শরীরের স্বাভাবিক শারীরবৃত্তিয় প্রক্রিয়ায় প্রতিদিন ৫০-১০০ টি চুল পড়া খুবই স্বাভাবিক। সমস্যা দেখা দেয় যখন প্রতিদিন গড়ে এর চাইতে অনেক বেশি পরিমাণে চুল পড়া শুরু হয়। চুল পড়ার সঙ্গে দেখা দেয় আরো কিছু উপসর্গ- নতুন চুল একেবারেই গজাতে চায় না এবং চুল বড় হতেও অনেক লম্বা সময় নেয়। এই সকল উপসর্গ একসাথে দেখা দেওয়ার ফলে পাতলা হয়ে যায় চুলের গোছা।
কেন দেখা দেয় অতিরিক্ত চুল পড়ার সমস্যা? এর পেছনে থাকে বেশ কিছু গুরুত্বর কারণ।
চুলের রঙ এর মতো চুলের ঘনত্ব ও বৃদ্ধির হারের উপরেও থাকে জেনেটিকের প্রভাব। জিনের বৈশিষ্ট্যর উপর নির্ভর করেই চুল গজায়, বৃদ্ধি পায় ও পড়ে যায়। নির্দিষ্ট একটা বয়সের অনেকের চুল বড় হওয়া বন্ধ হয়ে যায়। তবে যারা জেনেটিকের লটারি জিতে যায় তাদের বিষয়টি ভিন্ন।
আমরা সবাই জানি বয়স বৃদ্ধির কারণে চুলে পরিবর্তন দেখা দেয়। কালো চুল সাদা হয়ে যাওয়া একটি পরিবর্তন। রঙ পরিবর্তনের সঙ্গে চুলের বৃদ্ধির হারও কমে যায়। বয়সের কারণে ফলিকলের বৃদ্ধি কমতে শুরু করে পরিণত বয়সে।
এই অটোইমমিউন কন্ডিশনের জন্য শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতায় সমস্যা দেখা দেয়। যে কারণে চুলের ফলিকলের বৃদ্ধি বন্ধ হয়ে যায়। ফলে মাথার কিছু অংশে টাক পড়ে যায়। কারোর ক্ষেত্রে অ্যালোপেশিয়া টোটালিস দেখা দেয়। যা হলে পুরো মাথার সব চুল পড়ে যায়। এই সমস্যা মোকাবিলায় জেনেটিক কোন কাজই করতে পারে না।
অতিরিক্ত শারীরিক ও মানসিক চাপের ফলে টেলজেন ইফ্লুভিয়াম (Telogen Effluvium) নামক একটি শারীরিক সমস্যা বৃদ্ধি পায়। এই কন্ডিশনের ফলে ৩০ শতাংশ চুলের বৃদ্ধি বন্ধ হয়ে যায় এবং চুল দ্রুত পড়া শুরু করে। ওজন অতিরিক্ত কমে যাওয়া, উচ্চ তাপমাত্রা, ইনফেকশনের মতো সমস্যাগুলোই সাধারণত এই কন্ডিশন বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
গর্ভাবস্থা ও মেনোপেজের সময় হরমোনের পরিবর্তনের ফলে টেলজেন ইফ্লুভিয়ামের সমস্যাটি বৃদ্ধি পায়। ফলে তুলনামূলকভাবে অন্য সময়ের চাইতে চুল পড়ার হার বেশি দেখা দেয়। তবে বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই এই সমস্যাটি ৬ থেকে ২৪ মাস পর্যন্ত স্থায়ী হয়।
এমনকি থাইরয়েডের সমস্যা থেকেও চুল পড়া ও পাতলা হয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটে থাকে। অপর্যাপ্ত হরমোন (হাইপোথারডিজম) এবং অতিরিক্ত হরমোন (হাইপারথাইরডিজম) চুলের বৃদ্ধি ও চুল পড়ার হারের উপর প্রভাব ফেলে।
হাইপোথারডিজম হবার ফলে দেখা দেয় এই সকল শারীরিক লক্ষণ- ক্লান্তিভাব, কোষ্ঠ্যকাঠিন্য, ঠাণ্ডার সমস্যা, ঘাম একেবারেই না হওয়া, ওজন বেড়ে যাওয়া ও চেহারা ফুলে যাওয়া।
অন্যদিকে হাইপারথাইরডিজমের কিছু সাধারণ লক্ষণ হলো- ওজন কমে যাওয়া, মানসিক দুশ্চিন্তা, ঘাম হওয়া, ডায়রিয়া ও পেশীর দুর্বলতা।
গবেষণা থেকে জানা যায়, শরীরে পুষ্টি উপাদানের ঘাটতির ফলে চুল পড়ার সমস্যা দেখা দেয়। যদি নখ ভেঙ্গে যাওয়া, ঠোঁটের কোনায় ফেটে যাওয়া, নিঃশ্বাসের সমস্যা, ঠান্ডা হাত-পায়ের সমস্যা ও অতিরিক্ত চুল পড়ার সমস্যা দেখা দেয়, তবে বুঝতে হবে শরীরে আয়রনের অভাব দেখা দিয়েছে। একইভাবে জিংক, বায়োটিন ও প্রোটিনের অভাবেও চুল পড়ার সমস্যা তৈরি হয়।
এছাড়াও চুলের গোঁড়ায় ইনফেকশন দেখা দেওয়া, হাই-পাওয়ারের ওষুধ সেবনের ফলেও চুল পড়ার হার বৃদ্ধি পায়।