কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি দুই দিনের সফরে বাংলাদেশে আসছেন। তার এই সফরকে ঘিরে আশার আলো দেখছেন বাংলাদেশি ইমাম-মোয়াজ্জিনরা।
জানা যায়, সুন্দর সুর আর শুদ্ধ উচ্চারণে কোরআন মাজিদ তেলাওয়াতের কারণে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কাতারে বাংলাদেশি ইমাম-মোয়াজ্জিনরা বেশ সম্মানিত। প্রচুর বাংলাদেশি আলেম, হাফেজ ও কারি দেশটির বিভিন্ন মসজিদের নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছেন। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশ থেকে ইমাম-মোয়াজ্জিন নিয়োগ বন্ধ থাকায় শূন্য পদগুলো অন্য দেশের নাগরিকরা পূরণ করছেন। ফলে অপেক্ষায় থেকে থেকে হতাশা নেমে আসা আগ্রহীরা আশার আলো দেখছেন।
সোমবার (২২ এপ্রিল) বাংলাদেশ সফরে আসছেন কাতারের আমির। সফরে ডজনখানেক চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সইয়ের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। প্রায় দুই দশক পর কাতারের কোনো আমির বাংলাদেশ সফরে আসছেন। দুই দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে এ সফর তাৎপর্যপূর্ণ।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আমিরের সফরে এখন পর্যন্ত ১৩টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সইয়ের জন্য প্রস্তুতি রাখা হয়েছে। এর মধ্যে হয়তো ১০টি সই হতে পারে। চূড়ান্ত হওয়া চুক্তি ও সমঝোতা স্মারকে নতুন করে সংযোজন বা বিয়োজন হতে পারে, যা সাধারণত এ ধরনের শীর্ষ পর্যায়ের সফরে হয়ে থাকে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, দুই দেশের শীর্ষ নেতাদের বৈঠক শেষে সইয়ের তালিকায় থাকা এমওইউর মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ থেকে কাতারে জনশক্তি রফতানি ও ধর্মীয় বিষয়ে সহযোগিতার বিষয়।
বাংলাদেশের জনশক্তির প্রধান বাজার সৌদি আরব হলেও প্রচুরসংখ্যক কর্মী কাতারে কাজ করেন। কাতার ওয়াকফ ও ধর্ম মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, কাতারে দুই হাজারের মতো মসজিদ রয়েছে। প্রতিটি মসজিদে একজন ইমাম, একজন মুয়াজ্জিন এবং একজন খতিব রয়েছেন। এর মধ্যে ১ হাজারের বেশি মসজিদে বাংলাদেশি ইমাম-খতিব ও মোয়াজ্জিন কর্মরত।
১৯৯০ সালে প্রথম পরীক্ষা নিয়ে কাতারে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল ১৮ জন ইমাম-মোয়াজ্জিন। পরের বছর আসেন আরও ছয়জন। ধীরে ধীরে এ সংখ্যা বাড়তে থাকে। বর্তমানে কাতারে কর্মরত ইমাম-মোয়াজ্জিনের সংখ্যা ৭০০ জনের বেশি।
সর্বশেষ ২০০৭ এবং ২০০৮ সালে দুই দফায় বাংলাদেশ থেকে শতাধিক ইমাম-মোয়াজ্জিনকে নিয়োগ দিয়েছিল কাতার। এরপর দীর্ঘদিন ইমাম-মোয়াজ্জিন নিয়োগ দেওয়া বন্ধ ছিল।
২০১৫ সালের দিকে কাতার ওয়াকফ ও ধর্ম মন্ত্রণালয় বাংলাদেশ থেকে ইমাম-মোয়াজ্জিন আনার সিদ্ধান্ত নেয়। এ লক্ষ্যে কাতার থেকে পরীক্ষক দল ঢাকায়ও আসে। পরে অজানা কারণে সেই নিয়োগ প্রক্রিয়া থেমে যায়। তবে কাতারে থাকা বাংলাদেশি প্রবাসীদের কেউ কেউ ইমাম-মোয়াজ্জিন হিসেবে নিয়োগ পাচ্ছেন।
কাতারে ইমাম-মোয়াজ্জিন নিয়োগের বিষয়টি নিয়ে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে আলোচনা চলছে। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে কাতারের ধর্মবিষয়ক মন্ত্রী ঘানিম শাহীন আল-ঘানিমের সঙ্গে কাতারে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. জসীম উদ্দিনের বৈঠকে বাংলাদেশ থেকে ইমাম-মোয়াজ্জিন নিয়োগ দিতে কাতারকে আহ্বান জানানো হয়।
এবার সরকারের উচ্চ পর্যায়ে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হলে দ্রুত একটি সিদ্ধান্ত আসবে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।
শুধু ইমাম-মোয়াজ্জিন নয়, কাতার ধর্ম মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদেও দায়িত্ব পালন করছেন বাংলাদেশি ইমামরা। মেধা, আচরণ, মনোমুগ্ধকর কোরআন তেলাওয়াত, শুদ্ধ আরবি ও অন্যান্য সাফল্যের কারণে বাংলাদেশি ইমাম-মোয়াজ্জিনদের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।