পাবনার ঈশ্বরদীতে শেখ হাসিনার ট্রেন বহরে গুলিবর্ষণের মামলায় ৯ জনের ফাঁসি, ২৫ জনের আমৃত্যু যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। আরও ১৩ জনকে ১০ বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করা হয়েছে।
বুধবার (৩ জুলাই) পাবনার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ প্রথম আদালতের ভারপ্রাপ্ত বিচারক রুস্তম আলী এ আদেশ দেন।
ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- মোখলেছুর রহমান বাব্লু, একেএম আখতারুজ্জামান, জাকারিয়া পিন্টু, মোস্তাফা নুরে আলম শ্যামল, মাহাবুবুর রহমান পলাশ, শামছুল আলম, মুজিবুর রহমান, শহিদুল ইসলাম অটল ও শামসুজ্জামান।
যাবজ্জীবন প্রাপ্তরা হলেন- আমিনুল ইসলাম (পলাতক), আজাদ হোসেন ওরফে খোকন, ইসমাইল হোসেন জুয়েল, আলাউদ্দিন বিশ্বাস, শামসুর রহমান শিমু, আনিসুর রহমান সেকম (পলাতক), আক্কেল আলী, মো. রবি (পলাতক), মো. এনাম, আবুল কাশেম হালট (পলাতক), কালা বাবু (পলাতক), মামুন (পলাতক), মামুন (পলাতক), সেলিম, কল্লল, তুহিন, শাহ আলম লিটন, আব্দুল্লাহ আল মামুন রিপন, লাইজু (পলাতক), আব্দুল জব্বার, পলাশ, হাকিম উদ্দিন টেনু, আলমগীর, আবুল কালাম (পলাতক) ও একেএম ফিরোজুল ইসলাম পায়েল।
এছাড়াও ১০ বছর করে সাজা প্রদান করা হয়েছে ঈশ্বরদী উপজেলার সাহাপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান নেফাউর রহমান রাজু, ঈশ্বরদী পৌরসভার কাউন্সিলর আনোয়ার হোসেন জনি, বিএনপি নেতা রন রিয়াজী (পলাতক), আজমল হোসেন ডাবলু, মুক্তার হোসেন, হাফিজুর রহমান ওরফে মুকুল, হুমায়ুন কবির দুলাল, তুহিন বিন
সিদ্দিকী, ফজলুর রহমান, চাঁদ আলী (পলাতক), এনামুল কবির, জামরুল (পলাতক) ও বরকত।
মামলার সরকার পরে আইনজীবী পিপি আকতারুজ্জামান মুক্তা বলেন, '১৯৯৪ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর দলীয় কর্মসূচিতে অংশ নিতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা খুলনা থেকে সৈয়দপুর যাওয়ার পথিমধ্যে ঈশ্বরদী স্টেশনে যাত্রা বিরতিকালে বিএনপি’র নেতাকর্মীরা ট্রেনে ও তার কামরায় গুলিবর্ষণ করে। এ ঘটনায় ওই সময়ে জিআরপি পুলিশের ওসি নজরুল ইসলাম বাদী হয়ে ৭ জনের নামে একটি মামলা দায়ের করেন। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর পুলিশ মামলাটি পুনঃতদন্ত করে তদন্ত শেষে নতুন করে ঈশ্বরদীর শীর্ষ স্থানীয় বিএনপির যুবদল ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীসহ ৫২ জনকে এই মামলায় আসামি করা হয়। মামলাটি দায়ের হওয়ার পরের বছরে এই মামলায় পুলিশ কোনো সাক্ষী না পেয়ে আদালতে চূড়ান্ত রিপোর্ট দাখিল করে। কিন্তু আদালত ওই রিপোর্ট গ্রহণ না করে অধিকতর তদন্তের জন্য মামলাটি সিআইডিতে স্থানান্তর করেন। পরে সিআইডি তদন্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করে। মামলা নং এসটি ৪২/৯৭।'
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এই মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামিদের মধ্যে চলতি বছরের ৩০ জুন আদালতে বিএনপি, ছাত্রদল ও যুবদলের ৩০ জন নেতাকর্মী আদালতে হাজির হলে বিচারক তাদের জামিন না মঞ্জুর করে জেল হাজতে প্রেরণ করেন।
মঙ্গলবার (২ জুলাই) এই মামলার আরও দুই আসামি ঈশ্বরদী পৌরসভার সাবেক মেয়র, পৌর বিএনপির সাবেক সভাপতি মোখলেছুর রহমান ওরফে বাবলু এবং বিএনপি নেতা আব্দুল হাকিম টেনু আদালতে আত্মসমর্পণ করে। অন্যদিকে পুলিশ ওইদিন রাতেই এই মামলার আরেকজনকে গ্রেফতার করে।
আরও জানা যায়, এই মামলায় এ পর্যন্ত ৩৩ জন আসামি জেল হাজতে রয়েছেন। পলাতক রয়েছে ১৪ জন এবং মারা গেছেন পাঁচ জন।
উল্লেখ্য, তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৪ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর দলীয় কর্মসূচিতে ট্রেনবহর নিয়ে রেলপথে খুলনা হতে ঈশ্বরদী হয়ে সৈয়দপুর যাচ্ছিলেন। সন্ধ্যার দিকে ঈশ্বরদী রেলওয়ে জংশন স্টেশনে ট্রেনটি প্রবেশের আগে রেলগেট এলাকায় অতর্কিতভাবে শেখ হাসিনার কামরা লক্ষ্য করে উপর্যুপরি গুলিবর্ষণ ও বোমা নিক্ষেপ করা হয়। এই ঘটনায় অধিকতর তদন্ত শেষে মোট ৫২ জনকে আসামি করে চার্জশিট দেয়া হয়। এদের মধ্যে গত ২৫ বছরে ৫ জন মারা গেছেন। বাকি ১৫ জন এখনো পলাতক। বুধবার এই মামলার রায়ের দিন ধার্য ছিল।