শরীরে পানি স্বল্পতা দেখা দিলেই নানাবিধ অসুস্থতা বাসা বাঁধা শুরু করে। যে কারণে বিশুদ্ধ পানি পানের প্রতি সবসময় জোর দেওয়া হয়। কিন্তু এই পানি কীভাবে সংরক্ষণ করা উচিৎ, কী ধরণের পদার্থের পাত্রে পানি সংরক্ষণ করা স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী- সে বিষয়ের প্রতি একেবারেই জোর দেওয়া হয় না।
অথচ পানি যে পাত্রে সংরক্ষণ করা হয়, সেই পাত্রের উপাদান পানিতে পরিবর্তন ও পানিতে কেমিক্যাল রিঅ্যাকশন তৈরি করার জন্য দায়ী। বর্তমান সময়ে প্লাস্টিকের বোতলেই সংরক্ষণ করা হয় পানি। সহজলভ্যতা ও বহনে সুবিধা থাকায় প্লাস্টিকের বোতল বেশি জনপ্রিয়। কিন্তু আসলে প্লাস্টিকের বোতলে পানি সংরক্ষণ কতটা নিরাপদ? প্লাস্টিকের বোতল ব্যতীত অন্য কোন পদার্থের তৈরি বোতলে পানি রাখা নিরাপদ সেটাও সঠিকভাবে জানি না আমরা। আজকের ফিচারে সেটাই আলোচনা করা হলো।
প্রতিটি প্লাস্টিকের বোতলে এক প্রকারের কেমিক্যাল উপাদান আছে। যার নাম বিসফেনল এ (Bisphenol A), যাকে বিপিএ ও বলা হয়ে থাকে। এই কেমিক্যালের সঙ্গে ক্যান্সার সহ নানান ধরনের শারীরিক সমস্যার যোগসূত্র রয়েছে। প্লাস্টিকের বোতলে ক্রমাগত পানি পানের ফলে শরীরে বিষাক্ত এই পদার্থের মাত্রা বেড়ে যায়। বিপিএ গর্ভবতী নারীদের গর্ভস্থ সন্তানের স্বাস্থ্য ও ওজনের উপরেও প্রভাব ফেলে। এমনকি বিপিএ মস্তিষ্কের গঠন ও আচরণের উপরে নেতিবাচক প্রভাব তৈরি করে। বিশেষ করে যেসকল প্লাস্টিকের বোতল কিছুদিন ব্যবহারের পড়েই গন্ধ হয়ে যায়, সেগুলো ব্যবহার করা চূড়ান্ত ক্ষতিকর।
কাঁচ এমন একটি জড় পদার্থ, যা দ্বারা তৈরি পাত্র কিংবা বোতলে পানি সংরক্ষণ করা হলে পানিতে কোন প্রভাব পড়ে না। তবে পানি সংরক্ষণের জন্য কাঁচের বোতল কেনার সময় একটা বিষয়ের প্রতি খেয়াল রাখতে হবে। কাঁচের তৈরি বোতল যেন লিড ও ক্যাডমিয়াম মুক্ত হয়। ঘরে পানি সংরক্ষণের ক্ষেত্রে কাঁচের বোতলের কোন বিকল্প নেই। কাঁচের বোতলে পানি সংরক্ষণের একটাই সমস্যা- বাইরে বা ভ্রমনে কাঁচের বোতল বহন করা সম্ভব হয় না।
পানির কেমিক্যাল ব্যালেন্স ঠিক রাখতে সাহায্য করে তামা। ফলে তামার পাত্রে পানি সংরক্ষণের ফলে শরীরে কোন নেতিবাচক প্রভাব পড়ে না বা ক্ষতি হয় না। উপরন্তু তামার পাত্রে পানি সংরক্ষণের ফলে শারীরিক বেশ কিছু উপকারিতা পাওয়া যায়। তামা ‘প্রাকৃতিক জীবাণুনাশক’ উপাদান হিসেবে কাজ করে। ফলে পানিতে থাকে ক্ষতিকর ও রোগ তৈরিকারী জীবাণু ধ্বংস করে। এমনকি তামার পাত্রে রাখা পানি পানের ফলে দৈনিক শরীরে যে পরিমাণ তামা বা কপারের প্রয়োজন হয়, তা পূরণ হয়।
এছাড়া তামা কোলেস্টেরলের মাত্রা, হৃদযন্ত্র ও রক্তের প্রেশার লেভেল নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখে। থাইরয়েডের কার্যকারিতা, ক্ষত সারানো, হিমোগ্লোবিন, শরীরের অ্যাসিড-অ্যালকালাইনের ব্যালান্সের উপরেও তামা ইতিবাচক প্রভাব তৈরি করে।
উপরের আলোচনা থেকে পরিষ্কারভাবেই বোঝা যাচ্ছে, কোন পদার্থের পাত্রে পানি সংরক্ষণ করা বর্জনীয় ও প্রয়োজনীয়। খুব স্বাভাবিকভাবে প্লাস্টিকের বোতলের ব্যবহার বেশি হলেও, চেষ্টা করতে হবে প্লাস্টিক ব্যবহারের হার যথাসম্ভব কমিয়ে আনা।