উচ্চ রক্তচাপ একটি অতি পরিচিত সাধারণ সমস্যা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুসারে, বিশ্বব্যাপী প্রায় ১.১৩ বিলিয়ন মানুষের উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে। সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে হলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখার বিকল্প নেই। কিন্তু আমাদের খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাপনের নানা অস্বাস্থ্যকর অভ্যাসের কারণে উচ্চ রক্তচাপ বা নিম্ন রক্তচাপ এখন একটি সাধারণ সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তবে সমস্যাটি নিয়ে আমাদের মধ্যে অনেক ভুল ধারণা রয়েছে। চিকিৎসাবিজ্ঞানে যার কোনো ভিত্তি নেই। আসুন রক্তচাপ বা ব্লাড প্রেসার নিয়ে আমাদের সমাজের প্রচলিত কিছু ভ্রান্ত ধারণা বা বিশ্বাস সম্পর্কে জেনে নিই-
মিথ: হাইপারটেনশন গুরুতর নয়
ঘটনা: উচ্চ রক্তচাপকে নীরব ঘাতক বলা হয়। সময়মতো চিকিৎসা না করালে এটি হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক, কিডনিজনিত রোগ, হার্ট ফেইলিওর, দৃষ্টি হ্রাস, যৌন অক্ষমতা এবং পেরিফেরাল আর্টারি ডিজিজের মতো স্বাস্থ্যগত সমস্যার ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলতে পারে।
মিথ: যদি এটি পরিবারে থাকে তবে আপনার পক্ষে করার মতো কিছুই নেই
ঘটনা: হাইপারটেনশন কিছু ক্ষেত্রে জিনগত হতে পারে। তবে এটি অনিবার্য নয় যে পরিবারে থাকলে হবেই। এটি এমন ব্যাক্তিদের হতে পারে যারা জিনগতভাবে সংবেদনশীল। এছাড়াও, অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন, দারিদ্রতা, ডায়েট এবং শারীরিক নিষ্ক্রিয়তার কারণে ব্লাড প্রেসার হতে পারে।
মিথ: এটি বয়সের সাথে অনিবার্য
ঘটনা: উচ্চ রক্তচাপ অনিবার্য নয় এবং বার্ধক্যের স্বাভাবিক অংশ নয়। বয়স্ক এবং প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে উচ্চ রক্তচাপ সাধারণ হলেও এটি মধ্যবয়সী এবং অল্প বয়সীদের মধ্যেও দেখা যায়।
মিথ: উচ্চ রক্তচাপ থাকলে দৃশ্যমান লক্ষণ থাকবে
ঘটনা: উচ্চ রক্তচাপ শনাক্ত করার একমাত্র উপায় হলো রক্তচাপ পরিমাপ করা। কারো উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে তা বোঝাতে সাধারণত কোনো লক্ষণ থাকে না। ফলে অনেকেই জানেন না যে তারা উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন।
মিথ: টেবিল লবণ খেলে উচ্চ রক্তচাপ হয়
ঘটনা: বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা স্বাস্থ্যকর শরীরের জন্য প্রতিদিন ৫ গ্রাম লবণ ব্যবহারের পরামর্শ দেয়। তবে সামগ্রিক লবণের পরিমাণ সীমাবদ্ধ করার জন্য কেবল টেবিল লবণ এড়ানোই যথেষ্ট নয়। ১০ টি অন্যান্য খাবার যা আপনার খাবারে লবণের পরিমাণ বাড়িয়ে তুলতে পারে তার মধ্যে রুটি, পিজ্জা, স্যান্ডউইচস, ঠান্ডা কোক, ফ্রোজেন মাংস, স্যুপ, টাকোস, চিপস, পপকর্ন, মুরগী, পনির এবং ডিম।
মিথ: উচ্চ রক্তচাপ কমে গেলে ওষুধ বন্ধ করতে পারেন
ঘটনা: উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ গ্রহণকারী ব্যক্তিরা যদি দেখতে পান যে তাদের রক্তচাপ স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এসেছে। তার অর্থ এই নয় যে ওষুধ সেবন বন্ধ করতে পারেন। ওষুধ হ্রাস বা বন্ধ করার জন্য আপনার ডাক্তারের পরামর্শ অনুসরণ করুন।
মিথ: হাইপারটেনশন নিরাময়যোগ্য
ঘটনা: উচ্চ রক্তচাপের কোনো নিরাময় নেই। তবে পরিস্থিতিট পরিচালনা করা এবং স্বাস্থ্যের উপর এর প্রভাব হ্রাস করার উপায় রয়েছে। অ্যালকোহল গ্রহণ কমানো, স্বাস্থ্যকর ডায়েট খাওয়া, অনুশীলন, স্ট্রেস হ্রাস, ধূমপান ছেড়ে দেওয়া, স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রেখে ওষুধ খাওয়ার মাধ্যমে আপনি আপনার বিপি নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন।
মিথ: শুধুমাত্র পুরুষদেরই উচ্চ রক্তচাপ হয়
ঘটনা: পুরুষদের হাইপারটেনশন হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকলেও প্রত্যেকে হাইপারটেনশন বিকাশ করতে পারে। উচ্চ রক্তচাপ বিকাশের জন্য প্রত্যেকেরই একই ঝুঁকি রয়েছে।
তথ্যসূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া