একইসাথে এই মৌসুমে ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ অন্যবারের চেয়ে অনেকটা আলাদা। ফলে ডেঙ্গু জ্বর শনাক্ত করতেও বেগ পেতে হচ্ছে।
ফলে এ বছর হাসপাতালগুলোতে ভর্তি রোগীর অধিকাংশই ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভার ও ডেঙ্গু শক সিনড্রোমে আক্রান্ত। তীব্র জ্বরের পাশাপাশি পেটে ব্যাথা, ডায়রিয়া, বমি, রক্তক্ষরণ, লো ব্লাড প্রেসারের মতো উপসর্গ পরবর্তীতে ডেঙ্গু শকের মতো জটিল অবস্থার কারণ হতে পারে।
ডেঙ্গু সম্পর্কে সচেতনতা, সম্পূর্ণ বিশ্রাম ও সঠিক ডায়েট তথা খাদ্যাভ্যাসের মাধ্যমে শারীরিক জটিল অবস্থা থেকে রোগীকে নিরাপদ রাখা সম্ভব। চলুন জেনে নেই, কোন ধরণের খাবার ও পুষ্টি এ সময়ের জন্য স্বাস্থ্য উপকারিতা বহন করে।
ডেঙ্গু জ্বরে শরীরের তাপমাত্রা অনেক বেড়ে যায়। শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রথমেই যে বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে, রোগী যেন পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি বা তরল জাতীয় খাবার বারবার গ্রহণ করেন।
ডেঙ্গু জ্বরে প্লাজমা লিকেজ এর কারণে ডিহাইড্রেশন বা শরীরে পানি শূন্যতা ও ইলেক্ট্রোলাইট ইমব্যালেন্স দেখা দিতে পারে। পানির পাশাপাশি লবণ ও খনিজ উপাদান সমৃদ্ধ তরল যেমন- ডাবের পানি, ওরস্যালাইন, লেবু-লবণের শরবত এবং ফলের রস পান করা উচিত।
এ সময় ভিটামিন-সি সমৃদ্ধ ফল যেমন- মাল্টা, কমলালেবু, লেবু, আপেল, আনারস, আমড়া, জাম্বুরা এ জাতীয় ফলের রস রোগীর খাদ্য তালিকায় দৈনিক রাখতে হবে। ভিটামিন-সি এ সময় জ্বরের সংক্রমণের বিরুদ্ধে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে, সে সাথে এন্টি অক্সিডেন্টের চাহিদাও পূরণ করে।
ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীদের খাদ্য তালিকায় ভিটামিন-কে সমৃদ্ধ খাবার রাখতে হবে। ভিটামিন-কে দেহে ‘প্রোথ্রোম্বিন’ নামক প্রোটিন তৈরি করে। যা রক্ত জমাট বাঁধতে সাহায্য করে। ভিটামিন-কে হেমোরেজিক কন্ডিশন বা ডেঙ্গু জনিত রক্ত ক্ষরণের আশঙ্কা কিছুটা কমিয়ে আনে। ব্রকলি, ফুলকপি, পাতাকপি, সবুজ শাকসবজি, ডিমের কুসুল থেকে ভিটামিন-কে পাওয়া যায়। বিভিন্ন গাঢ় রঙের সবজির স্যুপ এসময় রোগীকে দেয়া যেতে পারে।
জ্বর হলে শরীরে মেটাবলিক রেট বা বিপাক ক্রিয়া অনেক বেড়ে যায়। ফলে ক্যালোরির চাহিদাও অনেকখানি বেড়ে যায়। পর্যাপ্ত পরিমাণ ক্যালোরির চাহিদা পূরণের জন্য চিকেন স্যুপ, ডিমের স্যুপ, ডালের স্যুপ ইত্যাদি প্রোটিনের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি প্রয়োজনীয় এনার্জি তথা শক্তি দিবে দেয়।
তরল খাবারের পাশাপাশি অর্ধতরল বা নরম জাতীয় খাবারে রোগীকে অভ্যস্ত করতে হবে। যেহেতু এই সময় জ্বরের কারণে রোগীর মুখে কোন রুচি থাকে না, তাই অল্প পরিমাণ কিন্তু ক্যালোরির চাহিদা পূরণে সহায়ক এমন নরম খাবার রোগীকে বারবার দিতে হবে। যেমন- চালডালের পাতলা খিচুড়ি বা জাউ ভাত, সেই সাথে নরম করে রান্না করা মাছ বা মুরগীর মাংস, পায়েস, পুডিং, সুজি বা দুধ-সাগু।
ডেঙ্গু আক্রান্ত হলে অনেক ক্ষেত্রে রোগীর লিভার এনজাইম অনেক বেড়ে যায়। ফলে দেখা দিতে পারে ডায়রিয়ার সমস্যা। এছাড়াও এসময় অনেক রোগীর মুখে রুচি থাকেনা বলে একটু মসলাদার খাবার বা চর্বি জাতীয় খাবার যেন ফাস্টফুড, তেল জাতীয় ভাজাপোড়া খাবার খেতে চায়। যা পরিহার করতে হবে।
এছাড়াও এসময় শক্ত জাতীয় খাবার পরিহার করাই ভালো। কারণ তাতে গাম ব্লিডিং বা দাঁতের মাড়ি থেকে রক্তক্ষরণ হতে পারে। জ্বরের কারণে ঠোঁটের চামড়া অতিরিক্ত সংবেদনশীল হয়ে যায়, এতে ঠোঁট ফেটে যেতে পারে। এ বিষয়েও খেয়াল রাখতে হবে।
আরও পড়ুন: ডেঙ্গুতে উপকারী পাঁচ পদের জুস
আরও পড়ুন: মশা তাড়াবে যে গাছগুলো!