গ্রিক দেবী মেডিয়ার গল্প অন্যান্য দেব-দেবীদের থেকে অনেকটা ভিন্ন। তার ক্ষমতা অথবা কর্ম নয়; নিজের ২ সন্তানকে খুন করার গল্প, সকলকে অবাক করে। ধারণা করা হয়, স্বামীর ২য় বিয়ে করার পরই এই কাজ করেছিলেন তিনি। গ্রিক পুরাণে উল্লেখ রয়েছে, এই ঘটনায় হইচই পড়ে গিয়েছিল।
হইচই পড়ার মতোই ঘটনা বটে! মমতাময়ী মায়ের কাছে শিশু সবচেয়ে বেশি সুরক্ষিত। গর্ভধারণ থেকে শুরু করে জন্মদান, বড় করা- নিজের সর্বস্ব দিয়ে দেন মা। অথচ সেই শিশুকে নিজের হাতেই খুন! শুনলেও আত্মা কেঁপে ওঠে। বর্তমান যুগেও মায়ের হাতে সন্তান খুন হওয়ার ঘটনা নেহাত কম নয়! শুধু মা নয়- বাবারাও অনেক সময় এমন কিছু করে বসেন। কিন্তু কেন? রক্ষাকারী মা-বাবা কোন মানসিকতার কারণে পেছন থেকে ছুড়ি মারে? এই জঘন্য কাজ করার উদ্দ্যেশ কী?
কিছুদিন আগেই ভারতের এক এআই কোম্পানির সিইও সূচনা শেঠকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। ৪ বছরের শিশুকে খুন করে, লাগেজে গোয়া থেকে ব্যাঙ্গালোর নিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। পারিবারিক কলহ থেকে স্বামীর সাথে বিচ্ছেদের কারণেই খুন করেছেন বলে তথ্য দিয়েছে পুলিশ। সাধারণত এক শিশুর জন্ম, পরিবারে আনন্দের বন্যা নিয়ে আসে। এই নিয়ে সবচেয়ে বেশি উচ্ছ্বাসিত থাকে শিশুর বাবা-মায়েরাই। কিন্ত নানারকম ব্যক্তিগত ও পারিবারিক কলহের শিকার হয়ে তারা অপ্রত্যাশিত কিছু করে বসেন। আগে পশ্চিমাদেশগুলোতে এই ধরণের ঘটনা প্রায়ই শোনা যেত। এখন ভারত, বাংলাদেশের মতো এশিয়ার দেশগুলোতেও এই ধরণের অপরাধের সংখ্যা বেড়েই চলেছে।
ভারতীয় মনোবিজ্ঞানীরা এই নিয়ে গবেষণা করেছেন। জানা গেছে, অনেক সময় ভুল করে বা অনিচ্ছায় তারা এমন কাণ্ড করে বসেন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই খুনের পর, নিজেরাও আত্মহত্যা করার চেষ্টা করেন। কিছু ক্ষেত্রে মানুষের বিকৃত এবং সংকীর্ণ মনোভাব দেখা যায়। সঙ্গীর সাথে ঝামেলার কারণে অশান্তি হলে বা বিচ্ছেদের ঘটনা ঘটে। তখন তারা নিজের অসুখী হওয়ার কারণ হিসেবে দেখে নিজের সন্তানকেই। অথবা নতুনভাবে জীবন শুরু করার বাঁধা মনে করেন। এই চিন্তাভাবনা থেকে তারা অপকর্মে লিপ্ত হন। তবে অনেক বাবা-মাই নিজের অস্বাভাবিক দাম্পত্যজীবনের কারণে শিশুকে হত্যা করে বসেন। তাদের ধারণা- এভাবে তারা নিজের শিশুর কষ্ট কমিয়ে দিচ্ছেন।
এক সমীক্ষায় দেখা যায়, ২০০০ সাল থেকে ২০২০ সাল অবধি দক্ষিণ এশিয়ায় ১২টি এমন শিশু হত্যার ঘটনা ঘটেছে; যেখানে খুনী শিশুর নিজের জন্মদাতা। ভারতে গত এক বছরে এক ডজন মায়ের বিরুদ্ধে সন্তান খুন করার অভিযোগ উঠেছে। অবাক করার ব্যাপার হচ্ছে তারা অধিকাংশই শিক্ষিত এবং সচ্ছল পরিবারের সদস্য।
গতবছর বাংলাদেশেও এরকম ঘটনা ঘটেছে। শশুড়বাড়ির অত্যাচারে কয়েক দফায় ৩ সন্তান নিয়ে বাপের বাড়ি গিয়েছিলেন গৃহিণী। পরিবারের সদস্যদের কথায়, ফিরে গিয়ে সংসার গোছানোর চেষ্টা করেন বার বার। অবশেষে সইতে না পেরে সন্তানদের নিয়ে নদীতে ঝাপ দেন। ছোট ২ ছেলে-মেয়ে মারা যায়। বড় ছেলে এবং মা-কে জীবিত উদ্ধার করা হয়। আশংকার ব্যাপার হলো, দিনদিন এমন ঘটনা বেড়েই চলেছে।
তথ্যসূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা