ঢাকাকে বলা হয় মসজিদের শহর। পুরনো এই শহরজুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে হাজারো ঐতিহাসিক মসজিদ। ঢাকায় ইসলামি ঐতিহ্যের বাহক এমনই এক স্থাপনা হলো- কসাইটুলির কে পি ঘোষ রোডের শতবর্ষী কাস্বাবটুলি জামে মসজিদ।
নামে না চিনলেও ছবি দেখে অনেকেই মসজিদটি চিনে উঠতে পারেন। কারণ, ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে বিটিভির আজানের সময় এই মসজিদের দৃশ্য দেখানো হতো।
এশিয়াটিক সোসাইটি প্রকাশিত ঢাকা কোষ থেকে জানা যায়, পুরান ঢাকার ব্যবসায়ী আবদুল বারি ১৯০৭ সালে বংশাল থানার আধীন কে পি ঘোষ রোডে এই মসজিদ তৈরি করেন। নয়নাভিরাম কারুকার্য শোভিত এই মসজিদের ছাদে তিনটি গম্বুজ। চার কোনায় চারটি বুরুজ মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। গম্বুজ আর বুরুজগুলোর মাথায় রয়েছে সূক্ষ্ম পদ্ম ফুলের নকশা করা তীর। ছাদের চারদিক ঘিরে আছে অনেক টারেট, যা মসজিদের নকশাকে আরও জমকালো করে তুলেছে।
মসজিদটির সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হলো, চীনামাটির অভিনব সব কারুকাজ। ভেতরে বাইরে প্রায় সব দেয়ালেই মোজাইকে নকশা করা। চীনামাটির ভাঙা টুকরা আর রঙিন কাচ দিয়ে গোলাপের ঝাড়, আঙুরের থোকা, ফুলদানির ছবি ফুটে উঠেছে মসজিদের দেয়ালে-খিলানে।
ভেতরের মিহরাব এবং এর আশপাশের নকশা সবচেয়ে রঙিন ও মনোমুগ্ধকর। মসজিদের দেয়ালের চীনামাটির টুকরাগুলো দেখতে চিনির টুকরার মতো বলেই স্থানীয় লোকজনের কাছে এটি চিনির টুকরা মসজিদ হিসেবেই অধিক প্রসিদ্ধ।
বংশাল রোডের ঘনবসতিপূর্ণ এলাকার গলি ঘুপচি দিয়ে হাঁটতে গেলে হঠাৎই নজর কাড়ে এই অনিন্দ্যসুন্দর মসজিদটি। স্থানীয় বয়োজ্যেষ্ঠদের কাছ থেকে জানা যায়, অতীতে আরও বেশি সুন্দর ছিল এই মসজিদ।
মসজিদটি মূল অংশ, বারান্দাসহ প্রায় দুই কাঠা জায়গার ওপর অবস্থিত। মূল মসজিদের অবকাঠামোয় আলাদা সমতল ছাদ নেই। ভেতর দিয়ে ছাদের বেশির ভাগ অংশে সরাসরি তৈরি করা হয়েছে বিভিন্ন আকারের কয়েকটি গম্বুজ। মসজিদ ভবনের মধ্যে বড়, দুই পাশে মাঝারি ধরনের এবং চার কোনায় একই ডিজাইনের চারটি গম্বুজ রয়েছে। এ ছাড়া ছয়টি ছোট ও দুটি জোড়া পিলারে দুটি গম্বুজ রয়েছে। গম্বুজগুলোর উচ্চতা পাঁচ থেকে ১২ ফুট। ছাদবিহীন মসজিদের প্রতিটি পিলারের মাথায় রয়েছে গম্বুজ বা মিনার।
মুসল্লিদের স্থান সংকুলান না হওয়ায় ধাপে ধাপে পেছনে তিনতলা পর্যন্ত এর সম্প্রসারণ করা হয়েছে। তবে মূল মসজিদের কাঠামোয় কোনো পরিবর্তন করা হয়নি। যদিও এখন ক্রমেই ফিকে হয়ে যাচ্ছে চীনামাটির করা এর মূল সৌন্দর্য। জনশ্রুতি আছে, মানুষের পাশাপাশি এই মসজিদে নামাজ পড়তে আসত জিনও।
মুসলিম সংস্কৃতির আঁতুড়ঘর হলো মসজিদ। বিশ্বের প্রায় সব দেশের মতো বাংলাদেশেও আছে অনন্য স্থাপত্যশৈলীর নয়নাভিরাম কারুকার্যসমৃদ্ধ অসংখ্য মসজিদ। সঠিক পৃষ্ঠপোষকতা ও রক্ষণাবেক্ষণ করা হলে ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে দীর্ঘকাল দাঁড়িয়ে থাকবে এসব ঐতিহাসিক নিদর্শন।
যেকোনো দিন চাইলে আপনিও ঘুরে আসতে পারেন শতবর্ষ পুরোনো এই মসজিদ থেকে। ঢাকার যেকোনো প্রান্ত থেকে বাবুবাজার ব্রিজ বা বুড়িগঙ্গা দ্বিতীয় সেতুতে আসতে হবে। এখান থেকে রিকশা নিয়ে যেতে হবে। হেঁটেও যেতে পারেন। কসাইটুলির চিনির মসজিদ বললে যে কেউ নিয়ে যাবে।