আমরা সকলেই জানি শরীরের স্বাভাবিক ক্রিয়া ও শারীরিক সুস্থতার জন্য ভিটামিন অন্যতম প্রয়োজনীয় মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট। ভিটামিন- এ, বি, সি, ডি এর মতো প্রচলিত ভিটামিনসমূহ সম্পর্কে কমবেশী ধারণা থাকলেও, শরীরের জন্য অতি প্রয়োজনীয় ভিটামিন-কে সম্পর্কে জানা নেই অনেকের।
মূলত ভিটামিন-কে হলো একটি যৌগিক উপাদান। ভিটামিন-কে১ ও ভিটামিন-কে২ এর মিশ্রণে তৈরি হয় ভিটামিন-কে।
ক্ষতস্থানে রক্ত জমাট বাঁধার ক্ষেত্রে ভিটামিন-কে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব বহন করে থাকে। প্রয়োজনীয় এই ভিটামিনের অভাবে রক্ত ঠিকভাবে জমাট বাঁধতে পারে না। যার ফলে দেখা দেয় অনিয়ন্ত্রিত রক্তক্ষরণের সমস্যা। রক্ত জমাট বাঁধার পাশাপাশি ভিটামিন-কে’র গুরুত্ব ও উপকারিতা অনেক।
জেনে নেওয়া যাক ভিটামিন-কে শারীরিক সুস্থতার ক্ষেত্রে কি কি গুরুত্ব ও উপকারিতা বহন করে থাকে।
ভিটামিন-কে’র উপকারিতা সমূহ
১. ভিটামিন-কে শরীরে ক্যালসিয়াম ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় মিনারেল তৈরিতে সাহায্য করে থাকে। যা হাড় মজবুত করতে সাহায্য করে। এমনকি অস্টিওপোরোরসিসের সমস্যা কমাতে দারুণ উপকারী ভিটামিন-কে। পাশাপাশি হাড়ের ফ্র্যাকচার দ্রুত সারাতে কাজ করে ভিটামিন-কে।
২. শরীরে ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধি কমাতে এবং ক্যান্সারকে স্থিতিশীল পর্যায়ে রাখতে সাহায্য করে ভিটামিন-কে। প্রোস্টেট, কোলোন ও ওরাল ক্যান্সারের ক্ষেত্রে দারুণ উপকারী ভূমিকা পালন করে ভিটামিন-কে।
৩. আলঝেইমার আক্রান্ত রোগীর জন্য এবং স্মৃতিশক্তি লোপ পাওয়ার সমস্যা কমাতে ভিটামিন-কে উপকারী।
৪. ইনসুলিনের কার্যকারিতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে থাকে বলে টাইপ-২ ডায়বেটিসের জন্য ভিটামিন-কে অন্যতম প্রয়োজনীয় নিউট্রিয়েন্ট।
৫. অন্যান্য সকল ধরণের ভিটামিনের মতো ভিটামিন-কে তে রয়েছে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট উপাদান সমূহ। যা শরীরের জন্য ক্ষতিকর (টক্সিন) উপাদান তৈরিতে বাধা প্রদান করে।
৬. ত্বকের বিভিন্ন ধরণের সমস্যা কমাতে সাহায্য করে থাকে ভিটামিন-কে।
ভিটামিন-কে’র উৎস সমূহ
প্রাকৃতিক ও সহজলভ্য বহু খাবারেই উপকারী এই ভিটামিনটি রয়েছে। প্রাপ্তবয়স্ক একজন মানুষের জন্য প্রতিদিন ১২০-১৫০ মিলিগ্রাম পরিমাণ ভিটামিন-কে গ্রহণ করা প্রয়োজন। জেনে নিন কোন কোন খাবার গ্রহণে ভিটামিন-কে’র অভাব পূরণ হবে।
১. ডিম, দুধ, পনির ও দইয়ে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-কে।
২. বিভিন্ন ধরণের বাদামে রয়েছে ভিটামিন-কে। কাজুবাদাম, ক্যাশুনাট কিংবা ওয়ালনাট হলো ভিটামিন-কে’র অন্যতম ভালো উৎস।
৩. ফলের মাঝে স্ট্রবেরি, আঙুর ও আপেলে পাওয়া যাবে ভিটামিন-কে।
৪. মুরগির মাংস, গরুর মাংস, ভেড়ার মাংসের পাশাপাশি হাঁসের মাংসেও রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন-কে।
৫. সামুদ্রিক মাছে পাওয়া যাবে ভিটামিন-কে।
৬. এতো দারুণ সকল খাবারের ভেতর সবুজ শাক-সবজীর কথা ভুলে গেলে চলবে কী! অন্যান্য সকল ধরণের সবুজ শাক ও সবজীর সাথে কচুশাক, বাঁধাকপি ও ব্রকলিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-কে।
নিজের সুস্থতার প্রতি যত্নশীল হতে হবে নিজেকেই। শরীর তার প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদানগুলো পাচ্ছে কিনা, সে ব্যাপারে খেয়াল রাখতে হবে! তাই প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় ভিটামিন-কে যুক্ত খাদ্য উপাদান রাখার প্রতি সচেষ্ট হতে হবে।