সৃষ্টিকর্তা দয়াময় আল্লাহতায়ালা আমাদের দেশকে কতই না সম্পদ দিয়েছেন। সবচেয়ে বড় সম্পদ জনসম্পদ। দ্বিতীয় হলো- মাটি, পানি, পাহাড়-পর্বত, নদী-নালা, গাছপালাসমৃদ্ধ জন্মভূমি। আমরা এত সম্পদ পেয়েও দেশকে উন্নতি-অগ্রগতির শিখরে নিতে পারছি না শুধুমাত্র চলার পথে নিয়মনীতির অবহেলার কারণে। কোনো ক্ষেত্রেই ছোট-বড়, ধনী-গরিব, রিকশাওয়ালা, পান বিক্রেতা থেকে উড়োজাহাজ বিক্রেতা কেউই নিয়মের আওতায় আসছি না, এ বিষয়ে আলাদা করে কিংবা বিশেষ কোনো দিক নিয়ে বলার কিছু নেই।
আমরা আল্লাহতায়ালায় বিশ্বাসীরা কীভাবে ভুলে যাই, আমাদের যাবতীয় কর্মকাণ্ড প্রতিনিয়ত, প্রতিটি পদক্ষেপ মহান আল্লাহ প্রত্যক্ষ করছেন। অন্যদিকে প্রত্যেক মানুষের পাপ-পূণ্য লেখার জন্য দুজন ফেরেশতা নিয়োজিত রয়েছেন। তাদেরকে বলা হয় কিরামান কাতিবিন তথা সম্মানিত লেখকবৃন্দ, তাদের লেখায় কোনোকিছুই বাদ যায় না।
দুনিয়ায় কমবেশি ফাঁকি দিতে পারলেও আখেরাতে চুল পরিমাণ কোনো কিছুই গোপন করা যাবে না। কৃতকাজের শাস্তি অবশ্যই পেতে হবে, কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। ভালোর জন্য ভালো, আর মন্দের জন্য মন্দ ফল ভোগ করতে হবে।
প্রত্যেককে মনে রাখতে হবে, মহান আল্লাহর কাছে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। প্রত্যেককেই জবাবদিহি করতে হবে। তাই বলতে চাই, যার যা খুশি তাই করে দেশকে ক্ষতির মধ্যে ফেলে নিজেও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, অন্যকেও ক্ষতির দিকেই নিয়ে যাচ্ছেন। এখনই সাবধান হওয়া বুদ্ধিমানের পরিচয়। আমাদের দেশের সাধারণ মানুষ অত্যন্ত দেশপ্রেমিক এবং সবাইকে নিয়ে বসবাসে অভ্যস্ত। সবাই মিলে দেশটাকে উন্নতির শিখরে নিতে চাই। এ জন্য যার যার অবস্থান থেকে ভূমিকা রাখতে হবে।
উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, দেশের রাস্তাঘাট যেন অনিয়মের ফাঁদ। প্রতি বছর হাজার হাজার লোক সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যায়। গাড়িচালকদের অসচেতনতায় দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। আমরা যদি চালকদের মাঝে সচেতনতা বাড়াতে পারি, জনগণকে সচেতন করতে পারি; তবে রাস্তায় এত দুর্ঘটনা ঘটবে না। বিশেষ করে ড্রাইভিং লাইসেন্স দেওয়া এবং নবায়নের সময় গাড়ি চালানোর নিয়ম-কাননের পরীক্ষা দুর্নীতিমুক্ত করা গেলে ভালো হয়। প্রত্যেকেই নিয়ম মেনে চললে গাড়ি দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব। পানি, রেল ও বিমান পথেও সচেতনতা ও নিয়মনীতি মেনে চললে দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব।
