সবজি পছন্দ না হলেও, তার উপকারিতার দিকগুলো বিবেচনা করে একপ্রকার জোর করেই সবজি খেয়ে থাকেন প্রাপ্তবয়স্করা। কিন্তু সমস্যা দেখা দেয় শিশুদের নিয়ে। বিস্বাদ সবজি খাওয়ার প্রতি তাদের আগ্রহ তো থাকেই না, উল্টো জোর করেও তাদের সবজি খাওয়ানো সম্ভব হয় না।
অথচ বেড়ে ওঠার সময়ে ডিম-দুধ-কলার মতোই বিভিন্ন ধরণের সবজি খাওয়া প্রয়োজন শিশুদের। সবজির ভিটামিন, মিনারেল, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট শরীরকে সুস্থ রাখার পাশাপাশি শিশুদের বেড়ে উঠতেও সাহায্য করবে।
কিন্তু অলিখিত নিয়মের মতোই শিশু ও সবজি যেন উভয় উভয়ের প্রতিদ্বন্দ্বী! সন্তানকে সবজি খাওয়াতে গিয়ে হিমশিম খেতে হয় না, এমন মা খুঁজে পাওয়া দুষ্কর বটে। তাই বলে শিশুদের সবজি না খাইয়ে রাখা সম্ভব নয় অবশ্যই। এক্ষেত্রে কিছু পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে। যা শিশুদের সবজি খাওয়ার প্রতি আগ্রহী করে তুলবে এবং শিশুরা সহজেই সবজি খেতে চাইবে।
এটা মানতেই হবে যে, সবজি খুব একটা স্বাদু খাবার নয়। বড়রাই যেখানে সবজি খেতে পছন্দ করে না, সেখানে শিশুরাও যে পছন্দ করবে না সেটাই স্বাভাবিক। তাই স্বাদহীন সবজিকে সুস্বাদু করে রাঁধতে হবে। ঠিক এই কারণেই শিশুরা চিকেন ফ্রাই কিংবা ফ্রেন্স ফ্রাই খেতে পছন্দ করে। কারণে এই খাবারগুলো অনেক ফ্লেভারফুল হয়। শিশুদের জন্য সবজি তৈরির ক্ষেত্রেও এই দিকটায় নজর দিতে হবে। মাখনের সাহায্যে সবজি প্রস্তুত করলে সবজির স্বাদ বেড়ে যায় অনেকটা। এছাড়া তেলে না ভেজে ওভেনে বেক করে সবজির বিভিন্ন পদ তৈরি করলে সবজির গুণগত মান বজায় থাকার পাশাপাশি সবজি খেতেও মজাদার হয়।
শিশু কী খেতে ভালোবাসে? মাংস নাকি মাছ? যদি মাংস খেতে ভালোবাসে তবে মাংসের সঙ্গে সবজি রাঁধুন। চিকেন ভেজিটেবল যেভাবে রান্না করা হয়, সেভাবে বিভিন্ন ধরণের সবজি প্রস্তুত করুন মাংসের সঙ্গে। পছন্দের খাবার দেখে শিশুরা আগ্রহ নিয়েই সেই খাবারটি খেতে চাইবে।
অনেক শিশুই সবজি চিবিয়ে খেতে পছন্দ করে না। সেক্ষেত্রে কয়েক ধরণের সবজি একসাথে সেদ্ধ করে ঘন কিংবা পাতলা স্যুপ তৈরি করা যেতে পারে। সঙ্গে মুরগির স্টক কিংবা মাংস থাকলে শিশু পছন্দ করেই সেই স্যুপ খেতে চাইবে। এতে করে খুব সহজেই বিভিন্ন ধরণের সবজির পুষ্টিগুণ শিশুর শরীরে যাবে।
সাধারণত শিশুদের সঙ্গে নিয়ে রান্নাঘরের কাজ কিংবা রান্না করা হয় না। কিন্তু এই কাজটি খুব সহজেই শিশুদের সবজি খাওয়ার প্রতি আগ্রহী করে তুলতে পারে। কীভাবে? কোন শাক কিংবা সবজি ধোয়া ও কাটাবাছার সময় শিশুকেও সঙ্গে রাখুন। তাকে বলুন সবজিটির নাম, তার গুণাগুণ, এই সবজি কেন খাওয়া প্রয়োজন, এই সবজিটি রান্না করলে খেতে কেমন হবে ইত্যাদি। গল্পচ্ছলে বলা এই কথাগুলো শিশুদের মনের উপর সবজিটি সম্পর্কে ইতিবাচক প্রভাব তৈরি করবে। এতে করে সবজিটি খাওয়ার প্রতি সহজেই শিশু আগ্রহী হয়ে উঠবে।
শিশু সবজি খেতে না চাইলে স্বাভাবিকভাবেই আমরা জোরাজুরি শুরু করি। এই কাজটি একেবারেই করা যাবে না। শিশুদের মাঝে সাইকোলজিক্যাল একটি বিষয় কাজ করে। কোন বিষয়ে বেশি চাপ দিলে সেটার উপর তাদের অতিরিক্ত অনাগ্রহ দেখা দেয়। তাই সবজি খেতে না চাইলে একেবারেই জোর করা যাবে। চেষ্টা করতে হবে সবজির বিভিন্ন ধরণের রান্না তৈরি করে শিশুকে আকৃষ্ট করার।
এভাবে নিত্যনতুন পদ্ধতি অবলম্বন করে শিশুদের সবজি খাওয়ানোর বিষয়টি তুলনামূলক সহজ করে তুলতে পারলে, সবজি খাওয়ানো নিয়ে খুব একটা সমস্যার মুখোমুখি হতে হবে না।
আরও পড়ুন: ব্যস্ততা ও সুস্থতা থাকবে একসাথে!
আরও পড়ুন: গর্ভকালীন সময়ে অফিসের দায়িত্ব কাঁধে