হজ ও উমরাযাত্রীর ছদ্মবেশে সৌদি আরবে বিপুল পরিমাণ পাকিস্তানি ভিড় জমাচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে এরই মধ্যে পাকিস্তানকে কড়া বার্তা দিয়েছে সৌদি আরব। রিয়াদ ইসলামাবাদকে পাকিস্তানি ভিক্ষুকদের সৌদি আরবে ঢোকা রোধ করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে অনুরোধ জানিয়েছে।
পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম এক্সপ্রেস ট্রিবিউনের প্রতিবেদনে দেশটির ধর্ম মন্ত্রণালয়ের এক সূত্রের বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, সৌদি আরব কর্তৃপক্ষ সতর্ক করে বলেছে, এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে তা পাকিস্তানি উমরা ও হজযাত্রীদের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সৌদি আরবের হজ মন্ত্রণালয় পাকিস্তানের ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়কে সতর্ক করেছে এবং পাকিস্তানি ভিক্ষুকদের উমরা ভিসার আওতায় দেশটিতে প্রবেশে বাধা দিতে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
প্রতিক্রিয়ায় পাকিস্তানের ধর্ম মন্ত্রণালয় নতুন করে ‘উমরা আইন’ প্রবর্তনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যার লক্ষ্য উমরা ভ্রমণের সুবিধা দেওয়া ট্রাভেল এজেন্সিগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করা এবং তাদের আইনি তত্ত্বাবধানে আনা।
এর আগে পাকিস্তানে নিযুক্ত সৌদি রাষ্ট্রদূত নাওয়াফ বিন সাইদ আহমেদ আল-মালকির সঙ্গে বৈঠকের সময় দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহসিন নাকভি তাকে আশ্বস্ত করেছিলেন যে সৌদি আরবে ভিক্ষুক পাঠানোর জন্য দায়ী মাফিয়ার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তিনি জানান, কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা ফেডারেল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সিকে (এফআইএ) এই নেটওয়ার্ক সমূলে উৎপাটনের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
গত বছর পাকিস্তানের তৎকালীন পররাষ্ট্রসচিব জিশান খানজাদা বলেছিলেন, পাকিস্তানি ভিক্ষুকেরা উমরার আড়ালে মধ্যপ্রাচ্যে যাতায়াত করছে। তিনি জানান, বেশির ভাগ মানুষই উমরা ভিসায় সৌদি আরবে যান এবং তারপর ভিক্ষা-সম্পর্কিত কার্যকলাপে লিপ্ত হন।
পাকিস্তানের প্রবাসী কল্যাণসংক্রান্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব আরশাদ মাহমুদ গত বছর জানান, বেশ কয়েকটি উপসাগরীয় দেশ সেসব দেশে থাকা পাকিস্তানিদের আচরণের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
উল্লেখ্য, পাকিস্তানের প্রবাসী পাকিস্তানি ও মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রণালয়ের মতে, বিভিন্ন দেশে আটক হওয়া ভিক্ষুকদের মধ্যে ৯০ শতাংশই পাকিস্তানের। পবিত্র নগরী মক্কায় পকেটমার যারা ধরা পড়ে, তাদেরও বড় অংশ পাকিস্তানের।
এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিদেশগামী পাকিস্তানি ভিক্ষুকদের প্রাথমিক গন্তব্য সৌদি আরব। এরপর ইরান ও ইরাক। এখন তাদের নতুন পছন্দ জাপান।
ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ২০২৩ সাল পর্যন্ত আড়াই বছরে সৌদি আরবের মতো দেশ থেকে পাকিস্তান সরকার ৪৪ হাজার ভিক্ষুককে ফিরিয়ে এনেছে। ভিক্ষা করতে গিয়ে চিহ্নিত হয়েছে এমন নাগরিকদের কম্পিউটারাইজড ন্যাশনাল আইডেনটিটি কার্ড ব্লক করে দেওয়া হয়েছে। দুই হাজার চিহ্নিত ভিক্ষুকের পাসপোর্ট সাত বছরের জন্য স্থগিত করা হয়েছে।
এদিকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ভিক্ষাবৃত্তির জন্য হজকে ব্যবহারের ক্ষেত্রে সতর্ক করেছে সৌদি আরবের পাবলিক প্রসিকিউশন। ভিক্ষাবৃত্তিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে এমন কাজের জন্য শাস্তির ঘোষণা দেওয়া হয়েছে প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে।
ঘোষণায় বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি যদি ভিক্ষাবৃত্তির সঙ্গে জড়িত থাকে বা অন্যকে প্ররোচিত করে তাকে বাংলাদেশি টাকার ১২ লাখ টাকার (৫০ হাজার রিয়াল) বেশি জরিমানা গুণতে হবে। এছাড়া
৬ মাস পর্যন্ত কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে।
আবার কোনো ব্যক্তি যদি ভিক্ষুকদের পরিচালনা করে এবং অন্যদের ভিক্ষা দলভুক্ত হয়ে ভিক্ষাবৃত্তি করতে প্ররোচিত করে, তাহলে তাকে বাংলাদেশি টাকায় ২৪ লাখ টাকা (১ লাখ রিয়াল) এবং ১ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে।
ভিক্ষাবৃত্তির জন্য এ শাস্তি সৌদি নাগরিক এবং যারা সৌদি নাগরিক নন উভয়ের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।