চলতি রমজানের ৬ষ্ঠ তারাবিতে তেলাওয়াত করা হবে সূরা আরাফের ১২ নম্বর আয়াত থেকে সূরা আনফালের ৪০ নম্বর আয়াত পর্যন্ত। তেলাওয়াতকৃত অংশের পুরোটাজুড়ে থাকছে বিভিন্ন অবাধ্য, খোদাদ্রোহী, রাসূলদ্রোহী সম্প্রদায়ের ওপর আল্লাহর আজাব-গজব প্রেরণের ভয়ঙ্কর আলোচনা ও আমাদের জন্য কঠিন সতর্কবার্তা।
নবীগণ নিজ নিজ সম্প্রদায়কে কী বলেছিলেন, জবাবে সম্প্রদায়ের নেতৃস্থানীয় লোকেরা কী বলেছিল, ফলশ্রুতিতে আল্লাহ কী করেছেন, কীভাবে তাদের সমূলে নির্মূল করেছেন, কীভাবে তাদের শাস্তি দিয়েছেন সেসব বর্ণনাই আজকের তারাবির প্রধান পাঠ।
কোভিড-১৯ নামক আজাব-গজবের দিনগুলোতে এ আয়াতের শিক্ষার প্রতি গভীর মনোনিবেশ দেওয়া দরকার।
সূরা আরাফের ৬৫ থেকে ৮৭ নম্বর আয়াতগুলোতে পূর্ববর্তী আদ, সামুদ, কওমে লুত ও মাদায়েনে ৪টি জাতির অবাধ্যতার এবং গজবে ধ্বংস হওয়ার আলোচনা থাকবে। আদ জাতির নবী ছিলেন হজরত হুদ (আ.), সামুদ জাতির নবী ছিলেন হজরত সালেহ (আ.), কওমে লুতের নবী ছিলেন হজরত লুত (আ.) আর মাদায়েনের নবী ছিলেন হজরত শুয়াইব (আ.)।
আদ জাতিকে আজাব দিয়ে ধ্বংস করা হয়েছে মূর্তি জা পরিত্যাগ না করার কারণে। সামুদ জাতিকে ভূমিকম্প দিয়ে ধ্বংস করা হয়েছে আল্লাহর নিদর্শন বিশেষ একটি উট হত্যা করার কারণে। কওমে লুতকে ভূখণ্ড উল্টে পাথর বৃষ্টির দ্বারা ধ্বংস করা হয়েছে সমকামিতার কারণে। মাদায়েন জাতিকেও ভূমিকম্প দ্বারা ধ্বংস করা হয়েছে। তাদের গুরুতর কয়েকটি অপরাধ হলো- এক আল্লাহর আনুগত্য না করা, মাপে কম দেওয়া, সম্পদ আত্মসাৎ করা, মানুষকে ধর্মপালনে বাঁধা প্রদান করা।
আজাব-গজব দিয়ে ওই সব জাতিকে ধ্বংস করার বিবরণ দেওয়ার পর মহান আল্লাহ বলছেন, ‘আমি যেকোনো জনপদে নবী পাঠিয়েছি, তার অধিবাসীদেরকে অবশ্যই অর্থ সঙ্কট ও দুঃখ-কষ্টে আক্রান্ত করেছি, যাতে তারা বিনয় অবলম্বন করে। তারপর আমি অবস্থা পরিবর্তন করেছি। দূরাবস্থার স্থানে সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য দিয়েছি, এমনকি তারা সমৃদ্ধশালী হয়ে ওঠে এবং বলতে শুরু করে, দুঃখ ও সুখ তো আমাদের বাপ-দাদাগণও ভোগ করেছে। অতঃপর আমি হঠাৎ তাদেরকে এভাবে পাকড়াও করি যে, তারা (আগে থেকে) কিছুই টের করতে পারেনি।
যদি সে সব জনপদবাসী ঈমান আনতো ও তাকওয়া অবলম্বন করতো তবে আমি তাদের জন্য আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী উভয় দিক থেকে বরকতের দরজাসমূহ খুলে দিতাম। কিন্তু তারা (সত্য) প্রত্যাখ্যান করলো। সুতরাং তাদের ক্রমাগত অসৎ কর্মের পরিণামে আমি তাদেরকে পাকড়াও করি। এবার বলো, (অন্যান্য) জনপদবাসীরা কি এ বিষয় হতে সম্পূর্ণ নির্ভার হয়ে গেছে যে, কোনো রাতের তাদের ওপর আমার শাস্তি এ অবস্থায় আপতিত হবে, যখন তারা থাকবে ঘুমন্ত? এসব জনপদবাসীর কি এ বিষয়ের (ও) কোনো ভয় নেই যে, তাদের ওপর আমার শাস্তি আপতিত হবে পূর্বাহ্নে, যখন তারা খেলাধুলায় মেতে থাকবে? তবে কি এসব লোক আল্লাহ প্রদত্ত অবকাশ (এর পরিণাম) সম্পর্কে নিশ্চিন্ত হয়ে গেছে? (যদি তাই হয়) তবে (তারা যেন স্মরণ রাখে) আল্লাহ প্রদত্ত অবকাশ সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে কেবল তারাই বসে থাকে, যারা শেষ পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
যারা কোনো ভূখণ্ডের বাসিন্দাদের (ধ্বংসপ্রাপ্তির) পর তার উত্তরাধিকারী হয় তারা কি এই শিক্ষা লাভ করেনি যে, আমি চাইলে তাদেরকেও তাদের কোনো গোনাহের কারণে কোনো মুসিবতে আক্রান্ত করতে পারি এবং (যারা হঠকারীতাবশত এ শিক্ষা গ্রহণ করে না) আমি তাদের অন্তরে মোহর করে দেই, ফলে তারা কোনো কথা শুনতে পায় না। এই হচ্ছে সেই সব জনপদ, যার ঘটনাবলী তোমাকে শোনাচ্ছি। বস্তুত তাদের কাছে তাদের রাসূলগণ স্পষ্ট প্রমাণাদি নিয়ে এসেছিল, কিন্তু তারা পূর্বে যা প্রত্যাখ্যান করেছিল, তাতের ঈমান আনার জন্য কখনও প্রস্তুত ছিলো না। যারা কুফর অবলম্বন করে আল্লাহ তাদের অন্তরে এভাবেই মোহর করে দেন। আমি তাদের অধিকাংশের ভেতরই অঙ্গীকার রক্ষার মানসিকতা দেখতে পাইনি। প্রকৃতপক্ষে আমি তাদের অধিকাংশকেই পেয়েছি অবাধ্য। -সূরা আরাফ: ৮৮-৯৬