গরুর ও খাসির মাংস বা রেড মিট শ্রেণী পুষ্টি গুনে অতুলনীয় খাবার। এই খাবারে প্রোটিন ফ্যাট এর সাথে পর্যাপ্ত পরিমাণে মাইক্রো-মিনারেলস, জিংক, ফসফরাস, ম্যাগনেসিয়াম, আয়রন, ভিটামিন-বি১২ থাকে। পুষ্টি উপাদান বেশি বলে অতিরিক্ত রেড মিট খেলে স্বাস্থ্য ঝুঁকিও বেড়ে যায়। তাই ঈদ উৎসবে একটু সতর্কতা অবলম্বন করে মাংস খাওয়া হলে নিরাপদ থাকা যেতে পারে। আসুন স্বাস্থসম্মত উপায়ে মাংস খাওয়ার কিছু টিপস জেনে নেই।
১. স্বাস্থ্যসম্মত ও পুষ্টিকর উপায়ে কোরবানির মাংস খেতে হলে প্রথমেই মাংস কাটার সময় অতিরিক্ত চর্বি কেটে ফেলে দিতে হবে এবং ছোট টুকরা করে কাটতে হবে। এতে ক্ষতিকর চর্বির পরিমাণ অনেকটা কমে যাবে। কিছু পরিমাণ মাংস কিমা করেও ফ্রিজে রেখে দেয়া যেতে পারে। কিমার মাংসে ফ্যাট এর পরিমাণ কম থাকে।
২. রেড মিট বা লাল মাংসের পুষ্টিগুন অনেকটাই নির্ভর করে রান্নার কৌশলের উপর। গরুর মাংস প্রোটিনের ভালো উৎস। পাশাপাশি এতে যথেষ্ট পরিমাণে ফ্যাট রয়েছে। তাই রান্নার সময় আলাদা করে তেল বা ঘি ব্যবহার না করে সিরকা, লেবুর রস বা টক দই দিয়ে কিছু সময় মেরিনেট করে রেখে অল্প তাপে ভালভাবে সেদ্ধ করে রান্না করতে হবে যেন পুষ্টিগুণ ঠিক থাকে। মাংসের রেজালা, কোরমা, রোস্ট বা ভুনার চেয়ে স্টেক, গ্রিল, কাবাব করে খেলে কিছুটা হলেও কম ক্যালরি গ্রহন করা সম্ভব সেই সাথে স্বাস্থ্য ঝুঁকিও অনেকটা কমে যায়।
৩. মাংসে খাদ্য আঁশের পরিমাণ অনেক কম থাকে। তাই ঈদের দিন বা তার পরের দিনের মেন্যুতে ফাইবারের চাহিদা অবশ্যই সবজি বা সালাদের আইটেম রাখতে হবে। সেই সাথে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানিও খেতে হবে। কোল্ড ড্রিঙ্কস বা সফট ড্রিঙ্কস এর পরিবর্তে টক দইয়ের লাচ্ছি, বোরহানি, লাবাং বা মাঠা হেলদি ড্রিঙ্কস হিসেবে রাখা যেতে পারে।
৪. যারা উচ্চ রক্তচাপ, ডায়বেটিস ও হৃদরোগে ভুগছেন তারা পরিমিত পরিমাণে ঈদের সময় গরুর মাংস খেতে পারেন। তবে তা যেন হয় যে কোন এক বেলায়। যারা কিডনি রোগী এবং যাদের রক্তে ইউরিক এসিডের মাত্রা বেশি তাদের জন্য অবশ্যই গরু-খাসীর মাংস এড়িয়ে চলতে হবে। সেই সাথে এড়িয়ে চলতে হবে কলিজা, মগজ, গুদা বা ভুঁড়ি, নেহারি।
৫. কোষ্ঠ কাঠিন্য ও পাইলসের সমস্যায় যারা ভুক্তভোগী তাদেরকে গরুর মাংস খাওয়ার ব্যাপারে বিশেষ সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। অবশ্যই তাদের জন্য পরামর্শ থাকবে তারা যেন ফাইবার বা আঁশযুক্ত খাবার যেমন ইসুপগুল বা তোকমার শরবত, সালাদ, সবজি, খোসাযুক্ত ফল ও সেই সাথে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি ঈদের সময়ের খাদ্য তালিকায় রাখতে হবে।
৬. ঈদের আনন্দে মাংসসহ অন্যান্য ক্যালরি বহুল খাবার যেন ওজন বাড়িয়ে না দেয় সেই ব্যাপারটিও খেয়াল রাখতে হবে। তাই যারা নিয়মিত ব্যায়াম করে থাকেন তারা প্রতি সেশনে অতিরিক্ত ১৫ মিনিট ব্যায়াম বা হাঁটার সময় বাড়িয়ে দিন ঈদের পর থেকেই। তাহলে ওজন বাড়ার চিন্তা থেকে অনেকটাই রেহাই পেতে পারেন। তবে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে অতিরিক্ত মাংস খাওয়ার ফলে রক্তের খারাপ চর্বি-কোলেস্টেরল, এলডিএল, ট্রাইগ্লিসারাইডস সেই সাথে রক্তের ইউরিক এসিড বেড়ে না যায়।