দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের জেলাগুলোতে ভয়াবহ বন্যা দেখা দিয়েছে। বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে লাখ লাখ মানুষের বাড়িঘর, ফসলি ক্ষেত ইত্যাদি। বন্যা সবচেয়ে ভয়ংকর রূপ ধারণ করেছে ফেনী জেলায়। কোথাও দাঁড়ানোর মত জায়গা পাওয়া যাচ্ছে না। চারদিকে পানি আর পানি। এছাড়া চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, নোয়াখালী, সিলেট, মৌলভীবাজার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, লক্ষ্মীপুর, খাগড়াছড়ি এবং কক্সবাজার জেলাও বন্যাকবলিত হয়েছে।
বাংলাদেশের মানুষের রয়েছে সংগ্রামের উজ্জ্বল ইতিহাস। স্মরণকালের এই ভয়াবহ বন্যায়ও মানুষের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে মানুষ। সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে সর্বস্তরের মানুষ। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে ট্রাকে করে নৌকা-স্পিডবোট নিয়ে বন্যাপ্লাবিত এলাকার মানুষদের উদ্ধারে যাচ্ছেন স্বেচ্ছাসেবকরা। অনেকে কাভার্ড ভ্যান, ট্রাক, পিকআপ ভরে নিয়ে যাচ্ছেন শুকনো খাবার, জরুরি ওষুধ, নিরাপদ পানি ও চাল-ডাল। অনেক জায়গায় বন্যার্তদের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে নগদ অর্থ। আবার বন্যার্তদের জন্য অনেক সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার কর্মকর্তা-কর্মচারিরা দান করেছেন তাদের একদিনের বেতন। সারাদেশের মানুষ তাদের সামর্থ্য নিয়ে এগিয়ে এসেছেন বানভাসি মানুষদের পাশে।
চলমান বন্যা পরিস্থিতিতে বসে নেই দেশের আলেম সমাজ। তারা বিভিন্ন খাদ্যসামগ্রী, জরুরি পণ্য, জামা-কাপড় ও ওষুধসহ প্রয়োজনীয় সামগ্রী নিয়ে দুর্গতদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। দিচ্ছেন আর্থিক সাহায্যও। আলেমদের বিভিন্ন সেবা সংস্থা, সংগঠন এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশন
বন্যাদুর্গতদের মাঝে আলেমদের বেশকিছু সেবা সংস্থা সহায়তার কাজ করে যাচ্ছে। এ সংস্থাগুলোর মধ্যে রয়েছে স্বনামধন্য সেবা সংস্থা ‘আসসুন্নাহ ফাউন্ডেশন।’ ফাউন্ডেশনটির ত্রাণ তৎপরতা চোখে পড়ার মতো। মানুষের পাশাপাশি গো-খাদ্য বিতরণ করছেন এ সংস্থার কর্মীরা।
আস সুন্নাহ ফাউন্ডেশন দুর্গম এলাকায় ত্রাণ পৌঁছানোর ক্ষেত্রে বেশি মনোযোগ দিচ্ছে। সংস্থার স্বেচ্ছাসেবকরা জানান, ধর্মবর্ণ নির্বিশেষে সবাইকে আমরা ত্রাণ দিচ্ছি। ত্রাণ বিতরণকালে শায়খ আহমাদুল্লাহ বন্যাদুর্গত ব্যক্তিদের শারীরিক অবস্থার খোঁজ নেওয়াসহ ক্ষতিগ্রস্থ ঘর-বাড়ির অবস্থা জিজ্ঞেস করে ঘর মেরামত করার টাকাও দেবেন বলে আশ্বাস দেন।
ত্রাণ প্রদান বিষয়ে তিনি জানান, শুকনা ও ভারী ত্রাণসামগ্রীর ব্যবস্থা করছি আমরা। চাল, তেল, খেজুর, চিড়া, ডাল, লবণ, চিনি, পানির বোতল, পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট, মোমবাতি ও দিয়াশলাই ইত্যাদি দিয়ে আমরা প্যাকেট করে বিতরণ করছি।
আল-মারকাযুল ইসলামী
বরাবরের মত এগিয়ে এসেছে দেশের অন্যতম সেবাসংস্থা আল-মারকাযুল ইসলামী। সংস্থাটি জানায়, ‘বরারের মতো এবারও বন্যা কবলিতদের পাশে আছে আল-মারকাজুল ইসলামী। ইতোমধ্যে আমাদের টিম বন্যা কবলিত এলাকায় অবস্থান করে ভারী খাবারের প্যাকেট বিতরণ করছে।
হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ
হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের পক্ষ থেকে কয়েক দফায় কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ ত্রাণসামগ্রী নিয়ে বন্যাকবলিত এলাকায় সফর করেছেন। তাদের ত্রাণ তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে।
তাকওয়া ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ
মাওলানা গাজী ইয়াকুব প্রতিষ্ঠিত তাকওয়া ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ বন্যা দুর্গতদের পাশে ছুটে চলেছে। ইতোমধ্যে ইঞ্জিনচালিত বোর্ডে আটকে থাকাদের উদ্ধার শেষে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ শুরু করেছেন।
গাজী ইয়াকুব জানান, রোববার (২৫ আগস্ট) কুমিল্লার বুড়িচং, মনোহরগঞ্জ, মুরাদনগর এবং নোয়াখালীর চৌমুহনীতে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ খেলাফত যুব মজলিস
মাওলানা মামুনুল হকের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ খেলাফত যুব মজলিস বন্যদুর্গত মানুষের সেবায় উদ্যোগী ভূমিকা নিয়েছে। সংগঠন সূত্রে জানা গেছে, যুব মজলিশ দুর্গত এলাকায় ক্যাম্প করে ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা করবে।
সংগঠনের সভাপতি মাওলানা মামুনুল হক জানিয়েছেন, ‘আমাদের সামর্থের আলোকে ত্রাণতৎপরতা পরিচালনার উদ্যোগ নিয়েছি। রোববার (২৫ আগস্ট) ফেনীর সালাহুদ্দীন মোড়ের কাছে আলীমুদ্দীনে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস ও সহযোগী সংগঠন যুব মজলিসের ত্রাণতৎপরতা চালাচ্ছে। সেখান থেকে রান্না করা খাবার বিতরণ করা হচ্ছে। তিনি আশা করেন, বিভিন্ন আশ্রয়শিবির ও কাছে-দূরের দুর্গত মানুষের দোরগোরায় খাবার পরিবেশনের কাজ চলমান থাকবে। সেই সঙ্গে পানি সরে যাওয়া এলাকায় মানুষের নিকট প্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্য সরবরাহের কার্যক্রমও শুরু করা হবে।
মাওলানা খালিদ সাইফুল্লাহ আইয়ুবীর উদ্যোগ
বিশিষ্ট মুফাসসিরে কোরআন ও মারকাযুত তারবিয়ার প্রিন্সিপাল মাওলানা খালিদ সাইফুল্লাহ আইয়ুবী বন্যাদুর্গতদের পাশে দাঁড়াতে আহ্বান জানিয়েছেন। সেই সঙ্গে তাকওয়া ফাউন্ডেশনসহ বিভিন্ন সংগঠনের মাধ্যমে আর্থিক সহায়তা করছেন।
দুর্গত মানুষের কাছে ত্রাণ পৌঁছে দিতে রোববার (২৫ আগস্ট) কুমিল্লায় উপস্থিত হয়ে সরজমিনে ত্রাণ তৎপরতা পরিচালনা করেন। এ সময় তিনি কুমিল্লার বুড়িচং, মনোহরগঞ্জ, মুরাদনগর এবং নোয়াখালীর চৌমুহনীতে স্বেচ্ছাসেবকসহ ত্রাণ সামগ্রী পাঠান।
এ ছাড়া ছদর ছাহেব হুজুর রহ. ফাউন্ডশন, গোপালগঞ্জের গওহরডাঙ্গা মাদরাসা, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলাম, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ, হাফিজ্জি চ্যারিটেবল সোসাইটি অব বাংলাদেশ, হাফেজ্জী হুজুর রহ. সেবা ফাউন্ডেশন, ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশ, ফী সাবীলিল্লাহ ফাউন্ডেশন, পিপলস ইমপ্রুভমেন্ট সোসাইটি অফ বাংলাদেশ (পিসব), ইসলামী ছাত্র মজলিস, মারকাযুল ফুরকান শিক্ষা পরিবার, জাতীয় ওলামা মাশায়েখ আইম্মা পরিষদ, শাইখুল হাদীস পরিষদ, রাহমাতুল্লিল আলামিন ফাউন্ডেশন, আল খলীল এডু্েকশন এন্ড কালচারাল সেন্টার, বরুণা মাদরাসা, লক্ষ্মীপুর আলোর দিশারী ফাউন্ডেশন, আল-কাসেম ফাউন্ডেশন ও সাদাকাহ ফাউন্ডেশনসহ আলেমদের পরিচালিত আরও অনেক সেবা সংস্থা, রাজনৈতিক সংগঠন ও একক উদ্যোগে বানভাসি মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছে আলেম সমাজ।