জীবন চলতে গিয়ে মানুষকে নানা রকম পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়। নানা ধরনের কাজকর্ম করতে হয়। ভাবতে হয় নানা রকম বিষয় এবং সামলাতে হয় বিচিত্র রকমের পরিস্থিতি। এসব ক্ষেত্রে যথাযথ উদ্যোগ ও উপযুক্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের সুযোগ যেমন হয়, তেমনি হয়ে যায় অনাকাঙ্ক্ষিত নানা ভুল ও বিচ্যুতি।
মানুষের মানবিক ও প্রাকৃতিক নানা দুর্বলতাও প্রকাশ পায় সেখানে। প্রকাশ পায় তার আত্মশক্তি, ইচ্ছাশক্তি ও কর্মশক্তির বিভিন্ন অবস্থা। কোনো সন্দেহ নেই- এসবকিছু সত্ত্বেও জীবনের বহুক্ষেত্রে মানুষ সফল হয়। তবে ব্যর্থতাও অধিকার করে নেয় বহুক্ষেত্র। জীবনের এই ধারা চলমান। জীবন যতদিন আছে হয়তো ততদিনই চলবে এই অবস্থা। এরই মাঝখান দিয়ে মানুষকে চেষ্টা করতে হবে, যাবতীয় গোনাহ থেকে বেঁচে থাকার। আর গোনাহ থেকে বেঁচে থাকতে এ বিষয়গুলো বেশ কার্যকর। সেগুলো হলো-
নির্জনে আল্লাহর ভয়ে কাঁদা
গোনাহটা তো মানুষের চোখ দ্বারাই বেশি হয় এবং নির্জনে বেশি হয়। সুতরাং নির্জনে কিছু চোখের পানিও বিসর্জন দিতে হবে। এটা সাধারণ দোয়া থেকে স্পেশাল। হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাদিসে বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর ভয়ে কাঁদে সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে না। দুধ স্তনে ফিরে যাওয়া যেমন অসম্ভব, তেমনি তার জাহান্নামে প্রবেশ করাও অসম্ভব।’ -জামে তিরমিজি : ২৩১১
গোনাহর কারণে দয়াময় আল্লাহতায়ালা অসন্তুষ্ট হন। আর আল্লাহর অসন্তুষ্টির চূড়ান্ত বহিঃপ্রকাশের নামই হলো- জাহান্নাম। আর সেই জাহান্নাম থেকে চোখের পানির উসিলায় বেঁচে যেতে পারেন। এর অর্থ হলো, আল্লাহতায়ালা আপনাকে হয় গোনাহটি থেকে বিশেষ রহমতে বাঁচিয়ে নেবেন কিংবা মৃত্যুর আগে হলেও এ থেকে তওবার তওফিক দিয়ে দেবেন।
গোনাহ না করার চেষ্টা করা
এক দিনে কিংবা এক রাতে আপনি গোনাহ ছেড়ে দিয়ে পবিত্র হয়ে উঠবেন, এ ধারণা ভুল। বরং এ জন্য কষ্ট করতে হবে, প্রতিনিয়ত চেষ্টা চালাতে হবে। আপনি গোনাহ ছেড়ে দেওয়ার ব্যাপারে আন্তরিক, এটা তখনই বুঝা যাবে- যখন এ ব্যাপারে আপনার চেষ্টা অব্যাহতভাবে পাওয়া যাবে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আর যারা আমার পথে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালায়, তাদেরকে আমি অবশ্যই আমার পথে পরিচালিত করব। আর নিশ্চয় আল্লাহ সৎকর্মশীলদের সঙ্গেই আছেন।’ -সুরা আনকাবুত : ৬৯
মনে রাখুন, আমার ওপর পাহারাদার আছে
মাঝে-মধ্যে অন্তরে এই ভাবনা জাগিয়ে তুলুন যে, আমার ওপর পাহারাদার আছে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আল্লাহ সব বিষয়ের ওপর দৃষ্টি রাখেন।’ -সুরা আহজাব : ৫২
ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহ.) একজন কবির কাছে একটি কবিতা শুনে দরজা বন্ধ করে খুব কেঁদেছিলেন। কবিতাটি ছিলো এই, ‘যদি তুমি দিনের কিছু সময় একাকী কাটাও, তখন এ কথা বলো না যে, আমি নির্জনে একাকী সময় কাটিয়েছি; বরং বলো, আমার পেছনে সদা সর্বদা একজন পাহারাদার ছিলো।’
আল্লাহকে লজ্জা করতে শেখা
হাকিমুল উম্মত হজরত আশরাফ আলী থানভি (রহ.) কথাটা এভাবে বলেছেন, গোনাহ থেকে বাঁচার একটি কৌশল হলো, এ কথা চিন্তা করা- গোনাহটি আমি আমার শায়খের (পীর, শিক্ষক, ধর্মগুরু) সামনে মা-বাবার সামনে কিংবা যারা আমাকে ভালো মানুষ মনে করে তাদের সামনে করতে পারবো কিনা! তারপর চিন্তা করো, তারা তো এখানে নেই। কিন্তু আমার আল্লাহ তো আছেন। তিনি সবার চেয়েও বড়। সুতরাং তার সামনে গোনাহটি কীভাবে করবো!
হাদিস শরিফে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) এটাই বলেন, ‘আল্লাহকে লজ্জা করো, যেমন তুমি তোমার কওমের (সম্প্রদায়ের) নেক মানুষকে লজ্জা করে থাকো।’ -বায়হাকি, শোয়াবুল ঈমান: ৭৭৩৮
ভাবুন, আল্লাহর সরাসরি প্রশ্নে কী উত্তর দেবেন
আজ আমি যে গোনাহগুলোতে লিপ্ত, কেয়ামতের দিন তো আল্লাহ আমাকে সরাসরি জিজ্ঞেস করবেন যে, বান্দা! এ গোনাহটা কেন করলে? দরজা-জানালা বন্ধ করে দিয়ে তুমি মনে করেছিলে যে, তোমাকে কেউ দেখে নাই। আমিও কি দেখি নাই? তুমি কি মনে করেছ যে, আমার দেখা মাখলুকের চোখের চেয়ে দুর্বল? হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে এমন কেউ নেই, যার সঙ্গে তার রব কথাবার্তা বলবেন না। তার ও তার রবের মাঝে কোন দোভাষী এবং এমন কোনো পর্দা থাকবে না, যা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে।’ -সহিহ বোখারি : ৬৯৩৫
চিন্তা করুন, সেদিন তখন আমরা কী উত্তর দেবো? সেদিন যদি আল্লাহ সরাসরি জিজ্ঞেস করেন, বান্দা! রাতের দুইটা বাজে কেন তুমি অশ্লীলতার ভেতরে ডুবে গিয়েছিলে? কেন তুমি এমন জিনিসের চর্চা করেছিলে যে, যেখানে পৌত্তলিকতা, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, অবৈধ প্রেম ও নগ্নতাসহ কত শত অপরাধের চর্চা ও শিক্ষা ছিল? তখন আমরা কী উত্তর দেবো?