যেকোনো কাজে সফল হতে চাইলে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হতে হয়, আর তার সাথে অবশ্যই মনোযোগ ধরে রাখার ক্ষমতা থাকা প্রয়োজন। ছোট-বড় সকল কাজই পরিপূর্ণ মনোযোগ দিয়ে করলে সে কাজের মানের অনেকটা ভালো হয়। কাজের ব্যাপারে মনোযোগী না হতে পারলে কাজ কঠিন মনে হয় এবং মস্তিষ্কে চাপ পড়ে বেশি। এতে মানসিক ভাবে বিধ্বস্ত হয়ে যায় মানুষ। তাই চিন্তাশক্তি জাগ্রত করার চর্চা করতে হবে।
মননশীলতা চর্চার মাধ্যমে মানসিক চাপ কমে, যেকোনো কাজ গুছিয়ে করা যায়। এতে ক্লান্তিও দূর হয়। ইংল্যান্ডের ‘দ্য ইউনিভার্সিটি অব নোটিংহাম’ এর গবেষকরা জানিয়েছেন মননশীলতার চর্চা করা একটি ভালো অভ্যাস। এতে মানসিক চাপ দূর হয় এবং দুশ্চিন্তা কমে। আমেরিকান সাইকোলজিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের পরামর্শ দেন বৌদ্ধদের প্রাচীন মননশীল চর্চা অনুশীলন করার।
ভারতীয় চিকিৎসক শৌনক অজিঙ্কা বলেছেন কিভাবে বৌদ্ধ পদ্ধতিতে মননশীলতা চর্চা করা যায়। সেগুলো জেনে নেওয়া যাক:
১. শ্বাস-প্রশ্বাস: শ্বাস-প্রশ্বাসের বেঁচে থাকার প্রাথমিক পদ্ধতি। তাই এর প্রতি মনোযোগী হওয়া প্রয়োজন। সারাদিনে কয়েক মুহূর্ত নিয়ে ধাপে ধাপে এই চর্চা করা উচিত। চোখ বন্ধ করে, ধীরে ধীরে গভীর শ্বাস নিন। নাকের ছিদ্রে বাতাস প্রবেশ করা এবং ছেড়ে দেওয়ার সময় বাতাসের সংবেদনের দিকে মনোযোগ দিন।
২. হাঁটা: কাজের ব্যস্ততার মধ্যেও কিছুটা সময় হাঁটুন। প্রয়োজনে অফিসের চারপাশেই কিছুক্ষণ হেঁটে নিন। খালি পায়ে হাঁটা বেশি লাভজনক। সেসময় প্রতিটি পদক্ষেপের প্রতি মনোযোগ দিন। পায়ের মাটি স্পর্শ করার অনুভূতি, আপনার শরীরের নড়াচড়া, হাঁটার শব্দ, চারপাশে গন্ধ, যেখানে হাঁটছেন তার চারপাশে পরিবেশে এসবকিছুতে মনোযোগ দেওয়ার চেষ্টা করুন।
৩. শ্রবণ: বলার চেয়ে শোনা সবসময়ই বেশি কার্যকর। জরুরি মিটিং বা কথোপকথনের সময় সক্রিয়তা বজায় রাখা প্রয়োজন। যার সাথেই কথোপকথন করবেন, তার সব কথা শোনার অনুশীলন করুন। এইসময় অবশ্যই আপনার মতামত এবং প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করে বাঁধা দেওয়া এড়িয়ে চলার চেষ্টা করবেন। শুধু তাদের শব্দ নয়, কণ্ঠস্বর এবং শারীরিক অঙ্গভঙ্গিও লক্ষ্য করবেন।
৪. খাওয়া: আপনার খাবারের স্বাদ, গঠন এবং গন্ধের ব্যাপারে সতর্ক হউন। যথা সম্ভব সতেজ এবং স্বাস্ত্যকর খাবার খাওয়া উত্তম। ধীরে ধীরে চিবালে প্রতিটি কামড়ের সাথে ভালোভাবে স্বাদ গ্রহণ করা সহজ হয়। খাওয়ার সময় কথা বলা, আপনার মোবাইল বা ডিভাইস ব্যবহার করা এড়িয়ে চলুন।
৫. কর্মক্ষেত্রে মননশীল পরিবর্তন: একটি কাজ শেষ করে নতুন কাজ শুরু করার আগে কিছুক্ষণ বিরতি নিন। নতুন কাজটি কিভাবে করতে চান সেই ব্যাপারে একটু পরিকল্পনা করে নেওয়া ভালো। তাছাড়া শারীরিক নড়াচড়ার মাধ্যমে জড়তা কাটিয়ে নিলে তা স্বাস্থ্যের জন্যও ভালো। হাত-পা অল্প নড়াচড়া করলে বা অল্পক্ষণ হেঁটে নিলে, একই ভঙ্গিতে অনেক্ষণ বসে থাকা এড়ানো যায়। ফলে শারীরিক ব্যথা হওয়ার প্রবণতা কমে। তাছাড়া আগের কাজের চিন্তাভাবনা দীর্ঘস্থায়ী হতে পারেনা।
৬. প্রযুক্তির ব্যবহার: বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ডিভাইসের মাধ্যমে জীবন সহজ হয়ে গেলেও, চোখ এবং মনের বিশ্রামে বাঁধা দেয় এসব ডিভাইস। স্ক্রিনে অনেক বেশি সময় দেওয়া বিষণ্ণতা এবং মানসিক অশান্তির মতো বড় সমস্যা বাড়াতে ভূমিকা রাখতে পারে। তাই এসব থেকে নিয়মিত কিছু সময়ের জন্য হলেও বিরতি নেওয়া উচিত। এতে অত্যধিক উত্তেজনা কমে এবং মস্তিষ্ক স্বচ্ছ থাকে।
তথ্যসূত্র: দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস