শিশুদের প্রতি যতই বাড়তি যত্ন নেওয়া হোক না কেন, চেষ্টা করতে হবে হবে একদম ছোট থেকেই তাদের মাঝে কিছু অভ্যাস গড়ে তোলানোর জন্য। একদম সাধারণ এই অভ্যাসগুলো শিশুদের মাঝে একদম শুরু থেকেই গড়ে তুলতে পারলে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তাদের স্বাস্থ্যগত বিষয় নিয়ে দুশ্চিন্তামুক্ত থাকা সম্ভব হবে।
শিশুরা সহজে খাবার খেতে চায় না। প্রায় প্রতিটি মায়ের একই অভিযোগ, কোন খাবারই সন্তান খেতে চায় না একদম। নিত্যদিন ভিন্ন ঘরানার খাবার তৈরি করেও শিশুদের পছন্দ বোঝা সম্ভব হয় না।
এহেন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে উপায়ন্তর না পেয়ে অস্বাস্থ্যকর খাবার তুলে দেন অনেকেই সন্তানদের হাতে। চিপস, কেক, সুইট বান, জ্যুস মোটেও স্বাস্থ্যকর কোন খাবার নয়। এতে পুষ্টিগুণ তো একেবারেই থাকে না, উল্টো অস্বাস্থ্যকর নানা উপাদানে ভরা থাকে এই মুখরোচক খাবারগুলো।
সন্তান খাবার খেতে না চাইলেও প্রাকৃতিক উপাদান তৈরি বিভিন্ন ধরণের খাবার তৈরি করে শিশুদের খাওয়ানোর অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। ধরুন আপনি শিশুকে ফুলকপি খাওয়াচ্ছেন। গল্পের ছলে তাকে ফুলকপির পুষ্টিগুণের কথা বলুন। ফুলকপি তার শরীরের জন্য কেন ভালো, খেলে কি হবে- এইগুলো জানান। দেখবেন শিশুর আগ্রহ তৈরি হবে ও খেতে চাইবে।
শিশুদের একটা-দুটো দাঁত ওঠার পর থেকেই দাঁত মাজার অভ্যাসটা তৈরি করতে হয়। বিশেষত নিজে হাতে ব্রাশ ধরে দাঁত মাজার মতো বড় হয়ে গেলে এই অভ্যাসটি অবশ্যই ধরে রাখার চেষ্টা করতে হবে। স্বাভাবিকভাবে এই কাজটিও শিশুদের কাছে বিরক্তিকর লাগে এবং তারা এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। সেক্ষেত্রে দাঁত মাজার জন্য জোর না করে একসাথে দাঁত মাজতে হবে। দাঁত ও টুথপেস্টের ছোট গল্প তৈরি করতে হবে। একসাথে দাঁত মাজার সময় মজা করতে হবে। আনন্দময় পরিবেশে দাঁত মাজার মতো একঘেয়ে কাজ সারতে পারলে শিশুরা নিজ থেকেই আগ্রহী হবে দাঁত মাজার ক্ষেত্রে।
বেশিরভাগ শিশু রাতে ঘুমাতে চায় না একদম। রাত জাগার অভ্যাস দেখা দেয় একদম ছোট সময় থেকেই। এতে করে শিশুর সাথে তার বাবা-মায়ের ঘুমের সাইকেলেও ব্যাঘাত ঘটে। ঘুমের সাইকেল দ্রুত ঠিক করতে না পারলে, বড় হলে সমস্যা তৈরি হবে। বিশেষত যখন স্কুলে যাওয়ার সময় চলে আসবে, তখন সকালে ঘুম থেকে ওঠা শিশুর জন্য বিভীষিকার মতো মনে হবে।
তাই শিশুর ঘুমের সাইকেল ঠিক করার জন্যে নিজের ঘুমের সাইকেলটিও এগিয়ে নিন। সকল কাজ দ্রুত শেষ করে দশটার মাঝেই রাতে ঘুমের আয়োজন করে ফেলুন। টানা কয়েকদিন এমন করতে পারলে নিজ থেকেই ঘুমের সাইকেল ঠিক হয়ে যাবে।
শিশুদের জন্য বাইরে খেলা যতটা জরুরি, ততটাই সত্যি হলো- বাইরে খেলার মতো স্থান এখন একেবারেই নেই। তবে বাসার চেয়ে কিছুটা দূরে কোন পার্ক বা স্থানীয় খেলার মাঠ থাকলে সেখানেই নিয়ে যান শিশুকে। উন্মুক্ত স্থানে খেলাধুলা শিশুদের সুস্থভাবে বেড়ে ওঠার ক্ষেত্রে প্রধান সহায়ক। যদি সেটাও সম্ভব না হয় তবে বারান্দা অথবা ছাদে নিরাপদ স্থানে খেলা করতে নিয়ে যেতে হবে।
অবশ্যই শিশুদের মুখে তুলে খাওয়ানো হলে পেট ভরে খাওয়ানো হয়। কিন্তু একটা নির্দিষ্ট বয়সের পর প্রতিটি শিশুর নিজ হাতে খাওয়ার অভ্যাসটি গড়ে তোলা প্রয়োজন। পরিবারের বাকি সদস্যদের মতো তাকেও টেবিলে বসিয়ে তার সামনে খাবার দিয়ে নিজ হাতে খাওয়ার অভ্যাস করাতে হবে। এতে করে খাবার খাওয়ার সময় শিশুরা আপনপনে খাবার খাবে ও মাকে জ্বালাতন করবে না।
এই অভ্যাসটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। শিশুদের যতই চোখে চোখে রাখা হোক না কেন, ময়লা জিনিসে তারা হাত দেবেই। এছাড়া খেলাধুলার সময়, আগ্রহবশত কোন জিনিস ধরার সময়, আঁকাআঁকির সময় হাত নোংরা হয়েই যায়। পরে এই নোংরা হাতে কিছু খেলে কিংবা মুখে দিলেই বিপত্তি। তাই শিশুদের শেখাতে হবে, যেকোন কাজ, খেলা ও জিনিস ধরার পর হাত ভালোভাবে ধুয়ে নেওয়ার অভ্যাসটি। এতে করে শিশুর সুস্বাস্থ্যের নিশ্চয়তা পাওয়া যাবে অনেকখানি।
আরও পড়ুন: শিশুদের আত্মার খোরাকে সাহিত্য, শিল্পকর্ম ও সংগীত!
আরও পড়ুন: শিশুদের জন্য খেলাধুলা কেন প্রয়োজন?