শান্তিপূর্ণ সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য সবচেয়ে বড় প্রয়োজন হলো- ইনসাফ প্রতিষ্ঠা। ইনসাফ মানে ন্যায়বিচার। ইনসাফের দাবি হলো, কেউ যেন অন্যায়ভাবে জুলুমের শিকার না হয়। সমাজে ও দেশে ইনসাফ প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব সরকার ও জনগণ সবার।
পারিবারিক জীবনেও যদি ইনসাফ না থাকে, তাহলে সেখানেও অশান্তির আগুন জ্বলে ওঠে। আজকের বিশ্বে ব্যাপক হিংসা ও হানাহানির অন্যতম প্রধান কারণ হলো ইনসাফ না থাকা।
ইনসাফ ও ন্যায়নীতি প্রতিষ্ঠার প্রধান প্রতিবন্ধকতা হিসেবে মহান আল্লাহ দুটি বিষয় উল্লেখ করেছেন- অন্ধ আত্মীয়তা ও দলীয়তা বা দলীয়করণ। যদিও আত্মীয়তা ও দলীয়তা থেকে মুক্ত হওয়া কোনো মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়।
কেননা মানুষ সমাজবদ্ধ জীব। তারা পরস্পর যেমন আত্মীয়তার বন্ধনে আবদ্ধ, তেমনি নানা কারণে দল গঠন করাও তার স্বভাবজাত। এ দুটির ভালো দিককে ইসলাম সর্বদা উৎসাহিত করেছে। কিন্তু খারাপ দিককে নিন্দা করেছে।
অন্ধভাবে আত্মীয়দের প্রাধান্য দেওয়া হলো স্বজনপ্রীতি। প্রত্যেক কাজে স্বজনদের অগ্রাধিকার দেওয়াকে স্বজনপ্রীতি বলে। এটা ইসলামে নিষিদ্ধ। স্বজনপ্রীতি নিষিদ্ধ করে মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে বলেন, ‘হে মুমিনরা! তোমরা ন্যায়বিচারে সুদৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত থাকবে- আল্লাহর সাক্ষীস্বরূপ; যদিও তা তোমাদের নিজেদের বা মা-বাবা এবং আত্মীয়স্বজনের বিরুদ্ধে হয়। সে বিত্তবান হোক বা বিত্তহীন হোক- আল্লাহ উভয়েরই ঘনিষ্ঠতর।’ -সুরা নিসা : ১৩৫
দলীয়করণ নিষিদ্ধ করে মহান আল্লাহ বলেন, ‘কোনো সম্প্রদায়ের প্রতি শত্রুতা যেন তোমাদের ন্যায়বিচার বর্জনে প্ররোচিত না করে। তোমরা সুবিচার করবে, এটা তাকওয়ার বেশি নিকটবর্তী।’ -সুরা মায়েদা : ৮
স্বজনপ্রীতি সমাজ নষ্ট করার বড় একটি মাধ্যম। ইসলামে স্বজনপ্রীতি মোটেও প্রশ্রয় দেওয়া হয়নি। ইনসাফহীনতা থেকেই স্বজনপ্রীতি তৈরি হয়। ইনসাফহীন সমাজ ক্রমান্বয়ে বর্বর হতে থাকে। সমাজের উঁচু শ্রেণির মানুষ থেকে যখন অনাচার-অবিচার প্রকাশ পায়, তখন তা ছড়িয়ে পড়ে অধীনদের মধ্যে। নবী কারিম (সা.) এ ক্ষেত্রে শক্ত ভূমিকা পালন করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘বনি ইসরাইল তাদের গণ্যমান্য পরিবারের কেউ চুরি করলে তাকে ছেড়ে দিত এবং দুর্বল কেউ চুরি করলে তারা তার হাত কেটে দিত। আল্লাহর শপথ, ফাতেমা (রা.) (যদি চুরি করে) আমি তার হাত কেটে ফেলব।’ -সহিহ বোখারি : ৩৭৩৩
সুবিচার না থাকলে একটি সমাজ, একটি দেশ টিকে থাকতে পারে না। ন্যায়পরায়ণতা না থাকলে কেউ সুখে-শান্তিতে থাকতে পারে না। ইনসাফ না থাকলে কোথাও শৃঙ্খলা ও স্থিতিশীলতা থাকে না। তাই ইসলাম সব ধরনের স্বজনপ্রীতি পরিহার করতে বলেছে।
হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি স্বজনপ্রীতির প্রতি লোকদের ডাকে, নিজেও স্বজনপ্রীতি করতে গিয়ে যুদ্ধ করে এবং স্বজনপ্রীতির সমর্থনে মারা যায়, সে ব্যক্তি আমাদের দলভুক্ত নয়।’ -সুনানে আবু দাউদ : ৫১২১