কারণ দীর্ঘদিনের বন্ধে, লম্বা সময় যাবত প্রয়োজনীয় ও নিত্যদিনের অনেক কিছুই বাজারে পাওয়া যাবে না। এই সমস্যা উত্তরণের জন্য কেনাকাটা করে রাখলেও, আসল সমস্যা দেখা দেয় পচনশীল উপাদান সংরক্ষণে।
মাছ-মাংস সংরক্ষণে সমস্যা না থাকলেও শাক কিংবা পেঁয়াজ ফ্রিজে ৩-৪ দিনের বেশি সময় ভালো থাকে না। এক্ষেত্রে সঠিক নিয়ম মেনে এই উপাদানগুলো সংরক্ষণ করতে পারলে পুরোপুরিভাবে নিশ্চিন্ত থাকা যাবে। গতকাল কিংবা আজ যদি বাজার করে থাকেন, তবে আজ দিনের মাঝেই পচনশীল এই উপাদানগুলো সঠিকবভাবে সংরক্ষণ করতে পারবেন। তাই চোখ বুলিয়ে নিন আজকের ভীষণ উপকারী এই ফিচারটিতে।
সবচেয়ে নাজুক ও দ্রুত পচনশীল প্রাকৃতিক উপাদানের মাঝে অন্যতম হলো শাক। শাকে অধিকাংশ অংশ জলীয় উপাদান হওয়ায় খুব দ্রুত শাক পাতা শুকিয়ে নষ্ট হয়ে যায়। তাই শাক সংরক্ষণের জন্য শাক কেনার সময় নির্বাচন করতে হবে একদম ফ্রেশ ও তরতাজা শাক। যে সকল শাকের আঁটি ইতোমধ্যে কালচে হয়ে গিয়েছে বা শুকিয়ে গিয়েছে, সে শাকগুলো নেওয়া যাবে না।
শাক কেনার পর ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে। শাকের ডাঁটা কিংবা পাতা কাটা যাবে না। শাকের পানি সম্পূর্ণ শুকিয়ে গেলে প্লাস্টিক বা জিপলক ব্যাগের ভেতরে কিচেন টিস্যু বিছিয়ে তার ভেতরে শাকগুলো ছড়িয়ে দিতে হবে এবং ব্যাগের মুখ বন্ধ করে দিতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে ব্যাগের ভেতরে যেন ভেজা না থাকে। ভেজা থাকলে শাক এই পানি শোষণ করে নরম হয়ে যাবে। এই পদ্ধতিতে শাক ১০ দিন পর্যন্ত খুব ভালোভাবেই সংরক্ষণ করা যাবে।
পেঁয়াজ সংরক্ষণের বিষয়টি বেশ কৌশলের। অতিরিক্ত গরম আবহাওয়ায় পেঁয়াজ নষ্ট হয়ে যাওয়ার ভয় থাকে বিধায় পেঁয়াজ কেটে ডিপ ফ্রিজে রাখা হবে সবচেয়ে ভালো উপায়। কিন্তু যেমন-তেমনভাবে পেঁয়াজ ডিপ ফ্রিজে রাখা হলে তা রান্নায় ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে যায়। তাই পেঁয়াজ সংরক্ষণে জানা প্রয়োজন সঠিক পদ্ধতির। পেঁয়াজ সংরক্ষণের জন্য দুইটি ভিন্ন পদ্ধতি জানানো হলো।
প্রথম পদ্ধতি:
