বরং তথাকথিত এই ‘ওয়েস্টার্ন ডায়েট’ পুরুষদের শুক্রাণুর মাত্রা হ্রাস করে জন্মদানের ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
ইউরোপিয়ান সোসাইটি অফ হিউম্যান রিপ্রোডাকশন অ্যান্ড এমব্রিওলজি সাম্প্রতিক এক সম্মেলনে উপস্থাপিত নতুন গবেষণায় ২,৯৩৫ জন তরুণ ড্যানিশ পুরুষের খাবার পর্যবেক্ষণ করা হয়। তাদের খাদ্যাভ্যাস কিভাবে শুক্রাণুর সংখ্যা প্রভাবিত করছে তা নির্ধারণ করার জন্য। এই পর্যবেক্ষণের উদ্দেশ্য ফার্টিলিটি, যৌন চাহিদা ও যৌন ক্রিয়ার সমস্যা সমূহকে সঠিকভাবে পরিমাপ করা।
এই গবেষণাটির জন্য গবেষকেরা কয়েক ধরনের ডায়েট মেনে চলা পুরুষদের স্মার্মের উপর পরীক্ষা করেন। তার মাঝে আছে মিলিটারি ডায়েট প্যাটার্ন, ওয়েস্টার্ন ডায়েট প্ল্যাটার্ন- যে খাদ্যাভ্যাসে চিপস, পিৎজা, প্রক্রিয়াজাত মাংস, এনার্জি ড্রিংক্স, রিফাইন্ড শস্য রয়েছে। সাথে ছিল প্রুডেন্ট ডায়েট প্যাটার্ন- এই খাদ্যাভ্যাসে থাকে ফ্রেশ মাছ, মুরগির মাংস, সবজি, ফল ও পানি। ছিল বিশুদ্ধ বিখ্যাত ড্যানিশ ‘স্মরব্রড ডায়েট’। এই খাদ্যাভ্যাসের তালিকায় থাকে ঠাণ্ডা প্রক্রিয়াজাত মাংস, বিশুদ্ধ শস্য, মেয়নেজ, ঠাণ্ডা মাছ ও দুগ্ধজাত খাবার। এছাড়াও ছিল ভেজিটেরিয়ান ডায়েট, যেখানে খাদ্য তালিকায় থাকে ফ্রেশ সবজি, সয়া মিল্ক ও ডিম।
গবেষকেরা পরীক্ষা করে দেখেছেন, যারা প্রুডেন্ট ডায়েট মেনে চলেন, তাদের স্পার্ম কাউন্ট সবচেয়ে বেশি এবং যারা ওয়েস্টার্ন ডায়েট মেনে চলেন তাদের স্পার্ম কাউন্ট সবচেয়ে কম। এছাড়া ভেজিটেরিয়ান খাদ্যাভ্যাসে অভ্যাস্তদের স্পার্ম কাউন্ট রয়েছে সর্বোচ্চর দিক থেকে দ্বিতীয় স্থানে এবং ড্যানিস খাদ্যাভ্যাস রয়েছে তৃতীয় স্থানে।
এই গবেষণার সারাংশে গবেষকেরা লিখেছেন, ‘আমাদের গবেষণা প্রাপ্ত তথ্য থেকে দেখা যায়, স্বাস্থ্যকর খাদ্যভ্যাসে অভ্যাস্ত পুরুষদের স্পার্ম কাউন্ট বেশি রয়েছে। এই স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের মাঝে এলাকাভিত্তিক খাদ্যাভ্যাসও আছে। এছাড়া গবেষণার তথ্য বলছে, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের ফলে স্পার্ম কাউন্ট অনেক কমে যায় এবং এতে করে হৃদরোগসহ ক্যানসারের ঝুঁকি বেড়ে যায়।’
তবে এই গবেষণাটিতে কিছু সীমাবদ্ধতা ছিল। তার মাঝে প্রধান সীমাবদ্ধতা হলো গবেষকেরা শুধুমাত্র ড্যানিশ পুরুষদের উপরেই এই পরীক্ষাটি চালিয়েছেন। ফলে এই পরীক্ষায় প্রাপ্ত তথ্য পুরো বিশ্বের পুরুষদের জন্য সমান না-ও হতে পারে। এক্ষেত্রে কিছু গবেষকেরা বংশগতভাবে লো স্পার্ম কাউন্টের বিষয়টি এড়িয়ে যেতে পারছেন না। এছাড়া চুলের জন্য কিছু বিশেষ ওষুধ, কেমোথেরাপি, মানসিক চাপ, বিষণ্ণতা এবং পরিবেশ দূষণের মতো বিষয়গুলোও লো স্পার্ম কাউন্টের জন্যেও দায়ী হতে পারে।
মায়ো ক্লিনিকের মতে, স্বাভাবিক স্পার্ম কাউন্ট হলো, প্রতি মিলিমিটার বীর্যে ১৫-২০০ মিলিয়ন স্পার্ম বা শুক্রাণু।
এছাড়া পুরুষরা তাদের স্পার্ম কাউন্ট বৃদ্ধি করতে পারেন বেশ কিছু উপায়ে। সাম্প্রতিক গবেষণা জানাচ্ছে, সঠিক ও স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস যার মাঝে অন্যতম। যথাসম্ভব কম প্রক্রিয়াজাত খাবার খেতে হবে এবং অলিভ ওয়েল ও স্বাস্থ্যকর প্রোটিনের মতো খাবার খাদ্য তালিকায় রাখতে হবে। পাশাপাশি তামাকজাত দ্রব্য গ্রহণ থেকে বিরত থেকে স্পার্ক কাউন্ট স্বাভাবিক করতে পারবে পুরুষরা। তামাকজাত দ্রব্য গ্রহণে লক্ষণীয় মাত্রায় শুক্রাণুর পরিমাণ কমে যায়।
আরও পড়ুন: ছয় উপায়ে দূর হবে নাক ডাকার সমস্যা
আরও পড়ুন: মেটাবলিজম কমছে যেসকল অভ্যাসে