মুসলমানদের কেবলা পবিত্র কাবাঘর। এটা আল্লাহতায়ালার এক অপূর্ব নিদর্শন। পৃথিবীতে সর্বপ্রথম আল্লাহর নির্দেশে ফেরেশতারা পবিত্র কাবাঘর নির্মাণ করেন। কোরআন মাজিদে এ সম্পর্কে ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই সর্বপ্রথম ঘর যা মানুষের জন্যে নির্ধারিত হয়েছে, সেটাই হচ্ছে এ ঘর। যা মক্কায় অবস্থিত এবং সারাজাহানের মানুষের জন্য হেদায়েত ও বরকতময়।’ -সুরা আলে ইমরান : ৯৬
এরপর হজরত আদম (আ.) আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের আদেশে কাবাঘর পুনঃনির্মাণ করেন। এরপর হজরত শিষ (আ.) কাবাঘর পুনঃনির্মাণ করেন। এরপর হজরত ইবরাহিম (আ.) স্বীয় পুত্র হজরত ইসমাইল (আ.)-কে সঙ্গে নিয়ে কাবাঘর পুনঃনির্মাণ করেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর স্মরণ করো, যখন ইবরাহিম ও ইসমাইল কাবা গৃহের ভিত্তিস্থাপন করছিলো। তখন তারা দোয়া করে বলেছিলো, হে আমাদের রব! আমাদের থেকে এ খেদমত কবুল করে নাও। নিশ্চয়ই তুমি সবকিছু শ্রবণকারী, সবকিছু জ্ঞাত।’ -সুরা আল বাকারা: ১২৭
এরপরেও বিভিন্ন সময়ে মহিমান্বিত এ ঘরের সংস্কার কাজ সাধিত হয়েছে।
পবিত্র কাবা মুসলমানদের ইবাদত ও সামাজিক জীবনের প্রাণকেন্দ্র। মুসলমানরা কাবামুখি হয়ে দৈনিক ৫ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করেন। আর জিলহজ মাসে বিশ্বের নানা প্রান্তের লাখ লাখ মুসলমান কাবাকে ঘিরে গড়ে তোলেন ঐক্য ও ভালোবাসার মিলনমেলা।
কাবাঘর এমন এক স্থান, যার চারদিকে প্রদক্ষিণ করেছেন পৃথিবীতে আগমনকারী প্রায় সব নবী-রাসুল। এ পৃথিবীতে আল্লাহতায়ালা অসংখ্য নবি-রাসুল প্রেরণ করেছেন। তাদের সঠিক সংখ্যা কেউ জানে না। এক লাখ চব্বিশ হাজার বা দুই লাখ চব্বিশ হাজারে নবী-রাসুলের সংখ্যা নির্দিষ্ট নয়। এ ব্যাপারে বিজ্ঞ আলেমদের অভিমত হলো, আল্লাহ রাব্বুল আলামিন প্রেরিত রাসুল এবং নবীদের নির্দিষ্ট সংখ্যা সর্বসম্মতভাবে প্রমাণিত নয়। আল্লাহতায়ালা যতো নবী প্রেরণ করেছেন, অনির্দিষ্টভাবে তাদের সবার ওপর ইমান আনা আমাদের জন্য অত্যাবশ্যক।
এ সব নবী ও রাসুল পৃথিবীর বিভিন্ন এলাকায় আগমন করেছিলেন। তবুও মহান আল্লাহ কয়েকজন ব্যতিত সব নবী-রাসুলকে পবিত্র কাবাঘরে হজ পালন করার নির্দেশ প্রদান করেছিলেন। কয়েকজন নবী অন্য গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে নিয়োজিত থাকায় হজ করতে পারেননি। এ প্রসঙ্গে সাহাবি হজরত উরওয়া ইবনে জুবায়ের (রা.)-এর বর্ণনাটি উল্লেখযোগ্য। তিনি বলেন, ‘সব নবীই হজপালন করেছিলেন। তবে হজরত হুদ (আ.) ও হজরত সালেহ (আ.)-এর বিষয়টি ব্যতিক্রম। স্বীয় উম্মতের ব্যস্ত থাকা অবস্থায় তাদের ইন্তেকাল হয়। হজরত নুহ (আ.) হজ করেছিলেন। কিন্তু তার সময়কালের প্লাবনে পবিত্র কাবা আক্রান্ত হয়। হজরত ইবরাহিম (আ.) পরবর্তীতে এ ঘরের পুনঃনির্মাণ করলে পরবর্তী সব নবী-রাসুল কাবাঘরের হজ করেছিলেন।’ -বায়হাকি
এ ছাড়া সাহাবি হজরত আবু মুসা আল আশয়ারি (রা.) থেকে বর্ণিত এক হাদিস প্রণিধানযোগ্য। তিনি বর্ণনা করেন, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘৭০ জন নবী ‘রাওহা’ (মক্কা ও মদিনার মধ্যবর্তী একটি অঞ্চল) অতিক্রম করেছিলেন। তাদের মধ্যে হজরত মুসা (আ.)ও ছিলেন। এ নবীরা খালি পায়ে ও আবায়া পরে আল্লাহতায়ালার প্রাচীন ঘরের (পবিত্র কাবাঘর) দিকে গমন করেছিলেন।’ -আত তারগিব ওয়াত তারহিব
লেখক : আলেম, প্রাবন্ধিক ও কলেজ শিক্ষক।