দুনিয়াটা হলো ধোঁকার বস্তু। আল্লাহতায়ালা কোরআন মাজিদে একাধিকবার দুনিয়াকে ধোঁকার বস্তু বলেছেন। আল্লাহতায়ালার দেওয়া শক্তি-সামর্থ্য, সময় দুনিয়া অর্জনের পেছনে নিঃশেষ করে খালি হাতে মৃতের খটিয়ায় ওঠা কত বড় ধোঁকার জীবন, তা তো বলার প্রয়োজন নেই।
দুনিয়ার ধোঁকার আরেক বস্তু হলো আত্মপ্রচারের নেশা। যে আমল দ্বারা দয়াময় আল্লাহতায়ালাকে পেতাম, যে আমল দ্বারা জান্নাত পেতাম, সে আমল দ্বারা আল্লাহ ও জান্নাত না নিয়ে মানুষের প্রশংসা নিলাম; এর চেয়ে অজ্ঞতা ও ধোঁকার বিষয় কী হতে পারে? আর এজন্য বরাদ্দকৃত শাস্তি তো আছেই।
আচ্ছা, আমাকে যদি পৃথিবীর সব মানুষ চেনে, তাতে আমার কী লাভ? তাতে কি আমার সব পেরেশানি দূর হয়ে যাবে? শরীর সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে যাবে? আমি দুনিয়া-আখেরাতে সফল হয়ে যাব? একটু চিন্তা করি, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যা পোস্ট করার কারণে আমি ফেমাস হয়ে গেলাম, তা পোস্ট করার আগের দিন আমি যে মানুষটি ছিলাম, পরের দিনও তো সে মানুষটিই আছি। আমার নিজের মধ্যে কী পরিবর্তন এসে গেল? হ্যাঁ, শুধু এতুটুকু হলো যে, এখন আমাকে বা আমার কাজটি মানুষ জানছে। আল্লাহ ও জান্নাত বাদ দিয়ে মানুষের কমেন্ট নিচ্ছি, এতে নিজের মহামূল্যবান সম্পদ জান্নাত নিজেই নষ্ট করছি, বদলায় নিচ্ছি মানুষের সাময়িক প্রশংসা, যার দু-পয়সাও মূল্য নেই।
একদিন গ্রামের এক সহজ-সরল লোক খুব চমৎকার বললেন। তিনি বললেন, ভাই, মানুষ আমাকে চিনলে আমার কী ফায়দা হবে? এর দ্বারা কি দুই টাকার মরিচ কিনতে পারব?
খোদ হাতেম তায়ির কথাই যদি চিন্তা করি, নিজের এত সহায়-সম্পত্তি নিজে না রেখে, সন্তান-সন্ততির জন্য না রেখে আত্মপ্রসিদ্ধি ও মানুষের প্রশংসার জন্য নিঃশেষ করেছে, কিন্তু তার সে জগৎজোড়া প্রসিদ্ধি তার ও তার পরিবারের দু-পয়সার কাজে আসছে? আমরা তার নামে প্রবাদ তৈরি করছি, আর সে জাহান্নামে জ্বলে জ্বলে মরছে।
ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল (রহ.) তার ‘কিতাবুয-যুহদ’-এ সালেহ ইবনে খালিদ হতে বর্ণনা করেন, ‘যখন তুমি কোনো নেককাজ করার ইচ্ছা করো, তখন মানুষকে গরুর স্তরে রাখবে। বাকি তাদেরকে তুচ্ছ ভাববে না।’
অর্থাৎ মানুষ কি কোনো নেককাজ করতে গিয়ে গরুর প্রতি লক্ষ রেখে করে যে, গরু আমাকে দেখছে, কি দেখছে না? গরু থাকে গরুর জায়গায় আর মানুষ থাকে মানুষের জায়গায়। মানুষ আপন গতিতে তার কাজ করে যায়। তেমনিভাবে মানুষ কি গরু-ছাগলের প্রশংসা কুড়ানোর কথা কোনোদিন চিন্তা করে! সারা পৃথিবীর সব গরু মিলে যদি কারো প্রশংসা করে, এতে কি সে কোনো ধরনের আনন্দ অনুভব করবে, নাকি নিজের জন্য এটা লজ্জাজনক মনে করবে?
ঠিক তেমনিভাবে কোনো নেক কাজ করতে গিয়ে এ কৌশল অবলম্বন করলে মানুষের প্রশংসা কুড়ানোর কোনো চিন্তাই আসবে না।
সালেহ ইবনে খালেদের বক্তব্যে আত্মপ্রসিদ্ধির হাকিকত ও বাস্তবতা যেমন ফুটে উঠেছে, সেই সঙ্গে তার থেকে বাঁচার উপায়ও বের হয়েছে। অর্থাৎ কোনো নেক আমল করতে গেলে মানুষের প্রশংসাকে এমন প্রাণীর প্রশংসা মনে করলে আর আত্মপ্রসিদ্ধির কামনা আসবে না- ইনশাআল্লাহ।