া এ সেবা কার্যক্রম প্রত্যেকেই চালিয়ে যেতে পারে। তাই সবাইকে যার যার জায়গা থেকে সেবা কার্যক্রম চালিয়ে যেতে হবে। এর মাধ্যমে মিলবে আল্লাহর সন্তুষ্টি।