পরিচিত লাল চা কিংবা দুধ চায়ের বদলে কাপে রয়েছে নীলাভ পানীয়। আগ্রহী হয়েই ভিন্ন ধরনের নীলচে পানীয়ের স্বাদ আস্বাদন করছেন অনেকে। ফেসবুকের ফুড রিভিউ গ্রুপের কল্যানে খুব অল্প সময়ের মাঝেই ভাইরাল হয়েছে হাল সময়ের ট্রেন্ড অপরাজিতা ফুলের চা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকাতে বিক্রি হওয়া ভিন্ন ঘরানার এই ভেষজ চা খুব সহজেই সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পেরেছে। প্রশংসা যেমন জুটেছে, তেমনি তিরস্কারও পেয়েছে অপরাজিতা চা।
গাড় লিকার, ঘন দুধ ও বাড়তি চিনি ছাড়া চা হয় নাকি আবার? হয় বটে। ভেষজ ঘরানার চায়ের মধ্যে গ্রিন টি, জেসমিন টি, তুলসি চা বা লিকারবিহীন পুদিনাপাতার চা ও আদা চা চেনাজানা হলেও, পরিচিত ফুল অপরাজিতায় তৈরি নতুন ধরনের এই চা এখনও বেশ অনেকটাই অপরিচিত চা পানীয়দের মহলে। ফলে অপরাজিতা ফুলের পাপড়িতে তৈরি এই চা কে চা বলতে নারাজ অনেকেই। তবে অপরাজিতা চাও অন্যান্য ভেষজ চায়ের মতোই এক ধরনের হারবাল বা ভেষজ চা।
লতানো গাছের অপরাজিতা হলো ফ্যাবেসি (Fabaceae) প্রজাতির ফুল। নীলকণ্ঠ নামেও পরিচিত সুন্দর এই ফুলটি। অপরাজিতা ফুলে তৈরি চায়ের প্রচলন কিন্তু ইদানিংকালের নয়। বেশ কয়েক বছর আগে অনেকেই ঘরোয়াভাবে এই চা তৈরি করেছেন ইউটিউবের ভিডিও দেখে। বানিজ্যিকভাবে বিক্রি শুরু হওয়ার পর থেকেই মূলত প্রসার পায় অপরাজিতা চা।
অপরাজিতা চায়ের উপকারিতার খোঁজ করতে কথা হয় আজগর আলী হাসপাতালের সিনিয়র ডায়েটেশিয়ান শায়লা সাবরিনের সাথে। তিনি জানালেন, গ্রিন টিয়ের মতো ব্লু টি বা অপরাজিতার চা আমাদের মাঝে এখনও অতো বেশি প্রচলিত নয়। তবে ভেষজ উপাদান হওয়ায় এই চায়েরও বেশ কিছু স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে।
প্রথম উপকারিতার বিষয়ে শায়লা জানান, অপরাজিতা ফুলের চা শরীরের মেটাবলিজমের হার বাড়ায়। যা দ্রুত ক্যালোরি পুড়িয়ে বাড়তি ওজনকে নিয়ন্ত্রণে আনতে কাজ করে।
পাশাপাশি ভেষজ এই চায়ে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। এই অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট মূলত আমাদের শরীরে ডিটক্সিফিকেশন বা ক্ষতিকর প্রভাবকে দূর করতে সাহায্য করে।
এছাড়া অপরাজিতা ফুলে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণ ফ্ল্যাভিনয়েড, যা ত্বকের সুস্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী ভূমিকা রাখে।
তবে উপকারিতার সাথে তিনি আরও যোগ করেন, অপরাজিতার চা নিয়ে এখনও পর্যন্ত সুনির্দিষ্ট কোন গবেষণা বা পরীক্ষা হয়নি। তাই এই স্বাস্থ্য উপকারিতাগুলো যে পরীক্ষিত, সেটা বলা যাচ্ছে না।
অপরাজিতা ফুলের চা নিয়ে শুধু ঢালাওভাবে উপকারিতার কথা বললেই হবে না, এই চা পানে কোন স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা আছে কি না, সেটা সম্পর্কেও খোঁজ করতে হবে। এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে ডায়েটেশিয়ান শায়লা জানালেন, ভেষজ সকল উপাদানেরই স্বাস্থ্য উপকারিতা আছে, তবে কোন কোন ক্ষেত্রে সেটা ক্ষতিকরও হয়ে উঠতে পারে। যদি সঠিক ও নিয়ন্ত্রিত প্রস্তুত প্রণালির মাধ্যমে ভেষজ উপাদান গ্রহণ করা না হয়, সেক্ষেত্রে ঝুঁকি থেকে যায়।
বর্তমানে অপরাজিতার ফুল রোদে শুকিয়ে ও এরপর পানিতে ফুটিয়ে চা তৈরি করা হচ্ছে। রোদের যদি ঠিকমতো শুকানো না হয় তবে এতে শরীরের জন্য ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া সহজেই জন্মাবে, যা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর প্রভাব তৈরি করতে পারে।
সেক্ষেত্রে তিনি পরামর্শ দেন সঠিক প্রক্রিয়ায় প্রক্রিয়াজাত ও প্যাকেটজাত অপরাজিতা ফুলের চা বাজারে পাওয়া গেলে সেটা গ্রহণ করলেই সবচেয়ে বেশি উপকারিতা পাওয়া সম্ভব হবে।
আরও পড়ুন: ধমনির সুস্থতায় উপকারী ৯ খাবার
আরও পড়ুন: হৃদরোগের ঝুঁকি কমে দারুচিনি গ্রহণে