নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার চাপিলা শাহী মসজিদ ‘গায়েবি মসজিদ’ নামেও পরিচিত। কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা মসজিদটি কয়েকশ বছরের পুরোনো। মুঘল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য মসজিদটি স্থাপন করেছিলেন মুনশি এনায়েতউল্লাহ।
ইতিহাসের ধারাক্রমে জানা যায়, চাপিলা একসময় ছিল মুঘলদের প্রশাসনিক কেন্দ্র। মুঘল শাসনামলে বাদশাহ শাহজাহানের ছেলে সুজা বাংলার গভর্নর নিযুক্ত হন। সে সময় চাপিলা গ্রামে মুঘল সেনাদের ফাঁড়ি ছিল। মানুষেরও বসবাস ছিল চাপিলায়। সে সময় নামাজের জন্য এখানে তৈরি করা হয় এ মসজিদ। তবে কলেরায় অনেকের মৃত্যু হলে মুঘল সেনাসহ এলাকার বাসিন্দারা অন্যত্র চলে যায়। কালক্রমে ধ্বংস হয় চাপিলা নগরী। তারপর বহুদিন লোকচক্ষুর আড়ালে ছিল এ অঞ্চল। হয়ে পড়েছিল জঙ্গলাকীর্ণ।
১৯৪৭-এর পর এ এলাকায় নতুন করে বসতি গড়তে থাকে মুর্শিদাবাদ, ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত মানুষ। সে সময়ই জঙ্গল পরিষ্কারের সময় এলাকার মানুষ খুঁজে পায় মসজিদটি। অপরূপ সৌন্দর্যের এ মসজিদটির নাম ‘বৃ-চাপিলা শাহি জামে বড় মসজিদ।’ তবে দীর্ঘ সময় মসজিদটি জঙ্গলে ঢেকে ছিল। সে সময়ই লোকমুখে রটে যায়, এক রাতের মধ্যে নির্মিত হয়েছে মসজিদটি; যা থেকে কালক্রমে গায়েবি মসজিদ নামটি ছড়িয়ে পড়ে।
ইট-সুরকি দিয়ে তৈরি ৪০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ২০ ফুট প্রস্থের মসজিদটির দেয়ালের প্রস্থ ৪ ফুটের মতো। দূরদূরান্ত থেকে মানুষ আসে মসজিদটি দেখতে। ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা এখানে নামাজ আদায় করে। প্রায় চারশ বছরের পুরোনো মসজিদটি সংস্কার করে বর্ধিত অংশে আধুনিকতার ছাপ আনা হয়েছে। তবে কিছু অংশে রেখে দেওয়া হয়েছে পুরোনো নকশা ও কারুকাজ।
প্রতিদিন অনেক মানুষ মানতের হাঁস, মুরগি, কবুতর ও ডিম থেকে শুরু করে নতুন ফসল ইত্যাদি মসজিদে নিয়ে আসেন। পরে নিলামে বিক্রি করে দেওয়া হয় মুসল্লিদের মাঝে।
ঐতিহ্যবাহী এই মসজিদে প্রতিদিন শত শত মুসল্লি নামাজ পড়তে আসেন। পাশাপাশি জুমার দিনে নারীসহ হাজারো মুসল্লির সমাগম ঘটে। মূল মসজিদের পাশে নারীদের নামাজের জন্য আলাদ ব্যবস্থা করা হয়েছে।
এলাকাবাসী মনে করে, যথাযথ প্রচার এবং পুরাকীর্তি হিসেবে সংরক্ষণ করা হলে মসজিদটি ঘিরে গড়ে উঠতে পারে পর্যটনকেন্দ্র।