বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজযাত্রীদের জন্য ‘সাধারণ’ ও ‘ইকোনমি’ নামে দু’টি হজ প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে। এসব হজযাত্রীর নিবন্ধন কার্যক্রম শুরু হবে ২ মার্চ থেকে। কোরবানি ছাড়া সাধারণ প্যাকেজে হজপালন করতে খরচ পড়বে মোট ৩ লাখ ৬১ হাজার ৮০০ টাকা। আর ইকোনমি প্যাকেজের মূল্য ৩ লাখ ১৭ হাজার টাকা।
বৃহস্পতিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে হজ এজেন্সিগুলোর সংগঠন হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব) বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজের প্যাকেজ ঘোষণা করে।
সংবাদ সম্মেলনে হাবের সভাপতি এম শাহাদাত হোসাইন তসলিম বলেন, এ দুই প্যাকেজের বাইরে প্রতিটি এজেন্সি নিজ নিজ বিশেষ প্যাকেজ ঘোষণা করতে পারবে। তবে কোনো প্যাকেজের দামই হাব ঘোষিত সর্বনিম্ন প্যাকেজের চেয়ে কম দামে হতে পারবে না। হজযাত্রীরা নিবন্ধনের সময় বিমানভাড়া বাবদ ১ লাখ ৩৮ হাজার টাকাসহ সর্বনিম্ন মোট ১ লাখ ৫১ হাজার ১৯০ টাকা জমা দিয়ে নিবন্ধন সম্পন্ন করতে পারবেন। তবে হজযাত্রীদের ৩০ মার্চের মধ্যে প্যাকেজের পুরো টাকা অবশ্যই সংশ্লিষ্ট হজ এজেন্সিকে পরিশোধ করতে হবে।
হাব সভাপতি জানান, হজযাত্রীরা তাদের হজ প্যাকেজের সমুদয় অর্থ শুধুমাত্র সংশ্লিষ্ট হজ এজেন্সির ব্যাংক একাউন্ট অথবা সরাসরি এজেন্সিতে জমা দিয়ে মানি রসিদ সংরক্ষণ করবেন। কোনোক্রমেই মধ্যস্বত্বভোগীদের কাছে কোনো প্রকার লেনদেন করা যাবে না। নিজ উদ্যোগে মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট সংগ্রহ করতে হবে যার মেয়াদ ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ পর্যন্ত থাকতে হবে। প্রাক-নিবন্ধনের সময় জাতীয় পরিচয় পত্র-জন্মনিবন্ধনের যে নম্বর ব্যবহৃত হয়েছিল তা পাসপোর্টে ব্যক্তিগত পরিচিতি নম্বর হিসেবে উল্লেখ থাকতে হবে।
শাহাদাত হোসেন বলেন, কোরবানির খরচ বাবদ প্রত্যেক হজযাত্রীকে কমপক্ষে ৫২৫ সৌদি রিয়ালের সমপরিমাণ ১২ হাজার ৭৫ টাকা আলাদাভাবে নিজ দায়িত্বে সঙ্গে নিতে হবে। চাঁদ দেখা সাপেক্ষে ৩০ জুলাই পবিত্র হজ পালিত হবে। এ বছর বাংলাদেশ থেকে ১ লাখ ৩৭ হাজার ১৯৮ জন পবিত্র হজ পালন করতে পারবেন। এর মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ১৭ হাজার ১৯৮ জন ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ১ লাখ ২০ হাজার জন হজে যেতে পারবেন।
সম্প্রতি সরকারি ব্যবস্থাপনায় ২০২০ সালের জন্য তিনটি হজ প্যাকেজের অনুমোদন দেয় সরকার। এর মধ্যে প্রথম প্যাকেজে খরচ পড়বে ৪ লাখ ২৫ হাজার টাকা, দ্বিতীয় প্যাকেজে ৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা এবং তৃতীয় প্যাকেজে ৩ লাখ ১৫ হাজার টাকা।
