প্রকৃতিতে এখন মোহনীয় ঋতু শরৎ। বর্ষার বিদায়, শীতের আগমনী বার্তা। তাপমাত্রার তারতম্য ও বাতাসের আর্দ্রতা হ্রাস হওয়ায় এ সময়ে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কিছুটা কমিয়ে দেয়। শুষ্ক হয়ে পড়ে শরীর, ঘরে ঘরে শুরু হয় সর্দি-জ্বর, হাঁচি-কাশি। সাধারণ চিকিৎসায় মেলে মুক্তি।
তবে প্রেক্ষাপট বদলে দিয়েছে করোনাভাইরাস! সামান্য জ্বর বা কাঁশিতে ঘরে ঘরে এখন আতঙ্ক! এ সময়ে অন্য সবার চেয়ে বিশেষ সতর্ক থাকতে হবে সন্তানসম্ভবা নারীদের। কারণ করোনার পাশাপাশি এ সময়ে প্রকোপ বেড়ে যায় ডেঙ্গু জ্বরেরও।
ভারতের প্রখ্যাত স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. অভিনিবেশ চট্টোপাধ্যায় বলছেন, শরীর গরম হওয়ার আগেই জ্বরের উপসর্গ হিসেবে সন্তানসম্ভবা নারীদের গায়ে প্রচন্ড ব্যথা অনুভব হতে পারে। তবে ভুল করেও কেউ যদি পেইন কিলার বা ব্যথানাশক নেন, তবে ভ্রণ’র মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। ফলে জ্বর হলে সন্তানসম্ভবা নারীদের ওষুধ খাওয়া থেকে সাবধান থাকতে হবে।
করোনা ও ডেঙ্গুর এ সময়ে সন্তানসম্ভবা নারীদের জ্বর নিয়ে বাড়তি সতর্কতা ও চিকিৎসা বিষয়ে ডা. অভিনিবেশ চট্টোপাধ্যয়ের বিশেষজ্ঞ পরামর্শ:
বেশি বেশি পানি পান করা:
জ্বর হলেই সন্তানসম্ভবা নারীদের ডিহাইড্রেশনের ঝুঁকি খুব বেড়ে যায়। তাই প্রচুর পানি ও পানীয় জাতীয় খাবার খাওয়া উচিত। ওআরএস যুক্ত পানি ছাড়াও বারবার অল্প অল্প করে সাধারণ পানি পান করার সঙ্গে সঙ্গে কোমল জুস খাওয়া উপকারী।
ওষুধ খাওয়ায় সতর্কতা:
সন্তানসম্ভবা নারীদের জ্বর কমাতে প্যারাসিটামল ছাড়া আর কোনও ওষুধ খাওয়া চলবে না। প্রয়োজন বুঝে গর্ভবতীদের ব্লাড থিনার দেওয়া হয়। তবে ডেঙ্গু জ্বর হলে ব্লাড থিনার খাওয়া বন্ধ করতে হবে। কারণ ডেঙ্গু হলে রক্তে অনুচক্রিকার পরিমাণ কমে গিয়ে রক্তপাতের ঝুঁকি থাকে।
গর্ভবতীকে প্যারাসিটামল দেয়ার পরেও জ্বর না কমলে তৃতীয় দিনে রক্ত পরীক্ষা করা আবশ্যক। জ্বর হলে করোনার ভয়ে নিজে থেকে ওষুধ খেতে যাবেন না। বরং টেলিফোনে দ্রুত সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। তবে যদি জ্বরের সঙ্গে বমি হয়, কোনও ঝুঁকি না নিয়ে গর্ভবতীকে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করা উচিত।
স্যালাইন দেওয়া:
এমনিতেই জ্বরের জন্য শরীরে পানি ও ইলেক্ট্রোলাইটের ভারসাম্য নষ্ট হওয়ার ঝুঁকি থাকে। তার সঙ্গে বমি সমস্যা আরও বাড়িয়ে দেয়। এক্ষেত্রে ডিহাইড্রেশন হয়ে গিয়ে মা ও গর্ভস্থ শিশু; দু’জনেরই জীবন বিপন্ন হতে পারে। ডিহাইড্রেশন আটকানোর একমাত্র উপায় স্যালাইন দেওয়া। তাই বাড়িতে রেখে চিকিৎসার ঝুঁকি নেওয়া অনুচিত।
গর্ভবতীর ডেঙ্গু জ্বর হলে যা করণীয়:
ডেঙ্গু জ্বর গর্ভাবস্থার শুরুতে বা মাঝামাঝি সময়ে, এমনকি প্রসবের ঠিক আগেও হতে পারে। সব ক'টি ক্ষেত্রেই সন্তান ও মাকে সুস্থ রাখতে হাসপাতালে ভর্তি রেখে চিকিৎসা করলে ভালো হয়। তবে এখনকার কোভিড পরিস্থিতিতে কী ব্যবস্থা নেওয়া উচিত, তা চিকিৎসকের ওপর ছেড়ে দেওয়াই ভালো।
প্রসব যন্ত্রণা পিছিয়ে দেয়া:
গর্ভাবস্থার শেষের দিকে সন্তানসম্ভবা নারীর জ্বর হলে প্রসব বেদনা শুরু হওয়ার ঝুঁকি থাকে। ওষুধ দিয়ে তখন প্রসব যন্ত্রণা পিছিয়ে দিতে হয়। না হলে মা ও শিশু দু’জনেরই সমস্যা হতে পারে। বিশেষ ওষুধের সাহায্যে মায়ের প্রসব যন্ত্রণা পিছিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি গর্ভস্থ শিশু ও মাকে অনবরত মনিটরিং করা হয়।
জ্বর আক্রান্ত গর্ভবতীকে সিজার নয়:
ডেঙ্গু জ্বর বা অন্য কোনো জ্বরে আক্রান্তদের অনিয়ন্ত্রিত রক্তপাতের আশঙ্কা থাকে বলে সিজার করার ঝুঁকি না নেওয়াই ভালো। মায়ের শরীরে জ্বর থাকাকালে শিশু জন্ম হলে বাচ্চার জন্মগত জ্বরে ভোগার আশঙ্কা থাকে। এ ক্ষেত্রে বাচ্চার জীবন সংকটাপন্ন হয়ে পড়ে।