বিশ্বজুড়ে করোনা সংক্রমণ ক্রমেই দীর্ঘায়িত হচ্ছে। করোনা নিয়ে গবেষণায় প্রতিনিয়তই অনেক অজানা তথ্য বেরিয়ে আসছে। আতঙ্কিত না হয়ে এই ভাইরাসটি সম্পর্কে সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা। যুক্তরাষ্ট্রের মেরিল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সংক্রামক ব্যাধি বিশেষজ্ঞ ডা. ফাহিম ইউনুস বিভিন্ন ধরনের ভাইরাস নিয়ে প্রায় ২০ বছর ধরে কাজ করছেন। পেশাগত দায়িত্বের পাশাপাশি মহামারী করোনাভাইরাস নিয়ে সচেতনতা সৃষ্টিতে টুইটারে কিছু তথ্য প্রকাশ করেছেন। তিনি লিখেছেন, ‘আমরা কত মাস বা কত বছর কভিড-১৯ এর সঙ্গে থাকব তা কেউ জানি না। এই অজানা সময়কে অস্বীকার করার যেমন দরকার নেই, তেমনি আতঙ্কিত হওয়ারও প্রয়োজন নেই। করোনা ভাইরাস পর্যবেক্ষণ করে আমরা বিজ্ঞানীরা এ পর্যন্ত যা বুঝেছি তাতে বলতে পারি, আমাদের জীবনকে অহেতুক কঠিন করার কোনো প্রয়োজন নেই। আমাদের ভালো থাকার জন্য দরকার করোনা নিয়ে সত্য তথ্যগুলো জানা।
তিনি লিখেছেন, করোনা থেকে বাঁচার শুধু তিনটি উপায় আছে। সেগুলো হলো-
১. মাস্ক পরা
২. হাত ধোয়া
৩. ১.৮ মিটার দূরত্ব বজায় রাখা।
এই তিনটি কাজ ভাইরাস থেকে রক্ষা পাওয়ার সেরা পদ্ধতি।
এছাড়াও তিনি করোনাভাইরাস নিয়ে আতঙ্কিত না হয়ে করোনা সর্ম্পকে সঠিকভাবে জানার পরামর্শ দেন। তিনি জানান-
- গ্রীষ্মে ভাইরাসটি তার প্রভাব হ্রাস করে না। ভারত, ব্রাজিল এবং আর্জেন্টিনায় গ্রীষ্মকালেই ভাইরাসটি খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে।
- লিটার লিটার গরম পানি খেয়ে কোনো লাভ নেই। কারণ সেল ওয়ালে ঢুকে যাওয়া ভাইরাসকে পান করা গরম পানির উষ্ণতা কোনো ক্ষতি করতে পারে না। ভিনেগার, সোডা, আদার রস, বিভিন্ন হারবের রস জাতীয় জিনিস পান ভাইরাস থেকে রক্ষা করে না। বৈজ্ঞানিক কোনো প্রমাণ নেই।
- যদি আপনার বাড়িতে করোনা আক্রান্ত রোগী না থাকে তবে বাড়ির মেঝে, দেয়াল, উপরিভাগের সবকিছুকে জীবাণুমুক্ত করার কোনো দরকার নেই, কোনো লাভ নেই।
- কার্গো প্যাকেজ, শপিং ব্যাগ, পেট্রলপাম্প, শপিং কার্ট বা ব্যাংকের এটিএম মেশিন সংক্রমণ সৃষ্টি করে না। আপনার হাত ধুয়ে নেবেন বারবার এবং যথারীতি আপনার জীবন যাপন করুন।
- করোনা খাদ্যর মাধ্যমে ছড়ানো রোগ নয়। এটি ফ্লুর সংক্রমণের মতো হাঁচি কাশির ফোঁটাগুলোর সঙ্গে সম্পর্কিত। বাইরের খাবার থেকে করোনা সংক্রমণ হওয়ার কোনো প্রমাণিত ঝুঁকি পাওয়া যায়নি। তবে আপনার অর্ডারকৃত খাবারগুলোকে আপনি চাইলে মাইক্রোওয়েভে কিছুটা গরম করে নিতে পারেন।
- অনেকে মনে করেন সুয়ানা ভাপ নিলে গরম বাষ্প শরীরে প্রবেশ করে করোনা ভাইরাসগুলোকে হত্যা করবে, এটা কখনই না। যা কোষে প্রবেশ করেছে তাকে কোনো প্রকার উষ্ণতা ধ্বংস করতে পারবে না, তা পানি বা বাষ্প যাই হোক।
- অনেক অ্যালার্জি এবং অন্য ভাইরাস সংক্রমণ হলেও আপনার গন্ধ অনুভূতি হারাতে পারেন। গন্ধ না পাওয়া করোনার অনির্দিষ্ট লক্ষণ, সুনির্দিষ্ট লক্ষণ নয়।
- বাইরে থেকে বাড়ি ফিরে আসার পর তাৎক্ষণিক জামাকাপড় পরিবর্তন করার এবং গোসল করার কোনো দরকার নেই। গোসলের শুদ্ধতা একটি পুণ্যের কাজ হলেও করোনা ঠেকাতে এটির উল্লেখযোগ্য প্রমাণ নেই।
- করোনা ভাইরাসটি বাতাসে ভেসে থাকে না। এটি একটি ড্রিপ সংক্রমণ যার জন্য ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ প্রয়োজন। তাই আপনি খোলা পার্কের নির্মল বাতাসে অন্য মানুষের সঙ্গে দূরত্ব বজায় রেখে ঘুরে আসতে পারেন।
- করোনা মানুষের জাতি বা ধর্ম বুঝে আক্রমণ করে না, যে কোনো ধরনের যে কোনো জাতির মানুষ এতে আক্রান্ত হতে পারে।
- অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল বিশেষ সাবান ব্যবহার না করে যে কোনো সাধারণ সাবান ব্যবহার করাই যথেষ্ট। ভাইরাস কোনোভাবেই ব্যাকটেরিয়া নয়।
- জুতার মাধ্যমে করোনা হওয়ার সম্ভাবনা দিনে মাথায় দুবার বজ্রপাত হওয়ার মতো। আমি ২০ বছর ধরে ভাইরাসের বিরুদ্ধে কাজ করে যাচ্ছি, বুঝেছি ড্রপ সংক্রমণ কখনো জুতার মাধ্যমে ছড়িয়ে যায় না।
- সারাক্ষণ গ্লাভস পরে থাকা একটি ভুল ধারণা, ভাইরাসটি গ্লাভসে জমে থাকতে পারে এবং তারপর নিজের অজান্তে আপনার মুখটি স্পর্শ করলে সহজেই সংক্রমণ হতে পারে। রেস্টুরেন্ট কর্মীরা একটি গ্লাভস পরেই সব খাদ্য স্পর্শ করতে থাকে, এটি প্রায়ই বদলানো দরকার। সাধারণ মানুষদের জন্য গ্লাভসের বদলে বারবার হাত ধোয়াই ভালো।
- দীর্ঘক্ষণ ধরে একটানা মাস্ক পরলে তা শ্বাস-প্রশ্বাসে ব্যাঘাত ঘটায় এবং অক্সিজেনের স্তরে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। তাই মাস্ক শুধু লোকসমাগম ও ভিড়ের মধ্যে পরবেন।