ছয় ঋতুর দেশ আমাদের এই বাংলাদেশ। শীতকাল মানেই এক অন্য অনুভূতি। বছরের প্রায় সবসময় কম বেশি শাক-সবজি ও ফলমূল হয়ে থাকে। তবে ষড়ঋতুর আবর্তে বাংলাদেশে শীতকালই শাক-সবজি ও ফলমূলের জন্য উপযুক্ত সময়। বাহারি শাক-সবজিতে সমৃদ্ধ শীতকাল মাছে-ভাতে বাঙালি পরিচয়টিকে যেন আরও পাকাপাকি করে তোলে একটি পরিপূর্ণ আহারের মাধ্যমে। শীতকালে এসব মৌসুমি শাক-সবজি বা ফল গ্রহণের মাধ্যমে সহজেই শরীরের চাহিদা মোতাবেক পুষ্টি উপাদান, বিশেষ করে ভিটামিন ও মিনারেলসের চাহিদা পূরণ সম্ভব। খাদ্যের উপাদানের মধ্যে ভিটামিন ও মিনারেলসের অন্যতম উৎস হল শাক-সবজি ও ফলমূল। মূলত ভিটামিন ও মিনারেলস শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে থাকে এবং আমাদের শরীরকে খাদ্যের শর্করা, আমিষ ও চর্বির ব্যবহারে সাহায্য করে। অর্থাৎ আমাদের শরীর রক্ষায় শাক-সবজি ও ফলমূলের গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে।
জানাবো ৫টি শীতকালীন সবজির পুষ্টিগুণ ও তাদের উপকারিতা সম্পর্কে-
শিশুদের অপুষ্টি দূর করে মটরশুটি
মটরশুঁটিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালরি; প্রতি ১০০ গ্রামে পাওয়া যায় ১২৫ কিলোক্যালরি। উদ্ভিজ আমিষের বড় ভাণ্ডার হল শিম। শিমে আমিষ ছাড়াও স্নেহ ও ফাইবারজাতীয় খাবার অংশ থাকে। শিমের আঁশ খাবার পরিপাকে সহায়তা করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য অনেকাংশে দূর করে। রক্তে কোলেস্টরোলের মাত্রা কমায়, যা হৃদরোগের ঝুঁকি অনেকাংশে হ্রাস করে পাকস্থলী ও প্লিহার শক্তি বাড়ায়। লিউকোরিয়াসহ মেয়েদের শরীরের বিভিন্ন সমস্যা দূর করে, শিশুদের অপুষ্টি দূর করে এবং পুষ্টি প্রদান করে থাকে।
শীতকালীন বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ করে ফুলকপি
ফুলকপিতে আছে ভিটামিন এ, বি, ও সি। এছাড়াও আছে আয়রন, ফসফরাস, পটাশিয়াম ও সালফার। গর্ভবতী মা, বাড়ন্ত শিশু এবং যারা অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রম করে তাদের জন্য ফুলকপি বেশ উপকারী একটা সবজি। ফুলকপি পাকস্থলির ক্যান্সার প্রতিরোধে বিশেষ ভূমিকা রাখে। শীতকালীন বিভিন্ন রোগ যেমন জ্বর, কাশি, সর্দি প্রতিরোধ করে। ফুলকপিতে বিদ্যমান ‘সালফোরাফোন’ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ ও ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে। এতে ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড রয়েছে, যা কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। এই সবজিতে খুব ভালো পরিমাণে ফাইবার রয়েছে, যা কোষ্ঠকাঠিন্যসহ পেটের নানা সমস্যা দূর করে। এই খাবার ওজন নিয়ন্ত্রণে বেশ কার্যকর।
দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখে গাজর
গাজর অত্যন্ত পুষ্টিকর, সুস্বাদু ও খাদ্যআঁশ সমৃদ্ধ শীতকালীন সবজি।তরকারি বা সালাদ হিসেবে এই সবজি খাওয়া যায়।গাজরের পুষ্টির উপাদান গুলি হলো — ক্যালোরি ৩০ গ্রাম, ডায়েটরি ফাইবার ২ গ্রাম, চিনি ৫ গ্রাম, প্রোটিন ১ গ্রাম, কার্বোহাইড্রেট ৭ গ্রাম, সোডিয়াম ৬০ মিলিগ্রাম, পটাসিয়াম ২৫০মিলিগ্রাম। এছাড়াও ক্যালসিয়াম দৈনিক চাহিদার ২শতাংশ, আয়রন ২শতাংশ, ভিটামিন এ ১১০ শতাংশ, ভিটামিন সি ১০ শতাংশ ঘাটতি পূরণ করে। গাজরে আছে বিটা ক্যারোটিন যা দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখে। অন্ত্রের ক্যান্সার প্রতিরোধ করে, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। গাজরে উপস্থিত ক্যারোটিনয়েড ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে। গাজরের সাথে মধু মিশিয়ে ত্বকে ব্যবহার করলে ত্বকের মরা কোষ দূর হয় ও ত্বক উজ্জ্বল হয়।
ক্যান্সার প্রতিরোধ ও হৃদরোগে কার্যকর টমেটো
টমেটো প্রচুর উপকারী একটি সবজি।এর প্রচুরঔষধই গুনও রয়েছে।এর পুষ্টি তালিকা এমন- প্রতি ১০০ গ্রাম টমেটোতে আছে ০.৯ গ্রাম আমিষ, ৩.৬ গ্রাম শর্করা, ০.৮ মি. গ্রাম আঁশ, ০.২ মি. গ্রাম চর্বি, ২০ কিলোক্যালরি শক্তি, ৪৮ মি. গ্রাম ক্যালসিয়াম, ২০ মি. গ্রাম ফসফরাস, ০.৬৪ মি. গ্রাম লৌহ, ৩৫১ মাইক্রোগ্রাম ক্যারোটিন ও ২৭ মি. গ্রাম ভিটামিন ‘সি’। টমেটোর লাইকোপেন শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে, ক্যান্সার প্রতিরোধ ও হৃদরোগে কার্যকর। নিয়মিত টমেটো খেলে পাকস্থলী ও অন্ত্র সুস্থ ও সবল থাকে। টমেটো মূত্রথলির অম্লতাকে নিরপেক্ষ রাখতে সাহায্য করে। ফলে মূত্রাশয়ের সংক্রমণ ও পাথর তৈরি হয় না।
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে ব্রোকলি
ব্রোকলি বা সবুজ ফুলকপি একটি কপি জাতীয় সবজি। শীতকালীন সবজির হিসেবে ব্রোকলি বর্তমানে আমাদের দেশে চাষ করা হচ্ছে। ব্রোকলিতে প্রচুর পরিমাণে আয়রন ও ক্যালসিয়াম বিদ্যমান। ব্রোকলি অত্যন্ত উপাদেয়, সুস্বাদু ও পুষ্টিকর একটি সবজি। এটি চোখের রোগ, রাতকানা, অস্থি বিকৃতি প্রভৃতির উপসর্গ দূর করে ও বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।