এবার আসি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় শিক্ষা বিভাগ নিয়ে। শিক্ষা বিভাগে অনিয়মের শেষ নেই। পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের মতো অপকর্ম সমাজে দেদারছে চলছে। শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড। এখানে যদি অনিয়ম হয়, তবে জাতিকে ভালো পথে নেওয়া সম্ভব হবে না। প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনা জাতির জন্য লজ্জাজনক, দুর্ভাগ্যজনক ও পরিতাজ্য। এ ঘটনাসহ শিক্ষা বিভাগের সব দুর্নীতির তদন্ত করে দৃষ্টান্তমূলক সাজা দিতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। সচেতন নাগরিকদের নৈতিক মান ও আত্মনির্ভরশীল জাতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে হবে। হীনম্মন্যতায় ভোগা যাবে না। যার যার অধিকার, তা পালনের মধ্যেই দেশ ও জাতির কল্যাণ নিহিত।
চিকিৎসা ক্ষেত্রে দেশ অনেক এগিয়ে গেছে। বিদেশে চিকিৎসা নেওয়ার প্রয়োজন নেই বিশেষ কারণ ছাড়া। দেশের প্রতি ভালোবাসা ও দেশের প্রতি মায়া-মহব্বত নিয়ে চলতে হবে। সরকারের উচিত, ব্যবস্থাপনায় কোনো ঘাটতি থাকলে তা দূর করা। দেশের অনেক জায়গায় চিকিৎসার যন্ত্রপাতি অযত্ন-অব্যবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা যায়। গ্রামাঞ্চলে চিকিৎসকরা থাকতে চান না। অনেকে আবার চিকিৎসা সংক্রান্ত নানা অনিয়মে জড়িত। এগুলো কাম্য নয়। নিয়মনীতির যথাযথ ব্যবহার করে চিকিৎসা ক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তন ও স্বয়ংসম্পূর্ণ করতে হবে।
সরকারি কাজের দায়বদ্ধতা খুবই জরুরি। সরকারি কাজের ব্যয় দীর্ঘসূত্রতার কারণে বেড়ে যায়, এটা কাম্য নয়। দেশের টাকা হালালভাবে যদি কর্মকর্তারা আয়-ব্যয় করে, তবে সবার জন্যই লাভ।
আল্লাহতায়ালার মেহেরবানিতে গত ৫৪ বছরে দেশ অনেক এগিয়েছে। এ সময়ে দেশের স্কুল-কলেজ, কল-কারখানা, শিল্পপ্রতিষ্ঠান, মসজিদ-মাদরাসা, বিশ্ববিদ্যালয়, ব্যাংক-বিমা, ক্লিনিক, হাসপাতাল, মিডিয়াজগৎসহ সমাজে বহু প্রতিষ্ঠান শহর থেকে গ্রামে গড়ে উঠেছে সৎ লোকদের দ্বারা।
তাই বলতে চাই, কারো ওপর নির্ভর করে নয়; আল্লাহর রহমতে সৎ ও যোগ্য লোকদের সমন্বয়ে দেশকে গড়তে এবং মানুষের যাবতীয় অধিকার আদায়ে আমাদেরই ভূমিকা রাখতে হবে। জনগণ এ ৫৪ বছরে আমাদের সততা, যোগ্যতা যাচাই-বাছাই করার সুযোগ পেয়েছে। তাদের আশ্বস্ত করতে পারলে এ দেশ আমাদের হাতেই এগিয়ে যাবে- ইনশাআল্লাহ। সরকারি ও বেসরকারিভাবে চুরি-চামারি না করে সৎপথে দেশ চালানোর ব্যবস্থা করতে উদ্যোগী হতে হবে। এজন্য দরকার মজবুত ঈমান, সাহস আর জনগণকে সঙ্গে নিয়ে তাদের অধিকার আদায়ে দৃঢ় পদক্ষেপ নেওয়া।
সুতরাং আর অনিয়ম আর ফাঁকিবাজি নয়। সবাই মিলে দেশটাকে জান্নাতের বাগিচার আদলে গড়ে তোলার আপ্রাণ চেষ্টা করলে মহান আল্লাহর সাহায্য আসতে দেরি হবে না। কোরআন মাজিদের ভাষায়, ‘তোমরাই বিজয়ী হবে যদি তোমরা ঈমানদার হও।’ আমরা সৎ, যোগ্য ও মুমিন লোকের অপেক্ষায় রইলাম।
লেখক : শিক্ষক ও ইসলামবিষয়ক গবেষক।