হজ একটি সময় আবদ্ধ ইবাদত। তাই চলতি বছর হজ গমনেচ্ছুকদের নির্ধারিত সময়ে টাকা জমা দিয়ে হজের যাবতীয় প্রস্তুতি গ্রহণের আহবান জানিয়েছেন ধর্ম প্রতিমন্ত্রী আলহাজ্ব এডভোকেট শেখ মো. আব্দুল্লাহ।
তিনি বলেছেন, করোনাভাইরাসের প্রভাবে আতঙ্কিত হয়ে হজের নিবন্ধন থেকে বিরত থাকলে এবছর হজে গমন সম্ভব হবে না। হজযাত্রীদের হজের টাকা জমা দিলে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন না, সরকার দায়-দায়িত্ব বহন করবে।
রোববার (৮ মার্চ) ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে ‘হজ-২০২০ এর নিবন্ধন কার্যক্রম ও প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি’ সম্পর্কে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ সব কথা বলেন।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে বাংলাদেশসহ পৃথিবীর শতাধিক দেশ সর্তকতামূলক কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। সৌদি আরব সতর্কতামূলভাবে উমরা ভিসা ইস্যু সাময়িক বন্ধ রেখেছে। করোনাভাইরাসের প্রভাবে অনিশ্চয়তার কথা চিন্তা করে হজের নিবন্ধনে বিলম্ব করলে তার এ বছর হজযাত্রার সমস্যা হতে পারে। তবে হজের টাকা জমা দিলে সরকার টাকার নিরাপত্তা প্রদান করবে। সুতরাং হজযাত্রীদের আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা নেই। এ সময় মন্ত্রী বলেন, আমরা অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। সৌদি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সার্বক্ষনিক যোগাযোগ রাখছি। সৌদি কর্তৃপক্ষও আমাদেরকে আশ্বস্ত করেছেন। তারা হজযাত্রীদের বিষয়ে সব রকমের সহযোগিতা করবেন। হজযাত্রীরা যাতে কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত না হন সে বিষয়ে আমাদের সর্বাত্নক সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।
ধর্ম প্রতিমন্ত্রী বলেন, হজের টাকা জমা প্রদান করে নিবন্ধনের পর সৌদি আরবে মোয়াল্লিম ফি নির্ধারণ, মক্কা-মদিনায় বাড়ি ভাড়া করা, আনুষঙ্গিক ব্যয় মেটানোর জন্য সৌদি আরবে অর্থ প্রেরণের কাজ সম্পন্ন করতে হয়। এছাড়া হজে গমনের পূর্বে দেশে থাকা অবস্থায় হজযাত্রীকে স্বাস্থ্য পরীক্ষা, টিকা গ্রহণ, হজের প্রশিক্ষণ গ্রহণ, বিমানের টিকিট সংগ্রহ ও ভিসা প্রসেসসহ যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে হয়। তাই আগেভাগেই হজযাত্রীদের চূড়ান্ত নিবন্ধন করার আহ্বান জানান।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, বেসরকারি ব্যবস্থাপনার হজযাত্রী প্রেরণের নিমিত্তে ৭৮৮টি বৈধ হজ এজেন্সির তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। ২ মার্চ থেকে হজযাত্রী নিবন্ধন কার্যক্রম শুরু হয়েছে। একই সঙ্গে ২০২০ সালের জন্য তালিকায় প্রকাশিত এজেন্সিসমূহ হজযাত্রী নিবন্ধন করছে। চূড়ান্ত নিবন্ধন শেষে যথাসময়ে সৌদি সরকারকে হজযাত্রীর সংখ্যাসহ অন্যান্য তথ্য জানাতে হবে। নিবন্ধিত হজযাত্রীদের পিআইডি নম্বর প্রদান করতে হবে। হজযাত্রীদের সংখ্যানুপাতে ফ্লাইট সিডিউল চূড়ান্ত করতে হবে। ফ্লাইট টিকিটের ব্যবস্থা