তুরস্কের সরকার লকডাউনের নিষেধাজ্ঞা শিথিল করে দিলে, জনগণ মসজিদে গিয়ে জুমা নামাজ আদায় করেন সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে। তুরস্কের সর্ব বৃহৎ সুলতান আহমদ মসজিদে নামাজ আদায়ের কিছু ছবি বেশ সাড়া ফেলেছে। ড্রোন দিয়ে উঠানো এসব ছবি নিয়ে থাকছে আজকের ফিচার।
করোনার সংক্রমণ এড়ানোর অভিনব ব্যবস্থা নেওয়া হয় এ মসজিদের মুসল্লিদের জন্য। প্রায় দুইমাস পর নামাজের সুযোগ পেয়ে মুসল্লিরা নিয়ম মেনেই নামাজে অংশ নেন।
তবে ৬৫ বছরের ঊর্ধ্বে কাউকে নামাজ পড়তে দেওয়া হয়নি। মসজিদের প্রবেশ পথে মুসল্লিদের স্যানিটাইজার, হাতের গ্লাভস ও নামাজের মাদুর দেওয়া হয়।
ইউরোপ মহাদেশের পূর্ব ও পশ্চিম অংশে অবস্থিত তুরস্কের ইস্তাম্বুল শহর পর্যটকদের কাছে বরাবরই আকর্ষণীয় এক শহর। ইস্তাম্বুল শহরটি উঁচু-নিচু টিলাবেষ্টিত; অনেকটা মক্কা নগরীর মতো। দর্শনীয় স্থানের মধ্যে সুলতান আহমদ মসজিদ অন্যতম।
সুলতান আহমদ মসজিদকে ব্লু মস্কও বলা হয়। এই মসজিদের সঙ্গে রয়েছে বিশাল কমপ্লেক্স। মসজিদকে কেন্দ্র করে গড়ে তোলা হয়েছে কয়েক একরের বিশাল পার্ক।
ইউরোপে মসজিদের শহর বলা হয় ইস্তাম্বুলকে। কথিত আছে উসমানি সুলতান প্রথম আহমদ ১৬০৯ সাল থেকে ১৬১৫ সাল পর্যন্ত সময়ের মধ্যে মসজিদটি নির্মাণ করেছিলেন। এই মসজিদে একসঙ্গে দশ হাজার মানুষ নামাজ আদায় করতে পারেন। মসজিদের ভেতরের ডিজাইন বেশ চিত্তাকর্ষক। কালের বিবর্তনে মসজিদটি পরিণত হয়েছে তুরস্ক সভ্যতার অন্যতম এক পীঠস্থানে।
সুলতান আহমদ মসজিদের মূল গম্বুজের পাশাপাশি রয়েছে আরও আটটি ছোট-বড় গম্বুজ। গম্বুজ ও মিনারগুলো নীল ও সাদা সীসার গাঁথুনিতে তৈরি। ওপরের অংশের রয়েছে সোনালী রঙের নকশা। মসজিদের ভেতরের দেয়ালগুলোতে রয়েছে বাহারি কারুকাজ। নকশার পাশাপাশি পবিত্র কোরআনের আয়াতের ক্যালিওগ্রাফি চোখ জুড়িয়ে দেয় দর্শকদের।
মসজিদের চারপাশে রয়েছে মাদরাসা, হলরুম ও এতিমখানা। রয়েছে অনেকগুলো দৃষ্টিনন্দন ফোয়ারা। রাতে যখন বিভিন্ন রঙের বাতির আলো মসজিদের মূল গম্বুজ ও মিনারে গিয়ে পড়ে, তখন পুরো এলাকা অপূর্ব সুন্দর হয়ে ওঠে। মসজিদের চারপাশে রয়েছে অনেকগুলো স্টুডিও ও গিফটশপ। স্টুডিওতে পুরোনো আমলের অনেক দুর্লভ তৈজষ সামগ্রী পাওয়া যায়। পর্যটকেরা এখানে এসে সুলতান আমলের পোশাক-পরিচ্ছদ পরে ছবি তোলে।
চোখ জুড়ানো স্থাপত্যশৈলী ও মসজিদসংলগ্ন বিশাল উদ্যানের সৌন্দর্য উপভোগ করতে সারা বছর এলাকাটি পর্যটকদের পদভারে মুখর থাকে।
ইস্তাবুলই পৃথিবীর একমাত্র শহর, যা দুটি মহাদেশজুড়ে বিস্তৃত। ইস্তাম্বুলের আদি নাম ছিল কনস্টান্টিনাপোল। এই ইস্তাবুলই এখন গোটা তুরস্কের সংস্কৃতি ও অর্থনীতির প্রাণকেন্দ্র। সারা দেশের মোট করের ৪০ শতাংশ জোগান দেয় ইস্তাম্বুল। মোট আয়তন ৫৪৬১ বর্গ কিলোমিটার। জনসংখ্যা প্রায় ১ কোটি ৩২ লাখ। এর ৯৮ শতাংশই মুসলমান।
ইস্তাম্বুল তুরস্কের দক্ষিণ-পশ্চিম অংশে অবস্থিত একটি প্রদেশ। মূল শহরটিকে দু’ভাগে ভাগ করে ঠিক মধ্যখান বরাবর বয়ে গেছে বসফরাস নদী। উত্তরে কৃষ্ণ সাগর, দক্ষিণে ভূমধ্যসাগর। শহরটির পশ্চিম অংশে এশিয়া মহাদেশ, আর পূর্বে ইউরোপ।
এক সময় ইস্তাম্বুলই ছিল তুরস্কের রাজধানী। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর এই নগরী শত্রু দ্বারা অবরুদ্ধ হয়ে পড়লে রাজধানীকে এখান থেকে স্থানান্তরিত করে আঙ্কারায় নিয়ে যাওয়া হয়।