পবিত্র হজ পালনের জন্য সারা বিশ্ব থেকে হজযাত্রীরা সৌদি আরবের মক্কায় জড়ো হয়েছেন। নানা ভাষার, নানা বর্ণের, নানা সংস্কৃতির মানুষের সম্মিলনে মক্কা এখন বিশ্বমানবের শহর। হজের আনুষ্ঠানিকতার শেষ কাজ- বিদায়ি তাওয়াফ শেষ হাজিরা নিজ নিজ দেশে ফিরছেন, কেউ মক্কা থেকে মদিনা হয়ে দেশে ফিরবেন। সবাই মক্কাকে বিদায় জানাচ্ছেন অশ্রুসিক্ত নয়নে।
বিদায়ি তাওয়াফ ছাড়া মক্কার বাইরে থেকে আসা হাজিদের মক্কা থেকে বের হওয়া জায়েজ নয়। কারণ বাইরের লোকদের জন্য হজের বিদায়ি তাওয়াফ ওয়াজিব।
বিদায়ি তাওয়াফ অন্য তাওয়াফের মতই। তবে এ তাওয়াফ সাধারণ পোশাক পরেই করা হয়। তাওয়াফ হাজরে আসওয়াদ থেকে শুরু করতে হয়। এর সাতটি চক্করে কোনো রমল নেই, ইজতিবাও নেই। তাওয়াফ শেষ করার পর দুই রাকাত তাওয়াফের নামাজ আদায় করতে হবে। মাকামে ইবরাহিমের সামনে সম্ভব না হলে মসজিদে হারামের যেকোনো জায়গায় আদায় করা যাবে। এই তাওয়াফের পর কোন সায়ি নেই।
এই তাওয়াফ হারাম শরিফকে বিদায় দেওয়ার জন্য বিদায়ি সালামের মত। সুতরাং বায়তুল্লাহর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট তার সর্বশেষ দায়িত্ব হবে এই তাওয়াফ সম্পন্ন করা। হাদিসে এসেছে, হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘তোমাদের কেউ যেন তার সর্বশেষ কাজ বায়তুল্লাহর তাওয়াফ না করে মক্কা ত্যাগ না করে।’ -সহিহ মুসলিম : ১৩২৭
হাজিদের সর্বশেষ আমল হবে এই তাওয়াফ। এরপর আর দীর্ঘ সময় মক্কায় অবস্থান করা যাবে না। করলে পুনরায় বিদায়ি তাওয়াফ করতে হবে। তবে যদি সামান্য সময় অবস্থান করে, যেমন কোনো সঙ্গীর জন্য অপেক্ষা, খাদ্যসামগ্রী ক্রয়ের জন্য অপেক্ষা কিংবা উপহার সামগ্রীর জন্য অপেক্ষা। এ জাতীয় কোনো বিষয় হলে তাতে কোনো সমস্যা নেই। এমনিভাবে হাজি সাহেব যদি কোনো কারণে পূর্বে হজের তাওয়াফের সায়ি না করে থাকেন, তাহলে তিনি বিদায়ি তাওয়াফের পরে সায়ি করবেন। এতে কোনো অসুবিধা হবে না। কেননা এটা সামান্য সময় বলে বিবেচিত।
মঙ্গলবার (১৮ জুন) মিনায় অবস্থান করে জামারাতে পাথর নিক্ষেপের মাধ্যমে হাজিদের হজের কার্যক্রম শেষ হয়েছে।
হজের অংশ হিসেবে জিলহজ মাসের ৮ থেকে ১২ তারিখ- এই পাঁচ দিনে মিনা, আরাফাত, মুজদালিফা ও মক্কায় অবস্থান করে হজের নানাবিধ কার্যক্রম পালন করা হয়। এর মধ্যে স্থানীয় সময় গত শুক্রবার (৮ জিলহজ) মিনায় অবস্থান করেন হজযাত্রীরা।
পরদিন শনিবার (৯ জিলহজ) সেখানে ফজরের নামাজ আদায় করে আরাফাতের ময়দানে যান। সেখানে জোহর ও আসর নামাজ একসঙ্গে পড়ে সূর্যাস্ত পর্যন্ত দোয়া-মোনাজাতে মশগুল থাকেন। সূর্যাস্তের পর সবাই আরাফাত থেকে ৯ কিলোমিটার দূরে মুজদালিফার উদ্দেশে রওনা দেন। সেখানে একসঙ্গে মাগরিব ও এশার নামাজ পড়ে রাত্রিযাপন করেন। মুজদালিফা থেকে তিন জামারার জন্য তারা পাথর সংগ্রহ করেন। এরপর গত রবিবার (১০ জিলহজ) মুজদালিফা থেকে মিনায় যান।
সেখানে বড় জামারায় গিয়ে পাথর নিক্ষেপ করে কোরবানি করে মাথা ন্যাড়া করেন। এরপর ইহরামের কাপড় বদলে স্বাভাবিক পোশাক পরে মক্কায় গিয়ে কাবাঘর সাতবার তাওয়াফ ও সাফা ও মারওয়ায় সায়ি (সাতবার দৌড়ানো) করেন।
এরপর আবার মিনায় ফিরে দুই দিন বা তিন দিন (১১ থেকে ১২ বা ১৩ জিলহজ) (বড়, মধ্যম, ছোট) জামারায় সাতটি করে পাথর নিক্ষেপ করেন। এরপর মক্কায় বিদায়ি তাওয়াফ করে হজের সব কার্যক্রম সম্পন্ন করছেন বা করবেন।
হজ মহান আল্লাহর একটি বিশেষ বিধান। ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের একটি। হজ ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের একটি। আর্থিক ও শারীরিকভাবে সামর্থ্যবান সব মুসলিম পুরুষ ও নারীর ওপর জীবনে অন্তত একবার হজ করা ফরজ।
সৌদি সরকারের হিসাব অনুসারে এ বছর সর্বমোট ১৮ লাখের বেশি লোক পবিত্র হজ পালন করেন। দেশটির পরিসংখ্যান কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এবার ১৮ লাখ ৩৩ হাজার ১৬৪ জন হজ করেছেন। এর মধ্যে ১৬ লাখ ১১ হাজার ৩১০ জন বিদেশি এবং দুই লাখ ২১ হাজার ৮৫৪ জন সৌদি নাগরিক ও প্রবাসী রয়েছেন। আর পুরুষ হজযাত্রী ৯ লাখ ৫৮ হাজার ১৩৭ এবং নারী ৮ লাখ ৭৫ হাজার ২৭ জন।