হজ প্যাকেজের ক্ষেত্রে সরকারি-বেসরকারি উভয়ক্ষেত্রে বিমানভাড়া এক লাখ ৩৮ হাজার টাকা ধরা হয়েছে। আর দূরত্ব বিবেচনায় বাড়ি ভাড়ার তারতম্যের কারণে প্যাকেজের মূল্যে তারতম্য হয়েছে। সরকারি ও বেসরকারি উভয় সর্বনিম্ন প্যাকেজে বাড়ি ভাড়া ধরা হয়েছে ৬০ হাজার ৬১২ টাকা এবং সরকারি দ্বিতীয় প্যাকেজে বেসরকারি অপর প্যাকেজে বাড়ি ভাড়া ধরা হয়েছে ১ লাখ ৩ হাজার ৬৩১ টাকা। যাতে প্রথমটিতে মসজিদে হারাম চত্বরের সীমানা থেকে এক-দেড় হাজার মিটারের বাইরে এবং দ্বিতীয়টিতে এক-দেড় হাজার মিটারের মধ্যেই হজযাত্রীদের রাখা হবে।
হাব সভাপতি জানান, এবার সর্বনিম্ন মূল্যে যে প্যাকেজ ধরা হয়েছে সেটি যে এলাকায় হাজিদের রাখার পরিকল্পনা নিয়ে করা হয়েছে যেখান থেকেও হাজিরা পায়ে হেঁটেই মসজিদে হারামে যেয়ে নামাজ আদায় করতে পারবেন। কারণ যে কুদাই এলাকায় হাজিদের রাখা হবে হজের সময় সেই স্থান থেকে মসজিদে হারাম পর্যন্ত গাড়ি চলাচল বন্ধ রাখা হয়। তবে আজিজিয়ায় হাজিদের রাখলে মসজিদে হারামে আসতে গাড়ির ব্যবস্থা করতে হবে। খাওয়ার খরচ ২৮ হাজার টাকাসহ অন্যান্য সব খরচ প্রায় সব প্যাকেজেই একই হারে ধরা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ধর্ম মন্ত্রণালয় কর্তৃক বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে যারা নিবন্ধন করতে ব্যর্থ হবেন তারা এ বছর হজে যেতে পারবেন না। তাদের স্থলে প্রাক-নিবন্ধনের পরবর্তী ক্রমানুসারে নিবন্ধন সম্পাদিত হবে। প্রত্যেক হজযাত্রীকে স্বাস্থ্য পরীক্ষা (মেনিনজাইটিস ও ইনফ্লুয়েঞ্জার টিকা) সনদ সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট এজেন্সির কাছে জমা দিতে হবে। মাহরাম ব্যতীত কোনো নারী হজযাত্রী কোনোক্রমেই হজে যাওয়ার যোগ্য বিবেচিত হবেন না। নারী হজযাত্রীগণকে মাহরামের সঙ্গে একত্রে নিবন্ধন করতে হবে। হজযাত্রীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা সরকারি হাসপাতালে সম্পন্ন করা হবে। প্রত্যেক হজযাত্রী পাঁচ লিটার জম জমের পানি পাবেন।
শাহাদাত হোসাইন তসলিমের দাবি, সৌদি আরবের ইমিগ্রেশন বাংলাদেশে সম্পন্ন হওয়ার কারণে হজযাত্রীদের অনেক কষ্ট লাঘব হয়েছে। এ বছর আরও বেশি সংখ্যক হজযাত্রীদের সৌদি অংশের ইমিগ্রেশন বাংলাদেশে সম্পন্ন করার জন্য সকল প্রকার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন হাবের সিনিয়র সহ-সভাপতি মাওলানা ইয়াকুব শরাফতী, যুগ্ম-মহাসচিব মাওলানা ফজলুর রহমান, সহ-সভাপতি মো. শাহ আলম, জনসংযোগ সচিব ও আটাবের মহাসচবি মাজাহারুল ইসলাম ভূঁইয়া, র্অথ সচবি আব্দুল কাদের মোল্লা প্রমুখ।