‘নীল নবঘনে আষাঢ়গগনে তিল ঠাঁই আর নাহি রে।
ওগো, আজ তোরা যাস নে ঘরের বাহিরে।’
কবিগুরুর কলমে সৃষ্টি কবিতা ‘আষাঢ়’- এর লাইনে বর্ষার অঝর ধারার বর্ণনা ফুটে ওঠে। অনবরত মেঘগলা আকাশের নেমে আসা ধারা সিক্ত করে মাটিতে থাকা সবকিছু। বর্ষার সময়টা অন্যান্য সময়ের চেয়ে বেশ অনেকটা আলাদা। এই সময় রোদ-বৃষ্টিরপাল্লা চলে। ক্ষণে মেঘ, ক্ষণে বৃষ্টি! এইজন্য কখনো ভ্যাপসা গরম, কখনো বা স্যাঁতস্যাতে ভাব। আর বৃষ্টিতে ভিজলে ঠান্ডা বাতাসে অসুস্থ হয়ে পড়ার সম্ভাবনাও থাকে। তাই বর্ষার সময় সুস্থ থাকতে একটু সাবধান থাকতেই হয়।
আমাদের সুস্থতার অনেকাংশই নির্ভর করে খাদ্যতালিকার উপর। আমাদের গ্রহণ করা খাবারের দ্বারা উৎপন্ন শক্তিতেই দেহ চলে। তাই বর্ষার সময় খাবারের ব্যাপারেও সতর্ক হওয়া উচিত। অপ্রত্যাশিত রোগ বালাই এড়াতে বর্ষার মৌসুমে যেসব খাবার এড়িয়ে যেতে হবে তার উপদেশ দিয়েছেন ভারতীয় পুষ্টিবিদ গরিমাদেব বর্মণ-
১. শাকজাতীয় সবজি: পালং শাক, বাঁধাকপি, লেটুস ইত্যাদি শাক-সবজি বর্ষাকালে পুষ্টিমান হারিয়ে ফেলে। পরিবেশে আর্দ্রতার মাত্রা বৃদ্ধির কারণে দূষণের ঝুঁকি তৈরি হয়। তাছাড়া এসবের মধ্যে বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া এবং পরজীবী আশ্রয় নিতে পারে। তাই এসব খাবার খেলে হজমের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
২. রাস্তার খাবার: বর্ষার মৌসুমে রাস্তার খাবার ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। প্রায় সব দোকানেই অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে এইসব খাবার বানানো হয়। বর্ষার কাদামাটির কারণে রাস্তা এবং আশেপাশের এলাকা আরও অস্বাস্থ্যকর হয়ে যায়। এমনকি বাইরের দোকান থেকে কাটা ফলও খাওয়া উচিত নয়।
৩. সামুদ্রিক খাবার: এ মৌসুমে পানিবাহিত রোগ বাড়ে। তাই বর্ষায় সামুদ্রিক খাবার সহজেই দূষিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকতে পারে। পুড পয়জনিং প্রতিরোধে সাগরের মাছ, চিংড়ি এবং অন্যান্য সামুদ্রিক খাবার এড়িয়ে চলুন।
৪. দুগ্ধজাত পণ্য: দুগ্ধজাত খাদ্য-পণ্য, যেমন-দুধ, দই এবং পনির আর্দ্র। আবহাওয়ায় দ্রুত নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই দুধের তৈরি বাসি খাবারগুলো এড়িয়ে চলুন। নির্ভরযোগ্য প্রতিষ্ঠান বা ঘরে তৈরি হলে ব্যবহার করতে পারেন।
৫. তেলে ভাজা খাবার: ডুবো তেলে ভাজা খাবার পেটে ভারী ভাব সৃষ্টি হয়। এই খাবারগুলো হজম করা কঠিন হতে পারে। তাই নাস্তা ভাজা খাবার এড়িয়ে সেদ্ধ বা গ্রির করে খাবার তৈরিকে প্রাধান্য দিন।
৬. আমিষ: স্যাঁতস্যাতে পরিবেশে মাছ এবং বিশেষ করে মাংস দ্রুত পচে যেতে পারে। তাই আমিষজাতীয় খাবার খেলে অবশ্যই সদ্য রান্না করা খাবার খাবেন। বাসি খাবার খেলে অসুখে পড়ার সম্ভাবনা থাকে।
তথ্যসূত্র: দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস