মানসিক চাপ বর্তমান সময়ে জীবনের অবিচ্ছিন্ন অংশে পরিণত হয়েছে। জীবন যুদ্ধে মানুষকে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। এই সমস্যা মোকাবিলা করতে গিয়ে আমাদের মস্তিষ্কের ওপর চাপ বাড়তে থাকে। মাঝেমাঝে সেটা এত বেশি হয়ে যায় যে, ব্যক্তি সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগে।
মানসিক চাপে পড়ে ব্যক্তি খিটখিটে মেজাজ, কাজে মন না বসা, কথা কম বলা, নিরানন্দ থাকা, নেতিবাচক চিন্তা, খাবারে অরুচী, সিদ্ধান্তহীনতা, বিষন্নতা ও ঘুমহীনতায় ভোগে। যা তার কর্ম জীবন থেকে শুরু করে পারিবারিক ও সামাজিক জীবনধারাকেও প্রভাবিত করে।
আমরা চাইলেই কিন্তু এসব চাপ এড়িয়ে যেতে পারি না। শুধু চিকিৎসার সাহায্যেও মানসিক চাপমুক্ত থাকা যায় না। মানসিক চাপে পড়লেই যে মনোবিজ্ঞানীর কাছে যেতে হবে তাও না। কিছু নিয়ম মেনে চললে দৈনন্দিন জীবনে আসা চাপগুলোকে নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। মানসিক চাপ কমাতে যা করতে পারেন……
কারণ খুঁজে বের করা: মানুষকে প্রায়ই বলতে শোনা যায়, মন ভালো নেই। যা ব্যক্তিকে সবকিছু থেকে বিমুখী করে তোলে। এজন্য প্রয়োজন ‘মন ভালো না থাকার কারণ’ খুঁজে বের করা। ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, আর্থিক ইত্যাদি নানা কারণে মন খারাপ হতে পারে। সেটা খুঁজে বের করতে পারলে মানসিক চাপ কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব।
কাউকে জানানো: মানসিক চাপ কমানোর আরেকটি বড় পন্থা হচ্ছে নিজের অবস্থা কাউকে জানানো। সমস্যা নিজের মধ্যে রেখে তা নিয়ে দিনরাত ভেবেও অনেক সময় কূলকিনারা পাওয়া যায় না। এসময় এমন কারো সাথে নিজের অবস্থার কথা শেয়ার করা জরুরি, যিনি আপনাকে জানেন ও বোঝেন। তবে এক্ষেত্রে অবশ্যই স্বার্থপর ও আত্মকেন্দ্রিক মানুষকে এড়িয়ে চলবেন।
কথা বলা: আমাদের সবচেয়ে বড় ভুল হচ্ছে, কোনো সমস্যায় থাকলে আমরা নিজেকে গুটিয়ে নেই। কারো সাথে মিশি না, কথা বলি না। ফলে সমস্যাটা সর্বদা মাথার ভেতর ঘুরতে থাকে, যা আমাদের চাপকে আরো বাড়িয়ে দেয়। এজন্য মানসিক চাপে থাকলে প্রিয়জন, বন্ধু-বান্ধবদের সাথে সময় কাটানো, কথা বলা প্রয়োজন। সমস্যা নিয়ে আলাপ করতে না চাইলেও স্বাভাবিক কথাবার্তা বলে মনকে চাপমুক্ত রাখা যায়।
পছন্দের কাজ করুন: যদিও সমস্যাগ্রস্থ মানুষের কোনো কিছুতেই মন বসে না, তবে এ সময়টা চুপচাপ বসে না থেকে নিজের ভালো লাগার কাজ করতে পারেন। তা হতে পারে বই পড়া, ঘুরতে যাওয়া, ছবি আঁকা, গান শোনা ইত্যাদি। এতে ক্ষণিকের জন্য হলেও চাপমুক্ত থাকা সম্ভব।
ঘুম: মানসিক চাপ কমানোর জন্য ঘুমের বিকল্প নেই। এ নিয়ে নতুন করে কিছু বলতে হয় না। তবে চাইলেও মানসিক চাপে থাকা অবস্থায় ঘুমানো যায় না। এক্ষেত্রে ঘুমানোর পূর্বে দীর্ঘ সময় নিয়ে গোসল করে নিতে পারেন, কিংবা কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করুন। যা আপনার মানসিক চাপকে দূরে সরিয়ে ঘুম আনতে সহযোগিতা করবে।
জোরে শ্বাস নিন: স্থায়ী না হলেও এই প্রক্রিয়াটি ক্ষণিকের জন্য আপনার মানসিক চাপকে দূরে সরিয়ে দেয়। দীর্ঘ সময় নিয়ে নিঃশ্বাস টানুন এবং ছাড়ুন। এতে শরীর ও মস্তিষ্কের কোষগুলো পর্যাপ্ত অক্সিজেন পায়। এভাবে কয়েকবার করতে থাকুন। তাৎক্ষণিকভাবে সমস্যাটা এড়াতে পারবনে।
ঘুরতে যাওয়া: অশান্ত মনকে শান্ত করার জন্য ভ্রমণের কোনো বিকল্প নেই। মানসিক চাপের সাথে পরিবেশ খুবই সম্পর্কযুক্ত। নিজের কম্পোর্টজোন আপনার দুশ্চিন্তাকে প্রশ্রয় দেয়। তাই এই সময় নতুন কোনো স্থান থেকে ঘুরে আসতে পারেন। ঢেউ খেলানো সাগর পাড়, সবুজে ঘেরা পাহাড় কিংবা নজরকাড়া কোনো স্থাপনা আপনার মনকে হালকা করে তুলবে।
ধর্মীয় কাজ করুন: আপনি যে ধর্মেরই হোন না কেন ধর্মীয় কার্যাবলি আপনার মনে প্রশান্তি আনবে। এতে অনাবিল শান্তি খুঁজে পাওয়া যায়। তাই যেকোনো সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে ধর্মীয় কাজে মনোনিবেশ করতে পারেন। যা আপনাকে যাবতীয় দুনিয়াবি চিন্তাধারা থেকে মুক্ত রাখবে।