স্বাধীন ভারতে এমন ঘটনা আর হয়নি। প্রথমবারের মতো কোনো মুসলিম সাধারণ নির্বাচনের পর কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হিসেবে শপথ নেননি।
সংখ্যালঘুবিষয়ক মন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়ার তিন বছর পর, ২০২২ সালে বিজেপির মুখতার আব্বাস নকভি রাজ্যসভায় পুনঃনির্বাচিত না হওয়ায়, নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন সরকারে কোনো মুসলিম মন্ত্রী ছিলেন না। ৬৪ বছর বয়েসি এই রাজনীতিবিদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির হিন্দু জাতীয়তাবাদী ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) একমাত্র মুসলিম মন্ত্রী ছিলেন, তখন দলটির লোকসভার সদস্য ছিল প্রায় চারশ।
স্বাধীন ভারতে প্রতিটি সাধারণ নির্বাচনের পর গঠিত মন্ত্রিপরিষদে শপথ নেওয়া হয়, এদের মধ্যে অন্তত একজন মুসলিম এমপি ছিলেন।
২০১৪ সালে যখন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি প্রথমবারের মতো শপথ নেন তখন নাজমা হেপাতুল্লাহও শপথ নেন এবং সংখ্যালঘুবিষয়ক মন্ত্রী হন। ২০১৯ সালে নকভি শপথ নেন এবং তিনিও সংখ্যালঘুবিষয়ক মন্ত্রী হন।
১৯৯৯ সালে অটল বিহারী বাজপেয়ী সরকারের মন্ত্রিপরিষদে দুজন মুসলিম ছিলেন- শাহনওয়াজ হুসেন এবং ওমর আবদুল্লাহ। ১৯৯৮ সালে বাজপেয়ীর নেতৃত্বাধীন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ছিলেন নকভি।
২০০৪ এবং ২০০৯ সালে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ সরকারের মন্ত্রিপরিষদে চার এবং পাঁচজন মুসলিম এমপি ছিলেন।
এবার এনডিএ জোটের কোনো মুসলিম প্রার্থী ১৮তম লোকসভায় নির্বাচিত হননি, যদিও শুধুমাত্র একজন মুসলিম প্রার্থী বিজেপির টিকিটে কেরালার মালাপ্পুরম কেন্দ্রে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। বিহারের কিষাণগঞ্জে এনডিএ অংশীদার জেডি (ইউ) একজন মুসলিমকে প্রার্থী করেছিল কিন্তু কংগ্রেস প্রার্থীর বিরুদ্ধে জিততে ব্যর্থ হন তিনি।
১৮তম লোকসভায় মাত্র ২৪ জন মুসলিম সংসদ সদস্য রয়েছেন। তন্মধ্যে ২১ জন বিরোধী জোটের, একজন এআইএমআইএমের আসাদউদ্দিন ওয়াইসি, স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য আবদুল রশিদ শেখ এবং মোহাম্মদ হানিফা।
এবার ক্ষমতাসীন এনডিএর ২৯৩ জন সংসদ সদস্যের তালিকায় কোনো শিখ এবং খ্রিস্টান এমপি নেই। তবে অনির্বাচিত খ্রিস্টান এবং শিখ নেতাদের কেন্দ্রীয় মন্ত্রণালয়ে যুক্ত করা হয়েছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক সাবা নাকভি এ প্রসঙ্গে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) লিখেছেন, ‘যেমন তারা খ্রিস্টান এবং শিখদের প্রতিনিধি হিসেবে অনির্বাচিতদের (টেকনোক্র্যাট কোটায়) মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত করে করেছেন, মোদি সরকারের পক্ষে ভারতের জনসংখ্যার ১৪ শতাংশ মুসলিমকে অন্তর্ভুক্ত করা উচিত ছিল।’
তবে রোববার (৯ জুন) রাতে টেলিভিশনে জেডি (ইউ) এবং টিডিপি নেতারা বলেছেন, বিষয়টি নিয়ে এখনই সমালোচনা না করতে। কারণ, এটি চূড়ান্ত মন্ত্রিসভা নয়। চন্দ্রবাবু নাইডু এবং নীতীশ কুমার এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেবেন।
হিন্দু জাতীয়তাবাদী দল বিজেপি তাদের নির্বাচনি প্রচারণায় ভারতের বৃহত্তম ধর্মীয় সংখ্যালঘু মুসলমানদের বিরুদ্ধে ঘৃণামূলক নানা মন্তব্য করেছেন। এমনকী নরেন্দ্র মোদি নিজেও শতাধিক ঘৃণামূলক বক্তৃতা দিয়েছেন।
মোদির অধীনে গত ১০ বছরে মুসলিম, আদিবাসী এবং খ্রিস্টানসহ বিভিন্ন ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা হিন্দু ডানপন্থীদের দ্বারা সহিংসতার শিকার হয়েছেন। এটা নিয়ে বহির্বিশ্বে সমালোচনা শুনতে হয়েছে মোদিকে।