প্রচন্ড ক্ষুধা পেলে কী খাওয়া উচিৎ ও কী খাওয়া উচিৎ নয়, সে বিষয়ে অনেকে একেবারেই খেয়াল করেন না। হাতের কাছে যেকোন খাবার পেলেই হলো, সাতপাঁচ না ভেবেই খেয়ে ফেলেন ইচ্ছামতো। যার ফলে পরবর্তিতে পেটের নানাবিধ সমস্যাসহ প্রচন্ড বুক জ্বালাপোড়ার সমস্যাও দেখা দেয়।
সকালের নাস্তা, দীর্ঘ সময় না খেয়ে থাকার পর খাওয়া কিংবা রোজার সময়ে ইফতারিতে খালি পেটে কোন খাবারগুলো এড়িয়ে যাওয়া উচিৎ, সে ব্যাপারে পরিস্কার ধারণা রাখা প্রয়োজন নিজের সুস্থতার খাতিরে।
আজকের ফিচার থেকে জেনে নিন খালি পেটে কোন খাবারগুলো, কেনো এড়িয়ে যাওয়া প্রয়োজন।
সাইট্রাস ফল সমূহ
সাইট্রাস অর্থাৎ লেবু, কমলালেবু, জাম্বুরার মতো টক ঘরানার ফলে থাকে ফ্রুট অ্যাসিড। একদম খালি পেটে এই সকল ফল খাওয়ার ফলে বুক জ্বালাপোড়া তৈরি হয়। ক্ষেত্র বিশেষে স্টমাক আলসার কিংবা গ্যাস্ট্রিসাইটিসের সমস্যাও দেখা দিতে পারে।
কোমল পানীয়
প্রায়শ খালি পেটে কোমল পানীয় পান করে থাকেন অনেকে। খালি পেটে কোমল পানীয় পানের ফলে পাকস্থলী সরাসরি ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে থাকে। অনেক সময় পাকস্থলীতে রক্ত সরবরাহের মাত্রাও কমে যায়। যার ফলে খাদ্য পরিপাক প্রক্রিয়ায় সমস্যা সহ পেটেব্যাথার প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়ে থাকে।
অতিরিক্ত মশলাযুক্ত খাবার
সাধারণত সবাইকে মশলাযুক্ত খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে বলা হয়ে থাকে। বিশেষত যাদের অ্যাসিড রিফ্লাক্সের সমস্যা থাকে, মশলাযুক্ত খাবারের ব্যাপারে তাদের সতর্ক থাকা জরুরি। খালি পেটে মশলাযুক্ত খাবার খাওয়ার ফলে দ্রুত প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। যার ফলে বুক জ্বালাপোড়া সহ টক ঢেঁকুর ওঠার মত সমস্যা দেখা দিয়ে থাকে।
শসা ও অন্যান্য সবুজ সবজী
স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী হলেও খালি পেটে এই খাবারগুলোই দারুণ অস্বাস্থ্যকর হয়ে যায়। কারণ শসা সহ অন্যান্য সবুজ সবজীতে থাকে প্রচুর পরিমাণে অ্যামিনো অ্যাসিড। খালি পেটে এই খাদ্য উপাদানগুলো খাওয়ার ফলে অস্বস্তি ও পেটে ব্যথা তৈরি হয়।
টমেটো
টমেটোতে রয়েছে উচ্চমাত্রার ট্যানিন। অ্যাসিডিটি তৈরির অন্যতম কারণ হলো এই ট্যানিন। খালি পেটে শখের বশে অনেকেই টমেটো খেয়ে থাকেন। যা তৈরি করতে পারে গ্যাস্ট্রিসাইটিসের সমস্যা।
দই
প্রোবায়োটিক সমৃদ্ধ এই খাবারটি দারুণ স্বাস্থ্যকর ও উপকারি। তবে খালি পেটে স্বাস্থ্যকর এই খাবারটি খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে সবসময়। খালি পেটে দই খাওয়ার ফলে পাকস্থলীতে ক্ষতিকর হাড্রলিক অ্যাসিড উৎপন্ন হয়। এছাড়াও পাকস্থলীতে থাকা উপকারী ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতিতে অসামঞ্জস্যতা দেখা দেয়। যে কারণে খালি পেটে দই খাওয়ার ব্যাপারে সতর্ক ও বিরত থাকতে হবে সবসময়।
মিষ্টি ও মিষ্টিজাত খাবার
যেকোন ধরণের মিষ্টি জাতীয় খাবারে থাকে প্রচুর পরিমাণে চিনি। খালি পেটে মিষ্টি জাতীয় খাবার খাওয়ার ফলে হুট করেই রক্তে ইনসুলিনের মাত্রা অনেক বেড়ে যায়। যা অগ্ন্যাশয়ের উপর নেতিবাচক ও ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে দেয়।
ইষ্টজাত খাবার
বিস্কুট, পেস্ট্রি, কেক, পাউরুটি, বনরুটি সহ যে সকল খাবারে প্রচুর পরিমাণে ইষ্ট ব্যবহার করা হয়, খালি পেটে এই সকল খাবার এড়িয়ে চলার চেষ্টা করতে হবে। খালি পেটে ইষ্টজাত খাবার খাওয়ার ফলে, পেট ফোলাভাব দেখা দেওয়া সহ বুক জ্বালাপোড়ার সমস্যা দেখা দেয়।
এতো সকল নিষেধাজ্ঞার মাঝে ভাজাপোড়া খাবারের কথা বলা হচ্ছে না বলে অবাক হবেন না কিন্তু! খালি পেটে যে ধরণের খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকা উচিৎ তার মাঝে অন্যতম হলো তেলে ভাজা যেকোন খাবার। ডুবো তেলে কিংবা স্বল্প তেলে ভাজা খাবার একদম খালি পেটে খেলে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সাথে সাথে প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। অনেক সময় গুরুত্বর হয়ে ওঠে সেই প্রতিক্রিয়া।
হয়তো প্রশ্ন জাগছে, এতো সকল ‘না’ এর মাঝে খালি পেটে কোন খাবারটি খাওয়া যাবে নিশ্চিন্তে? খালি পেটে ইষ্টবিহীন হাতে তৈরি রুটি, ডিম, কলা, পিনাট বাটার, বাদাম, খেজুর, মধু, তরমুজ খেতে পারবেন স্বাচ্ছন্দে। পাশাপাশি ভাত তো থাকছেই।
একইসাথে লম্বা সময় খালি পেটে না থাকার জন্যেও চেষ্টা করতে হবে। দীর্ঘসময় কিছু না খেয়ে থাকা স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর। প্রতি দুই-তিন ঘন্টা অন্তর স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার ব্যাপারে মনযোগী হতে হবে। তবেই সুস্থ থাকা যাবে নিশ্চিন্তে।