২০২০ সালে পবিত্র হজপালনে কত টাকা খরচ হবে, তা নির্ধারণ করে হজ প্যাকেজ অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। এবার তিন প্যাকেজে সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজে যাওয়া যাবে।
সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকে হজ প্যাকেজ অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন।
বৈঠক শেষে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, এবার সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজপালনে তিনটি প্যাকেজের সুযোগ রাখা হয়েছে। প্যাকেজ-(১) ৪ লাখ ২৫ হাজার টাকা, প্যাকেজ-(২) ৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা খরচ হবে। আর প্রথমবারের মতো প্যাকেজ-(৩) করা হয়েছে। এ প্যাকেজে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ লাখ ১৫ হাজার টাকা।
হজযাত্রীর প্লেন ভাড়া, সৌদি আরবের বাড়ি ভাড়া, সার্ভিস চার্জ, মুয়াল্লিম ফি, জমজমের পানি, খাবার খরচ এবং অন্যান্য ফি হিসাব করে ২০২০ সালের জন্য সরকারি ব্যবস্থাপনায় এই তিনটি প্যাকেজ এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনার এজেন্সিসমূহের জন্য একটি প্যাকেজের প্রস্তাব করা হয়েছে।
ঘোষিত হজ প্যাকেজে গতবছরের তুলনায় খরচ বেড়েছে যথাক্রমে (প্যাকেজ-১) ৬ হাজার ৫০০ টাকা ও (প্যাকেজ-২) ১৬ হাজার টাকা। ২০১৯ সালে এ খরচ ছিলো যথাক্রমে (প্যাকেজ-১) ৪ লাখ ১৮ হাজার ৫০০ টাকা ও (প্যাকেজ-২) ৩ লাখ ৪৪ হাজার টাকা।
সরকারি প্যাকেজের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বেসরকারি হজ এজেন্সিগুলোও তিনটি হজ প্যাকেজ ঘোষণা করবেন বলে বার্তা২৪.কমকে জানিয়েছেন হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব)-এর সভাপতি শাহাদাত হোসাইন তসলিম।
অবশ্য বেসরকারি ব্যবস্থাপনার হজযাত্রীর জন্য ৩ লাখ ৫৮ হাজার টাকার প্যাকেজ প্রস্তাব করা হয়েছে মন্ত্রিসভার বৈঠকে। বেসরকারি ব্যবস্থাপনার হজ এজেন্সিগণ সরকারি ব্যবস্থাপনার প্যাকেজ-১, প্যাকেজ-২ ও প্যাকেজ-৩ এর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে হোটেলের সুযোগ-সুবিধা, খাবারের মান ও বিভিন্ন সুবিধার ভিত্তিতে একাধিক প্যাকেজ ঘোষণা করতে পারবেন।
মন্ত্রিসভার বৈঠকে আরও সিদ্ধান্ত হয়েছে, সরকারি ব্যবস্থাপনার প্যাকেজ-১ এর হজযাত্রীরা মসজিদে হারাম চত্বরের সীমানা থেকে সর্বোচ্চ ৭০০ মিটারের মধ্যে, প্যাকেজ-২ এর হজযাত্রীরা সর্বোচ্চ ১৫০০ মিটারের মধ্যে এবং প্যাকেজ-৩ এর হজযাত্রীরা ১৫০০ মিটারের অধিক দূরত্বে অবস্থান করবেন।
প্লেনের টিকিট বাবদ গৃহীত অর্থ কোনো এজেন্সি ব্যাংক থেকে উত্তোলন করতে পারবে না। হজযাত্রীর সংখ্যা অনুযায়ী সরাসরি পে-অর্ডারের মাধ্যমে এয়ারলাইন্সকে পরিশোধ করতে হবে এবং সৌদি আরবের বিভিন্ন সার্ভিস চার্জ ও পরিবহন বাবদ গৃহীত অর্থ আইবিএন (IBAN-International Bank Account Number)-এর মাধ্যমে সৌদি আরবে প্রেরণ ব্যতিত এজেন্সি উত্তোলন করতে পারবে না।
চলতি বছর রুট টু মক্কা ইনিশিয়েটিভ (Route to Makkah Inltiative)-এর আওতায় শতভাগ বাংলাদেশি হজযাত্রীর সৌদি আরবের প্রি-এরাইভাল ইমিগ্রেশন ঢাকায় সম্পন্ন করা হবে।
প্রত্যেক হজ এজেন্সি কমপক্ষে ১০০ জন এবং সর্বোচ্চ ৩০০ জন হজযাত্রী প্রেরণ করতে পারবে, হজ এজেন্সি ব্যতিত অন্যকোনো এজেন্সিকে হজযাত্রীর টিকেট বিক্রয়ের জন্য দেওয়া যাবে না। কোনো হজ এজেন্সিকে কোনো অবস্থাতেই ৩০০ এর অধিক টিকেট প্রদান করা যাবে না।
পবিত্র হজপালনের জন্য সৌদি আরব গমনের নিমিত্ত হজযাত্রীর পাসপোর্টের মেয়াদ ১ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ সাল পর্যন্ত থাকতে হবে।
প্রতি ৪৪ জন হজযাত্রীর জন্য একজন করে গাইড নিয়োগ করা হবে।
হজযাত্রীদের কোরবানি বাবদ ব্যয়ের অর্থ ইসলামি ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের মাধ্যমে পরিশোধ করার জন্য সৌদি সরকারের পক্ষ থেকে পরামর্শ প্রদান করা হয়েছে। এজন্য হজযাত্রীকে প্যাকেজ মূল্যের অতিরিক্ত ৫২৫ সৌদি রিয়ালের সমপরিমাণ ১২ হাজার ৭৫ টাকা সঙ্গে নিতে হবে।
চাঁদ দেখার ওপর ভিত্তি করে চলতি বছরের ৩১ জুলাই অর্থাৎ ৯ জিলহজ পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সৌদি আরবের সঙ্গে বাংলাদেশে দ্বি-পাক্ষিক হজচুক্তি অনুযায়ী এবার সরকারি ব্যবস্থাপনায় ১৭ হাজার ১৯৮ এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ১ লাখ ২০ হাজার জন হজ করতে পারবেন।
বাংলাদেশি হজযাত্রীদের অর্ধেক অর্ধেক করে সৌদি আরব আনা-নেওয়া করবে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ও সাউদিয়া এয়ারলাইন্স।