বগুড়ার আদমদীঘির সান্তাহারে কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে দুটি প্রাচীন ও ছোট মসজিদ। ইতিহাসের এই নিদর্শন দুটি আজ অনেকটাই পরিত্যক্ত। সেখান থেকে আর মোয়াজ্জিনের আজান শোনা যায় না। মসজিদ দুটিতে সর্বশেষ নামাজ পড়া হয়েছে প্রায় দেড়শ বছর আগে। ধারণা করা হয়, ১৭৭০ থেকে ১৭৯০ সালের মধ্যে মসজিদ দুটি নির্মিত হয়েছিল।
স্থানীয়দের মতে, উপজেলার সান্তাহার পৌর এলাকার তারাপুর ও মালশন গ্রামের এ দুটি স্থাপনা এশিয়া মহাদেশের সবচেয়ে ছোট মসজিদ।
মসজিদে সামান্য উঁচু একটি গম্বুজ রয়েছে। গম্বুজের ওপর আছে একটি মিনার। দেড় ফুট পুরুত্বের দেয়ালে ব্যবহৃত ইটগুলো আকারে খুব ছোট। তবে মসজিদের দরজায় দুটি সুন্দর খিলান আছে। আছে মিম্বর এবং মেহরাবও। চুন-সুরকি দিয়ে তৈরি স্থাপনাটি এতটাই পুরনো যে, প্রথমে দেখে এটি মসজিদ মনে হয় না।
জমিদারি প্রথার সময় আদমদীঘির এ অঞ্চল বিভিন্ন জমিদারের শাসনাধীন ছিল। সে সময় নাটোরের রাণী ভবানীর জমিদারি ছিল প্রায় ১২ হাজার ৯৯৯ বর্গমাইলজুড়ে, যার মধ্যে আদমদীঘির বিভিন্ন এলাকা অন্তর্ভুক্ত ছিল। রাণী ভবানীর বাবার বাড়িও আদমদীঘির ছাতিয়ান গ্রামে।
কথিত আছে, তারাপুর গ্রামে তারাবানু নামে একজন মুসলিম নারী বাস করতেন। হিন্দু প্রধান এলাকা হওয়ার কারণে ওই নারীর ইবাদত-বন্দেগিতে অসুবিধা হত। তিনি একটি মসজিদ নির্মাণের আবেদন করেছিলেন। কিন্তু স্থানীয় সমাজপতিরা তাতে রাজি হননি। পরে রাণী ভবানীর কাছে আবেদন করা হয়। রাণী ভবানী তখন ছাতিয়ান গ্রামে বাবার বাড়িতে বেড়াতে এসেছিলেন। তার উদ্যোগেই পরে একটি মসজিদ নির্মাণ করা হয়।
ক্ষুদ্র এই মসজিদটি প্রস্থে ৯ ফুট, উচ্চতা মিনারসহ ১২ ফুট। মিনারটির ঘের ২৭ ফুট। মসজিদটির মেহরাব এতই ক্ষুদ্র যা ভেতরে না গেলে চোখে পড়ে না। এর মেহরাবের উচ্চতা সাড়ে তিন ফুট, প্রস্থ দেড় ফুট। এছাড়া দরজার উচ্চতা সাড়ে ছয় ফুট এবং প্রস্থ আড়াই ফুট। সর্বোচ্চ তিনজন মানুষ এ মসজিদে নামাজ পড়তে পারবেন।
মসজিদের এই স্থানটির বর্তমান মালিক ষাটোর্ধ্ব জয়েনুল উদ্দিন প্রামানিক বলেন, আমার বাবা-দাদাও বলতে পারেননি এই মসজিদ কত পুরনো। তবে ধারণা করা হয় মসজিদটির বয়স ৩০০ বছর পেরিয়েছে। আমি ব্যক্তিগত ভাবে মসজিদটির সামান্য সংস্কার করেছি। সরকারের এ বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।
অপরদিকে তারাপুরের এই মসজিদের মতো আরেকটি মসজিদ রয়েছে পাশের মালশন গ্রামে। এর দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও উচ্চতা তারাপুর গ্রামের মসজিদের চেয়ে একটু বড়। তবে নির্মাণশৈলী একই ধরনের। এই মসজিদটি সম্পর্কেও সঠিক ইতিহাস জানা যায় না। এখানে একসঙ্গে পাঁচজন মানুষ নামাজ আদায় করতে পারবেন।
এই মসজিদের স্থানটির বর্তমান মালিক আমজাদ হোসেন (৭০) বলেন, আমি দাদার কাছে শুনেছি এই মসজিদটির বয়স প্রায় ৩০০ বছরের বেশি। মসজিদের অবস্থা খুব জরাজীর্ণ।
এদিকে মসজিদ দুটি কত আগে তৈরি হয়েছিল, কে তৈরি করেছিলেন, কেন এত ছোট ছিল এসব বিষয়ে জানা না গেলেও ঐতিহাসিক নিদর্শন হিসেবে এর গুরুত্ব অনেক। কিন্তু প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর বিভাগ এখানে কোনো নজর দেয়নি। তবে ভ্রমণপিপাসুরা প্রতিদিন মসজিদ দুটি দেখতে যান।
বগুড়া আঞ্চলিক প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের পরিচালক ড. মোছা. নাহিদ সুলতানা জানিয়েছেন, ‘আমি তারাপুরের মসজিদে গিয়েছিলাম। খুবই ছোট একটি মসজিদ। একটা মসজিদের যে বৈশিষ্ট্য থাকা দরকার, তা সেখানে নেই। ছোট ওই ঘরকে মানুষ কেন মসজিদ বলছে- এর পক্ষে লিখিত কোনো তথ্য পাইনি। ওখানে যে ইট ব্যবহার করা হয়েছে, তা অনেক পরের ইট এবং ঘরটি জোড়াতালি দেওয়া। আর মালশনের মসজিদের বিষয়ে জানতাম না। এটি পরিদর্শন করা হয়নি। আমাদের লোক সরজমিনে গিয়ে মসজিদটি পরিদর্শন করবে।’