তবে কেউ হয়তো বলবেন, সরল অংক মোটেও সহজ কিছু নয়। প্রতিটি সম্পর্কই আসলে কিছু সহজ সূত্রের সমন্বয়। সম্পর্ককে ঠিকভাবে গড়ে তুলতে ও ধরে রাখতে হলে উভয় পক্ষ থেকেই সমানভাবে আগ্রহী হওয়া প্রয়োজন। প্রয়োজন চেষ্টা করা।
একটা নির্দিষ্ট সময় পর অনেকেই অভিযোগ তোলেন, ভালোবাসার সম্পর্কটি আগের মতো নেই। সম্পর্কের মাঝে বোঝাপড়ার চাইতে দূরত্বটাই তৈরি হয়ে গেছে বেশি। এর জন্য দায়ি থাকে কিছু আচরণ। আপাতদৃষ্টিতে মনে হতেই পারে, এই আচরণগুলোই স্বাভাবিক। কিন্তু খুব সূক্ষ্মভাবে হলেও, এই আচরণগুলোই একটি ভালোবাসার সম্পর্কের উপর নেতিবাচক প্রভাব তৈরি করে দেয়।
প্রিয় মানুষটির সঙ্গে সময় কাটানোর সময় হাতে সবসময় মোবাইল থাকা, মোবাইল অনবরত সার্ফ করা, প্রিয় মানুষের কথায় মনোযোগ ঠিকভাবে না দেওয়া, তাকে পরিপূর্ণভাবে সময় না দেওয়া- এই সকলই সম্পর্কের মাঝে দূরত্ব তৈরি করে। প্রযুক্তির এই সময়ে যেকোন স্থানে বসে, যেকোন সময়েই কাজ সেরে নেওয়া যায়। তাই ভালোবাসার মানুষটির জন্য আলাদাভাবে কিছু সময় আলাদা করে রাখার বিষয়ে কোন ছাড় দেওয়া যাবে না একেবারেই।
ভালোবাসার সম্পর্কে হিংসা থাকবেই- একটা সময়ে এমন ধারণাকেই স্বাভাবিক হিসেবে ধরা হতো। কিন্তু বাস্তবতা হলো, সম্পর্কের মাঝে হিংসা বা জেলাসি কখনই ভালো ফলাফল বয়ে আনে না। বরং দেখা গেছে, এই হিংসার জন্মই হয় নিরাপত্তাহীনতা, অবিশ্বাস, আত্মবিশ্বাসের অভাব ও ভয় থেকে। ভালোবাসার সম্পর্কের মাঝে এতো ইতিবাচক দিকের প্রভাব থাকলে খুব স্বাভাবিকভাবেই সেই সম্পর্কে দূরত্ব চলে আসবে।
যুক্তিযুক্ত কোন কারণ ছাড়াই অকারণে বারংবার অভিযোগ করার ফলে অপরপক্ষ স্বাভাবিকভাবেই বিরক্তি বোধ করবে। কোন বিষয়ে খটকা লাগলে কিংবা কোন কিছু জানার থাকলে সরাসরি জিজ্ঞাসা করা, আলোচনা করা হবে সবচেয়ে ভালো উপায়।
শেষ কবে ভালোবাসার মানুষটির প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন বলুন তো! জিজ্ঞাসা করতেই পারেন, কোন কারণে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে হবে? ভালোভাবে যদি খেয়াল করা হয় তবে সম্পর্কে ভালোবাসার মানুষটির প্রতি বহু কারণেই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা যায়। সামান্য এই সৌজন্যমূলক আচরণটুকুই সম্পর্কে অনেকখানি ইতিবাচক ভূমিকা রাখে।
দুইজন দেশের দুইপ্রান্তে কিংবা শহরের দুই মাথায় থাকতে পারেন। সপ্তাহে কিংবা মাসেও হয়তো একবারের জন্য দেখা হয় না। ব্যস্ততার ভিড়ে সবাইকেই ছুটতে হয় নিজ নিজ জীবন নিয়ে। কিন্তু এর মাঝে যোগাযোগ যেন শিথিল না হয়। প্রযুক্তি যোগাযোগের সকল মাধ্যমেকেই সহজলভ্য করে দিয়েছে। হাজারো ব্যস্ততা মাঝে প্রিয় মানুষটির সঙ্গে মিনিট দুয়েক কথা বলার সময় সকলেই করে নিতে পারেন। এক্ষেত্রে যতটা গ্যাপ তৈরি হয়, সম্পর্কের মাঝেও দূরত্ব দেখা দিতে থাকে।
সম্ভবত এই পয়েন্টটাই বর্তমান সময়ে ভালোবাসার সম্পর্কে দূরত্ব তৈরি করতে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা পালন করে। আমাদের সবার আবেগই এখন বন্দী হয়ে গেছে অন্তর্জালের ইমোটিকনে। কিন্তু ভালোবাসার সম্পর্কের মতো স্পর্শকাতর সম্পর্কে কোনভাবে কোন বিষয়ে তর্ক ম্যাসেজিং এর মাধ্যমে করা উচিৎ নয়। এতে করে অপরপাশে থাকা মানুষটির সত্য অনুভূতিগুলো ঢাকা পড়ে যায় মোবাইলে পর্দায়। ছোট কিংবা বড় যেকোন বিষয়েই হোক না কেন, তর্ক করতে হবে মুখোমুখি। এতে করে পরস্পরের প্রতি অনুভূতিগুলো সম্পূর্ণভাবে প্রকাশ করা সম্ভব হবে।
আরও পড়ুন: সম্পর্কে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