বই হাতে ঘন্টার পর ঘন্টা সময় কাটিয়ে দেওয়া, বইয়ের কাহিনির মাঝে নিজেকে হারিয়ে ফেলা, ক্রমশ গল্পের সাথে নিজেকে জড়িয়ে নেওয়ার মতো অনুভূতিগুলোর সামনে সবকিছুই খুব তুচ্ছ।
বই পড়া, বইয়ের মুদ্রণ ও বইয়ের স্বত্বাধিকারের বিষয়ে জনসচেতনা বৃদ্ধির জন্যেই আজকের দিন ২৩ এপ্রিল ‘বিশ্ব বই দিবস’ হিসেবে পালন করা হয়ে আসছে ১৯৯৫ সাল থেকে।
১৯৯৫ সালে থেকে ইউনেস্কোর উদ্যোগে বিশ্ব বই দিবস পালন করা হয়ে আসলেও, আদতে বিশ্ব বই দিবসের ধারণাটি আসে স্পেনের লেখক ভিসেন্ত ক্লাভেল আন্দ্রেস এর কাছ থেকে।
স্পেনের একজন বিখ্যাত লেখক, মিগেল দে থের্ভান্তেস মারা যান ১৬১৬ সালের ২৩ এপ্রিল। লেখক আন্দ্রেস ছিলেন তার ভক্ত। প্রিয় লেখককে স্মরণীয় করে রাখার উদ্দেশে ১৯২৩ সালের ২৩ এপ্রিল স্পেনে তিনি বিশ্ব বই দিবস পালন করা শুরু করেন। তবে দিনটি আন্তর্জাতিকভাবে বিশ্ব বই দিবস হিসেবে ইউনেস্কোর কাছ থেকে স্বীকৃতি পায় ১৯৯৫ সালে।
শরীর সুস্থ রাখার জন্য যেমন স্বাস্থ্যকর ও পুষ্টিকর খাবার খাওয়া প্রয়োজন, ঠিক তেমনিভাবেই ব্রেন তথা মস্তিষ্ককে সুস্থ, কার্যক্ষম ও সচল রাখার জন্য খাদ্য দেওয়া প্রয়োজন। সাম্প্রতিক সময়ের গবেষণা জানাচ্ছে, বই পড়ার অভ্যাসটি হলো মস্তিষ্কের খাদ্য!
আপনি বলতেই পারেন, ব্রেনকে সুস্থ ও সচল রাখার জন্য নিয়মিত ফিশ অয়েল কিংবা হলুদ খেলে, অথবা নতুন ল্যাঙ্গুয়েজ ক্লাস, পালজ বুক কিংবা অংক সমাধানের চেষ্টা করলেই তো হয়। যা একইসাথে স্মৃতিশক্তি ও মস্তিষ্কের জ্ঞানীয় কার্যকারিতা বৃদ্ধি করবে।
তবে জেনে রাখুন, উপরোক্ত সকল কাজের চাইতে মস্তিষ্কের জন্য সবচেয়ে উপকারী ও কার্যকর হলো বই পড়ার অভ্যাস। বই পড়া ব্রেনের জন্য উপকারী, এর পেছনে আসলে খুব বড় কোন রহস্য নেই।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইউসিএলএ সেন্টার ফর ডিসলেক্সিয়ার ডিরেক্টর বলেন, ‘ভাষা শেখা কিংবা কোন কিছু লেখার চাইতেও বই পড়ার সময় একজন পড়ুয়া অনেক বেশি চিন্তাভাবনা করেন। যা তাকে কাল্পনিক জগতে বিস্তৃতভাবে চিন্তা করার সুযোগ করে দেয়, চিন্তার নতুন অনেক দ্বার খুলে দেয়। এতে করে ভাষা শেখার চাইতেও অনেক বেশি উপকৃত হয় মস্তিষ্ক’।
আরও দারুণ বিষয় জানাচ্ছে ইমোরি ইউনিভার্সিটি। এই ইউনিভার্সিটির এক গবেষণাপ্রাপ্ত তথ্য থেকে দেখা গেছে, বই শেষ বই পড়ার পাঁচ দিন পরেও মস্তিষ্কে তার কার্যকারিতা চলতে থাকে।
আরও একটি বিষয়টি জেনে দারুণ চমৎকৃত হবেন। বইয়ের গল্পে যে কাজের বিবরণ দেওয়া থাকে, মস্তিষ্ক সে কাজটির অনুভূতি গ্রহণ করে সেই রূপ কাজ করে। ধরুন আপনি বইয়ে ঘোড়ায় চড়ার কাহিনি পড়ছেন। মস্তিষ্ক সে অনুভূতি হিসেবে সেভাবে কাজ করবে।
শারীরিক কোন কাজের কথা পড়ার সময় নিউরন সেইরূপভাবে কাজ করা শুরু করে। এক্ষেত্রে দায়ী হলো মোটোর নিউরন ফাংশন। বলা যেতেই পারে, বই পড়ার মাধ্যমে মস্তিষ্কের দারুণ ব্যায়ামও হয়ে যায়।
নিজেকে সুস্থ রাখার সঙ্গে মস্তিষ্কের সুস্থতার বিষয়ে খেয়াল রাখলে উপকার হবে নিজেরই। তাই বই কিনুন ও বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন ও অন্যকে বই পড়ার প্রতি উৎসাহী করে তুলুন আজ থেকেই।
আরও পড়ুন: ১২ কারণে গড়ে তুলুন বই পড়ার অভ্যাস
আরও পড়ুন: আন্তর্জাতিক যে ৫টি বইয়ে ঘুরে যেতে পারে জীবনের মোড়!