ভাষা মানুষের সৃষ্টিগত এক মৌলিক অধিকার, যা সে অর্জন করেছে সৃষ্টিকর্তা আল্লাতায়ালার কাছ থেকে অমূল্য উপহার হিসেবে। শ্রেষ্ঠত্বের মানদণ্ডে ভাষা ব্যাবহারের বিচারে মানুষের মধ্যে দুই স্তরের মানব প্রজাতির সন্ধান পাওয়া যায়। একটি উচ্চ স্তর, অন্যটি নিম্ন স্তর।
সাদা আর কালো যেমন সমান হতে পারে না, রাত এবং দিন যেমন এক হতে পারে না। তেমনি ভালো কথা এবং মন্দ কথা কখনও সমান হতে পারে না। পবিত্র কোরআনে এ প্রসঙ্গে ইরশাদ হয়েছে, ‘সমান নয় ভালো ও মন্দ। জবাবে তাই বলুন, যা উৎকৃষ্ট। তখন দেখবেন আপনার সঙ্গে যে ব্যক্তির শত্রুতা রয়েছে, সে যেন অন্তরঙ্গ বন্ধু।’ -সূরা হামিম আস সাজদা: ৩৪
যার ভাষা সুন্দর, উন্নত, অর্থপূর্ণ- তিনি পৌঁছে যান মানুষের মধ্যে সর্বোচ্চ স্তরে। এ বিষয়ে আল্লাহতায়ালার ঘোষণা, ‘তুমি কি লক্ষ্য করো না, আল্লাহতায়ালা কেমন উপমা বর্ণনা করেছেন। পবিত্র বাক্য হলো- পবিত্র বৃক্ষের মতো। তার শিকড় মজবুত এবং শাখা আকাশে উত্থিত।’ -সূরা ইবরাহিম: ২৪
সুতরাং আমাদের সুন্দর কথার অভ্যাস করতে হবে। অনুশীলন করতে হবে মিষ্টি কথার। তবেই শ্রেষ্ঠ জীব হিসেবে আল্লাহ প্রদত্ত পুরস্কারের যথাযথ হক আদায় করা সম্ভম হবে। মানুষ হিসেবে নিজেকে পৌঁছানো যাবে এক অনন্য উচ্চতায়।
অপরদিকে মন্দ কথা, খারাপ কথা, বাজে কথা, অপ্রয়োজনীয় কথা কিংবা অর্থহীন কথা মানুষকে নামিয়ে দেয় সর্বনিম্ন স্তরে। সমাজের সবচেয়ে নিকৃষ্ট জীব হিসেবে সে পরিগণিত হয়। জীবিত থেকেও সে তখন সামাজিক জাহান্নামের আজাব ভোগ করতে থাকে। এ প্রসঙ্গে কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘এবং নোংরা ব্যাক্যের উদাহরণ হল নোংরা বৃক্ষ। একে মাটির ওপর থেকে উপড়ে নেওয়া হয়েছে, এর কোনো স্থিতি নেই।’ -সূরা ইবরাহিম: ২৬
তাই মন্দ কথা রোধকল্পে কথার তথা ভাষার উদগাতা মহান মালিকের পক্ষ থেকে ঐশী কিতাবের মাধ্যমে সুস্পষ্ট নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। ওই নিষেধাজ্ঞাগুলো হলো-
এক. নম্র কথা বলে দেওয়া এবং ক্ষমা প্রদর্শন করা ওই দান-খয়রাত অপেক্ষা উত্তম, যার পরে কষ্ট দেওয়া হয়। আল্লাহতায়ালা সম্পদশালী, সহিষ্ণু।-সূরা বাকারা: ২৬৩
দুই. আল্লাহ কোনো মন্দ বিষয় প্রকাশ করা পছন্দ করেন না। তবে কারও প্রতি জুলুম হয়ে থাকলে সে কথা আলাদা। আল্লাহ শ্রবণকারী, বিজ্ঞ।- সূরা নিসা: ১৪৮
তিন. তোমার পালনকর্তা আদেশ করেছেন, তাকে ছাড়া অন্য কারও ইবাদত করো না এবং পিতা-মাতার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করো। তাদের মধ্যে কেউ অথবা উভয়েই যদি তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হয়; তবে তাদের ‘উহ’ শব্দটিও বলো না এবং তাদের ধমক দিও না এবং তাদের শিষ্টাচারপূর্ণ কথা বলো। -সূরা বনি ইসরাইল: ২৩
চার. তোমরা মিথ্যা কথা বলা থেকে যোজন যোজন দূরে থাকো। -সূরা হজ: ৩০
পাঁচ. আর যারা মুমিন পুরুষ ও মহিলাদের কোনো অপরাধ ছাড়াই কষ্ট দেয় (কুকথা বলে) তারা একটি বড় অপবাদ ও সুস্পষ্ট গোনাহের বোঝা নিজেদের ঘাড়ে চাপিয়ে নিয়েছে। -সূরা আহজাব: ৫৮
ছয়. তোমরা একে অপরকে বিদ্রুপ করো না এবং কাউকে খারাপ বা মন্দ নামে ডেকো না। -সূরা হুজরাত: ১১
সাত. তোমরা বেশি বেশি ধারণা এবং আন্দাজ অনুমান করা থেকে বিরত থাকো। কারও দোষ বা ছিদ্রান্বেষণ করো না। আর তোমাদের কেউ যেনো কারও গীবত না করে। -সূরা হুজরাত: ১২
আট. সে যে কথাই উচ্চারণ করে, তাই গ্রহণ করার জন্যে তার কাছে সদা প্রস্তুত প্রহরী রয়েছে। -সূরা ক্বফ: ১৮
নয়. যে অধিক শপথ করে, যে লাঞ্ছিত, আপনি তার আনুগত্য করবেন না। যে পশ্চাতে নিন্দা করে, একের কথা অপরের নিকট লাগিয়ে ফিরে, যে ভালো কাজে বাধা দেয়, যে সীমালংঘন করে; যে পাপিষ্ঠ।-সূরা কলম: ১০-১২