হঠাৎ করেই আলোচনায় ‘আলঝেইমার রোগ’। এটি সাধারণ মানুষের কাছে একেবারে অপরিচিত রোগ। এ রোগ সম্পর্কে সহজ করে বললে দাঁড়ায়—‘মস্তিষ্কের স্মৃতিভ্রমজনিত সমস্যা’। এভাবে বললে হয়তো অনেকেই খুব সহজেই এ রোগটি সম্পর্কে বুঝতে পারবেন।
অনেকেই হয়তো বলবেন— ‘বয়স বাড়লে তো স্মৃতিভ্রম সমস্যা সকলেরই হয়। এটা তো স্বাভাবিক।’ তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এটিকে বৈশ্বিক রোগ হিসেবে ঘোষণা করেছে অনেক আগেই। প্রতি বছর ২১ সেপ্টেম্বর ‘বিশ্ব আলঝেইমার সচেতন দিবস’ হিসেবে পালন করা হয়ে থাকে।
আর গবেষকরা বলছেন— ‘আলঝেইমার মারাত্মক রোগ। বিশ্বে অসংখ্য মানুষ এ রোগে আক্রান্ত। তবে ব্রিটেনে এ রোগে আক্রান্ত হয়ে চরম অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন প্রায় ১০ হাজার রোগী। যাদের দ্রুত চিকিৎসা প্রয়োজন।’
এ তো গেল উন্নত বিশ্বের তথ্য। বাংলাদেশ-ভারত তথা ভারতীয় উপমহাদেশে এ রোগের বিস্তার কতটা? ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভির তথ্য অনুযায়ী ভারতীয় উপমহাদেশে ২০১৯ সাল পর্যন্ত এ রোগে আক্রান্ত প্রায় ৪ লাখ মানুষ। তবে বাংলাদেশে এ রোগে আক্রান্তের নির্দিষ্ট সংখ্যা সম্পর্কে স্পষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি।
হঠাৎ আলোচনায় আলঝেইমার রোগ
আলঝেইমার রোগ ও প্রতিষেধক নিয়ে গবেষণা চলছে দীর্ঘদিন। তবে দীর্ঘ ২০ বছরের ট্রায়াল শেষে যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন (এফডিএ) গত ৮ জুন এ রোগে আক্রান্তদের চিকিৎসায় উদ্ভাবিত ‘অ্যাডুকেনুম্যাব’ নামে একটি ওষুধের অনুমোদন দিয়েছে। ওষুধটি বায়োজেন নামে একটি মার্কিন ওষুধ কোম্পানি তৈরি করেছে। এ ওষুধের অনুমোদনের পরই আলঝেইমার নিয়ে মানুষের কৌতূহল বেড়েছে।
আলঝেইমার রোগ কী?
আলঝেইমার একটি সিস্টেমিক ব্যাধি। এটি এক ধরনের ডিমনেশিয়া যা মস্তিষ্ককে দুর্বল করে তোলে। যার কারণে আক্রান্ত ব্যক্তির কিছুই মনে থাকে না। ফলে আলঝেইমার রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি ছোট ছোট জিনিস ভুলে যাওয়া এবং মানুষের মুখ সনাক্তকরণে অসুবিধায় পড়েন। এর ভয়াবহ রূপ হতে পারে আপনজন, নিকট আত্মীয়, বন্ধুবান্ধব এমনকি নিজের ছেলেমেয়েকেও চিনতে না-পারা।
লক্ষণ ও উপসর্গ
প্রাথমিক পর্যায়ে আলঝেইমারে আক্রান্ত ব্যক্তির সময় জ্ঞান থাকে না, জিনিস হারিয়ে ফেলেন, খারাপ অনুমানের কারণে খারাপ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে থাকেন, সময়মতো দৈনিক কাজ শেষ করতে অক্ষমতা, সামাজিক কাজ থেকে বিরত থাকা, কথা বলতে সমস্যা, দৈনন্দিন জীবনে প্রভাবিত স্মৃতি সমস্যা।
দ্বিতীয় পর্যায়ে আলঝেইমারে আক্রান্ত ব্যক্তির অকারণে রাগ বাড়ে, বন্ধু-বান্ধব এবং পরিবারের সদস্যদের চিনতে সমস্যা, পড়ালেখায় অসুবিধা, নতুন কাজ শিখতে এবং বুঝতে অক্ষম, কান্নাকাটি, উদ্বেগ, ঘোরাঘুরি, অস্থিরতা ইত্যাদির মতো আচরণ দেখা যায়।
আক্রান্ত ব্যক্তির গুরুতর লক্ষণগুলো হলো- ওজন হ্রাস, খিঁচুনি হওয়া, ত্বকে সংক্রমণ, হতাশা, খাবার গিলতে সমস্যা, প্রস্রাব কম হওয়া ইত্যাদি।