এই সবুজ উদ্ভিদ ওসিমিয়াম টেনুইফ্লরাম (Ocimum tenuiflorum) বা তুলসি নামে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াতে বেশ পরিচিত। চোখের রোগ থেকে শুরু করে দাদ সারাতেও এটি ঔষধী উদ্ভিদ হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
তুলসির পাতা থেকে বীজ, সবকিছুই শরীর-মন সুস্থ রাখতে বলবর্ধক হিসেবে কাজ করে থাকে। তুলসির বিভিন্ন অংশ যেসব চিকিৎসার জন্য ব্যবহার হয়ে থাকে-
১. ব্রঙ্কাইটিস: তুলসির পরিষ্কার ফুল এর জন্য ব্যবহার করা হয়।
২. ম্যালেরিয়া: পাতা ও বীজ কালো গোলমরিচের সাথে ব্যবহার করা হয়।
৩. ডায়রিয়া, মাথা ঘুরানো ও বমিভাব: সম্পূর্ণ উদ্ভিদটিকে ব্যবহার করা হয় এ সমস্যার ক্ষেত্রে।
৪. চর্বি: এ ধরণের সমস্যার জন্য সম্পূর্ণ উদ্ভিদ দিয়ে ট্যাবলেট এবং মলম তৈরি করে ব্যবহার করা হয়।
৫. আলসার ও চক্ষু রোগ: এই উদ্ভিদটির অ্যালকোহল নির্যাস ব্যবহার করা হয়।
৬. পোকাকামড়: পাতা থেকে তেল সংগৃহীত করে ব্যবহার করা হয়।
বহু গবেষণায় মানুষের চিকিৎসার জন্য তুলসির ব্যবহার গবেষকরা সমর্থন করে থাকেন। পুষ্টির মান সহ এতে রয়েছে উচ্চমাত্রা সম্পন্ন: ভিটামিন এ ও সি, ক্যালসিয়াম, জিংক, ক্লোরোফিল।
তবে তুলসি পাতা প্রাকৃতিক ঔষধ হিসেবে গ্রহণ করলেও চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে করা উচিৎ। এছাড়াও চিকিৎসকের অনুমোদনে কোনো ঔষধ সেবনরত অবস্থায় এটি সেবন বা ব্যবহার না করাই উত্তম।
তুলসি পাতার নানাবিধ শারীরিক উপকারিতার মাঝে প্রধান কয়েকটি উপকারিতা এখানে তুলে ধরা হলো।
আয়ুর্বেদ জার্নাল এবং ইন্টিগ্রেটেড মেডিসিন এর তথ্যানুযায়ী, ডায়াজেপাম এবং অ্যান্টি-ডিপ্রেসেন্ট ড্রাগস এর তুলনায় বেসিল এর মধ্যে অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট এবং বিরোধী-উদ্বেগ বৈশিষ্ট্য বেশি রয়েছে। এক গবেষণায় তুলসি পাতা পরীক্ষা করে দেখা গেছে, যারা নিয়মিত ৫০০ মিলিগ্রামের মতো তুলসি গ্রহণ করেন তাদের মাঝে উদ্বেগ, মানসিক চাপ ও বিষণ্ণতা তুলনামূলক কম থাকে।
আয়ুর্বেদিক অনুশীলনকারীরা পরামর্শ দিয়ে থাকেন, তুলসি পাতা দিয়ে চা পান করতে, এটি ক্যাফেইনমুক্ত এবং প্রতিদিন পান করা যাবে। এছাড়া এই চা পানের মাধ্যমে যোগব্যায়াম সমপরিমাণ মানসিক প্রশান্তি পাওয়া যাবে।
তুলসি পাতায় থাকা পর্যাপ্ত পরিমাণ অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট শরীরকে ডিটক্স করতে সহায়তা করে। স্টাডিজ ট্রাস্টেড জানাচ্ছে, তুলসি শরীরকে বিষাক্ত রাসায়নিক উপাদান থেকে রক্ষা করে এবং ক্যান্সার কোষ ধ্বংস করে সুস্থ রাখে। এতে করে শরীর প্রাণবন্ত ও উৎফুল্ল থাকে।
সার্জারি হওয়ার পরে ক্ষতস্থান দ্রুত ভালো হওয়ার জন্য তুলসি পাতা ব্যবহার করেন অনেকেই। তুলসি ক্ষতস্থানের শক্তি পুনঃরুদ্ধার করে, ক্ষত সারানোর সময় কমিয়ে আনে এবং দ্রুত কাজ করতে সাহায্য করে।
বিজ্ঞানীরা জানান, তুলসি পাতা যেমন- মুখের আলসার, ব্রন, পুরনো দাগের মতো ইনফেকশন ও ক্ষত থেকে রক্ষা করে।
যদি আপনার প্রিডায়বেটিস বা টাইপ-২ ডায়বেটিস থাকে, তবে তুলসি পাতা তা কমাতে সাহায্য করবে। মানুষ ও অন্যান্য প্রাণীর উপর পরীক্ষা চালিয়ে দেখা গেছে- ওজন বেড়ে যাওয়া, রক্তে অধিক ইনসুলিন, উচ্চমাত্রার কোলেস্টেরল, উচ্চ রক্তচাপের মতো ডায়বেটিসের লক্ষণসমূহ কমাতে তুলসি কাজ করে। বিজ্ঞানীরা পরীক্ষা করে দেখেছেন, তুলসি ৩০ দিনে ২৪ শতাংশ ব্লাড-সুগার কমাতে পারে। তবে, খাদ্যাভ্যাসে এটি যুক্ত করার পূর্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
যেহেতু তুলসি পাতার কাজই হচ্ছে বিপাকীয় চাপ কমানো, তাই এটি ওজন ও কোলেস্টেরল কমাতেও কাজ করে। এটি ক্ষতিকর কোলেস্টেরল হ্রাস করে, ভালো কোলেস্টেরল বৃদ্ধি করে। তুলসি পাতা, তেল, তুলসি গুঁড়ার কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে থাকে।
তুলসি প্রাকৃতিকভাবে পেটের সমস্যা আলসার থেকে প্রতিহত করে এবং প্রতিরক্ষা করে। উপকারী এই পাতা পেটের অ্যাসিড হ্রাস করে, মিউকাস নিঃসরণের মাত্রা বাড়ায়, মিউকাস কোষের আয়ু বৃদ্ধি করে। পেপটিক আলসার হলে বাজারের ওষুধ গ্রহণে পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। সেক্ষেত্রে তুলসি -পাতা গ্রহণে উপকার দেখা দেবে।
আরও পড়ুন: ত্বকের সুস্থতা তুলসি পাতায়
আরও পড়ুন: র্যাশের সমস্যা কমাতে পাঁচ উপাদান