প্রতি বছর জিলহজ মাসে মক্কা নগর বিশ্বের মুসলমানদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠতো। কিন্তু এ বছর মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে চিত্র একেবারেই ভিন্ন। সীমিত পরিসরে মাত্র ১০ হাজার মানুষ এবার হজপালনের সুযোগ পেয়েছেন। এই দশ হাজারের মধ্যে পবিত্র হজপালনের সুযোগ পেয়ে আনন্দে কাঁদলেন এক দম্পতি।
সৌদি আরবে অবস্থানরত জর্ডানের ওই দম্পতির এই কান্না কোনো দুঃখের নয়, সুখের। যাকে বলে আনন্দাশ্রু। জর্ডানের এই দম্পতি এবার পবিত্র হজপালনের সুযোগ পেয়েছেন। এই আনন্দে তাদের চোখে পানি। ৩০ জুলাই পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হবে।
জুন মাসে সৌদি আরবের হজ মন্ত্রণালয় ঘোষণা দেয়, সৌদি আরবে অবস্থানরত ব্যক্তিদের মধ্যে খুবই সীমিতসংখ্যক মুসল্লি এবারের পবিত্র হজে অংশ নিতে পারবেন। করোনা মহামারির পরিপ্রেক্ষিতে সারাবিশ্বের মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সৌদি সরকার এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এমন সিদ্ধান্তের ফলে বাইরের দেশের মুসল্লিরা এবার সৌদি আরবে গিয়ে পবিত্র হজপালন করতে পারবেন না। এবার পবিত্র হজপালনের জন্য সৌদি আরবে অবস্থানরত অসংখ্য মানুষ অনলাইনে আবেদন করেন। নানা যাচাই-বাছাই শেষে সৌদিতে অবস্থানরত ১৬০টি দেশের মুসল্লিরা হজপালনের সুযোগ পান। স্বয়ংক্রিয় বাছাই পদ্ধতিতে ১০ হাজারজনকে বেছে নেওয়া হয়েছে। ফলে আবেদনকারীদের বেশিরভাগই হতাশ হয়েছেন। যদিও এই বাছাই প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিয়ে অভিযোগ রয়েছে।
কিন্তু সৌদি সরকার বলছেন, এখানে পক্ষপাতিত্ব কিংবা সরকারের কোনো হস্তক্ষেপ ছিলো না। এমনকি এবার এবারের হজে কোনো কূটনীতি কিংবা ভিআইপি অংশ নিচ্ছে না।
এমন অবস্থায় রিয়াদে বসবাসরত জর্ডানের ২৯ বছর বয়সী ইঞ্জিনিয়ার ও তার ২৬ বছর বয়সী স্বাস্থ্যকর্মী স্ত্রী এবারের পবিত্র হজপালনের জন্য নির্বাচিত হয়েছেন। জর্ডানের এই ইঞ্জিনিয়ার বলেন, ‘অসংখ্য আবেদনের মধ্যে আমাদের নির্বাচিত হওয়ার সম্ভাবনা ছিল সর্বোচ্চ ১ শতাংশ। নির্বাচিত হওয়ায় আমরা বিস্মিত, আনন্দিত।’
রিয়াদে বসবাসরত নাইজেরীয় প্রবাসী নাসেরও হজপালনের সুযোগ পাচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘নির্বাচিত হওয়ার অনুভূতি বর্ণনা করার ভাষা নেই।’
হজ ইসলামের অন্যতম অবশ্য পালনীয় বিধান। যাদের শক্তি-সামর্থ্য আছে তাদের জন্য নামাজ-রোজার মতোই হজ ফরজ।
হাদিস শরিফে আছে, আল্লাহ যাদের শক্তি ও সামর্থ্য দিয়েছেন, স্বচ্ছলতা দিয়েছেন, তারা যদি হজ না করে মৃত্যুবরণ করেন তবে তারা জাহান্নামের ভয়ঙ্কর অগ্নিকুন্ডে নিক্ষিপ্ত হবেন।
সহিহ বোখারি শরিফের হাদিসে এসেছে, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যার ওপর হজ ফরজ হয় সে যদি তা আদায় না করে আমি বলতে পারি না যে, সে ঈমান নিয়ে মারা যাবে কি না।
হজকে ইসলামের অন্যতম খুঁটি বলা হয়। হজ ফরজ হওয়ার কতকগুলো শর্ত রয়েছে। সেগুলো হলো- দৈহিক ও মানসিক সুস্থতা, প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া, স্বাধীন হওয়া, পরিবারের ভরণ-পোষণের মতো অর্থ সম্পদ থাকা, হজে যাওয়ার পথ নিরাপদ হওয়া এবং মহিলাদের জন্য স্বামী অথবা রক্তের সম্পর্কীয় আত্মীয় (মাহরাম) থাকা।
ইসলামে হজের ধর্মীয়, সামাজিক ও রাজনৈতিক গুরুত্ব অত্যাধিক। প্রতি বছর লাখ লাখ মুসলমান বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মক্কায় গিয়ে হজব্রত পালন করে থাকেন। হজ মুসলমানদের আর্ন্তজাতিক মহাসম্মেলন। হজে গিয়ে মুসলমানরা আল্লাহতায়ালার কাছে নিজের গোনাহসমূহের ক্ষমা প্রার্থনা করেন, বাকী জীবন আল্লাহর নির্দেশিত পথে চলার জন্য প্রতিশ্রুতিও ব্যক্ত করেন।