এই পদ্ধতিতে পেঁয়াজ সংরক্ষণের জন্য পেঁয়াজ ধুয়ে, ছিলে মাঝারি আকৃতিতে কেটে নিতে হবে। পেঁয়াজের কুঁচি খুব বেশি চিকন বা মোটা করা যাবে না। পেঁয়াজের কুঁচিগুলো কিচেন টিস্যু পেপারের উপর বিছিয়ে রাখতে হবে কিছুক্ষণ, এতে পেঁয়াজের বাড়তি আর্দ্রতা টিস্যু শোষণ করে নেবে। এরপর এয়ার জিপলক ব্যাগে টেবিলে বিছিয়ে পেঁয়াজের কুঁচিগুলো ছড়িয়ে ব্যাগের ভেতরে রাখতে হবে এবং ব্যাগের মুখ বন্ধ করার আগে হাত দিয়ে চেপে ব্যাগের ভেতরের বাতাস বের করে নিতে হবে এবং ব্যাগের মুখ লাগিয়ে নিতে হবে। এবারে ডিপ ফ্রিজের থাকে সমান্তরালভাবে ব্যাগ বিছিয়ে দিতে হবে। এতে করে পেঁয়াজ খুব ভালোভাবে সংরক্ষিত থাকে। সাধারণত ডিপ ফ্রিজে পেঁয়াজ রাখলে পানি পানি হয়ে যাওয়ার সমস্যা দেখা দেয়। এমনভাবে রাখলে সেই সমস্যাটি হবে না। এভাবে পনের দিন পর্যন্ত পেঁয়াজ সম্পূর্ণ ভালো থাকবে।
দ্বিতীয় পদ্ধতি:
এই পদ্ধতিটি অনেকেরই জানা থাকার কথা। পেঁয়াজ কুঁচি করে ব্লেন্ড করে নিতে হবে। আইস ট্রেতে ব্লেন্ড করা পেঁয়াজ পরিমাণমতো নিয়ে ডিপ ফ্রিজে রেখে পেঁয়াজের আইস কিউব তৈরি করে নিতে হবে। এক্ষেত্রে আইস ট্রের উপর প্লাস্টিকের ব্যাগ দিয়ে ঢেকে নিতে হবে। নতুবা ডিপ ফ্রিজে পেঁয়াজের গন্ধ ছড়িয়ে পড়বে। পেঁয়াজের এই আইস কিউবগুলো সে সকল রান্নায় পেঁয়াজ বাটা ব্যবহার করা হয়, সেখানে ব্যবহার করা যাবে। এভাবে এক মাস পর্যন্ত পেঁয়াজ সংরক্ষণ করা যাবে।
বিভিন্ন ধরনের রান্না কিংবা সালাদ তৈরিতে টমেটো আবশ্যিক উপাদান। কিন্তু টমেটো রেফ্রিজারেটরে খুব বেশিদিন ভালো থাকে না। আবার ডিপ ফ্রিজে রাখা হলে খুব সহজেই পানি পানি হয়ে যায়। যা রান্নায় কিংবা সালাদে ব্যবহার করা যায় না। সেক্ষেত্রে সঠিক উপায়টি জানা প্রয়োজন।
টমেটো সংরক্ষণে আমরা সবাই যে ভুলটি করি, টমেটো কেটে টমেটোর টুকরো সংরক্ষণের চেষ্টা করি। এটা করা যাবে না। আস্ত টমেটো ডিপ ফ্রিজে সংরক্ষণ করতে হবে। সংরক্ষণের জন্য প্রথমেই নির্বাচন করতে হবে একদম ফ্রেশ টমেটো। টমেটোগুলো ধুয়ে পানি ঝড়িয়ে সরাসরি ডিপ ফ্রিজে ঢুকিয়ে দিতে হবে। কয়েক ঘণ্টা পর টমেটোগুলো ফ্রোজেন হয়ে সম্পূর্ণ শক্ত হয়ে গেলে জিপলক ব্যাগে ঢুকিয়ে ব্যাগ থেকে বাতাস বের করে মুখ বন্ধ করে পুনরায় ডিপ ফ্রিজে ঢুকিয়ে দিতে হবে।
এভাবে সংরক্ষণ করলে টমেটো নরম বা পানি পানি হবে না। রান্নায় বা সালাদে ফ্রেশ টমেটোর মতোই ব্যবহার করা যাবে। তবে ডিপ ফ্রিজে থাকার ফলে টমেটোর খোসা আলগা হয়ে আসে, তাই ব্যবহারের আগে শুধু খোসা ছাড়িয়ে নিতে হবে। এভাবে টমেটো ১০-১৫ দিন সংরক্ষণ করা যাবে।
আরও পড়ুন: ছুটি নির্বিঘ্নে কাটাতে বাজার করে ফেলুন আজই!
আরও পড়ুন: ছুটির মাঝে গাছ কীভাবে ভালো থাকবে?