করতে হবে। হজ ব্যবস্থাপনার জন্য সৌদি আরবে মুয়াল্লিম নিয়োগ করতে হবে। হজযাত্রীদের আবাসনের জন্য বাড়ি-হোটেল ভাড়া করতে হবে। সৌদি আরবে হজ ব্যবস্থাপনার জন্য বিভিন্ন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ ও চুক্তি করতে হবে। হজযাত্রীদের জন্য ভিসার ব্যবস্থা করতে হবে। তাছাড়া পবিত্র হজে গমনের জন্য হজ ফ্লাইট শুরুর অন্তত ২ মাস পূর্বে বিস্তারিত প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হয়। উপরোক্ত কার্যাবলী সম্পন্ন করতে কমপক্ষে ২ মাস সময়ের প্রয়োজন। প্রস্তুতিতে আমাদের কোনো ধরনের ত্রুটি থাকলে হজ গমন বিঘ্নিত হতে পারে। তাই তিনি যথাসময়ে হজ নিবন্ধন করার আহবান জানান।
চাঁদ দেখা সাপেক্ষে ৩০ জুলাই (৯ জিলহজ) পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হতে পারে এবং বাংলাদেশ থেকে ২৩ জুন হজ ফ্লাইট শুরু হওয়ার কথা উল্লেখ করে প্রতিমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ২৪ ফেব্রুয়ারি মন্ত্রিসভা কর্তৃক এ বছরের হজপ্যাকেজ অনুমোদিত হয়েছে। চলতি বছর সরকারি ব্যবস্থাপনায় মোট তিনটি প্যাকেজ ঘোষিত হয়েছে। প্যাকেজ-১, ৪ লাখ ২৫ হাজার টাকা, প্যাকেজ-২, ৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা ও প্যাকেজ-৩; ৩ লাখ ১৫ হাজার টাকা। সরকারি ব্যবস্থাপনায় এবারই প্রথমবারের মতো এ প্যাকেজ চালু করা হয়েছে। বেসরকারি হজ এজেন্সিগুলোও ৩ লাখ ৫৮ হাজার টাকার একটি প্যাকেজ ঘোষণা করেছে। তবে বেসরকারি এজেন্সি কর্তৃপক্ষ সরকারি ব্যবস্থাপনায় ঘোষিত ৩ প্যাকেজের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে প্যাকেজ ঘোষণা করতে পারবে। ইতিমধ্যে বেসরকারি হজ এজেন্সিসমূহের সংগঠন হাব দু’টি প্যাকেজ ঘোষণা করেছে।
প্রতিমন্ত্রী উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, এবার সরকারি ব্যবস্থাপনায় ১৭ হাজার ১৯৮ জন এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ১ লাখ ২০ হাজারসহ মোট ১ লাখ ৩৭ হাজার হজযাত্রী হজে যেতে পারবেন- ইনশাআল্লাহ। যেসব হজযাত্রী বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ২০২০ সালের কোটা পূরণ হওয়ার কারণে ২০২১ সালে বেসরকারি এজেন্সির মাধ্যমে প্রাক-নিবন্ধন করেছেন, তারা ইচ্ছে করলে এবার সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজে গমনের সুযোগ পাবেন।
সংবাদ সম্মেলনে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (হজ) এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী, হজ এজেন্সিজ এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব)-এর সভাপতি এম শাহাদাত হোসাইন তসলিম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী সৌদি সরকারের উমরা বন্ধ রাখার উদ্যোগকে সময়োপযোগী বলে উল্লেখ করে বলেন, আশা করছি, আল্লাহতায়ালা পবিত্র হজের পূর্বেই বিশ্ববাসীকে এ বিপদ থেকে রক্ষা করবেন। আল্লাহর কাছে আমরা সবসময় সে প্রার্থনা করছি। অবশ্যই তিনি হজ পালনে ইচ্ছুক সবাইকে তার পবিত্র স্থানে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করবেন।